Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সোয়াইন ফ্লু নির্ণয়ে যন্ত্র ছয় মেডিক্যালে

স্বাস্থ্য ভবনের খবর, রাজ্যের ছ’টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল— এন আর এস, সাগর দত্ত, মেদিনীপুর, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তরবঙ্গে বসেছে এই যন্ত্র।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

জয়তী রাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৪৬
Share: Save:

তথ্য বলছে, গত আট বছরের মধ্যে চলতি বছরেই পশ্চিমবঙ্গে সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আক্রান্তদের অধিকাংশই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। এই রোগের লক্ষণগুলি হল জ্বর, ঠান্ডা লাগা, গা-হাত-পা ব্যথা, সর্দি-কাশি এবং শ্বাসকষ্ট, যা সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই। ফলে কেউ সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্ত কি না, তা খালি চোখে দেখে বোঝা অসুবিধাজনক। অথচ প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ শনাক্ত করা গেলে মৃত্যু ঠেকানো যেতে পারে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এত দিন রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে আসা রোগীদের এই অসুখ নির্ণয়ের একমাত্র জায়গা ছিল স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন। এ বার রাজ্যের ছ’টি মেডিক্যাল কলেজে বসল সোয়াইন ফ্লু-সহ আরও একাধিক রোগ পরীক্ষা করার যন্ত্র। স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, এর ফলে কে, কোন রোগে আক্রান্ত তা যেমন সহজে বোঝা যাবে, তেমনই ঠেকানো যাবে মৃত্যু।

স্বাস্থ্য ভবনের খবর, রাজ্যের ছ’টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল— এন আর এস, সাগর দত্ত, মেদিনীপুর, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তরবঙ্গে বসেছে এই যন্ত্র। যার সাহায্যে বিনামূল্যে সোয়াইন ফ্লু-র পাশাপাশি ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া, এইচআইভি, টিউবারকিউলোসিস, ম্যালেরিয়া, সালমোনেলা, হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাল লোড প্রভৃতি রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা করা যাবে। গবেষণাতেও সহায়ক হবে এই নতুন যন্ত্র।

এত দিন রাজ্যে এই ধরনের রোগ নির্ণয়ের জায়গা বলতে ছিল স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজ়িজ়েস (নাইসেড)। তবে নাইসেডে শুধু বেসরকারি হাসপাতালগুলি থেকেই নমুনা আসত বলে জানাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। সেখানে প্রতিটি পরীক্ষার ফল জানতে গড়ে দু’-আড়াই ঘণ্টা লাগে। অন্য দিকে, স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজের নমুনা আসার ফলে অসম্ভব চাপ পড়ছিল। তালিকা দীর্ঘ হচ্ছিল রোগীর প্রতীক্ষার। অনেক ক্ষেত্রে তা প্রাণ সংশয়ের কারণও হয়ে দাঁড়াচ্ছিল।

সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে এই নতুন যন্ত্র বসানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে নাইসেডের অধিকর্তা, চিকিৎসক শান্তা দত্ত বলেন, ‘‘ট্রপিক্যালের উপরে অস্বাভাবিক চাপ পড়ছিল। রোগ নির্ণয়েও দেরি হচ্ছিল। নতুন যন্ত্র বসানোয় তা অনেক দ্রুত হবে। এই ধরনের অসুখের পরীক্ষার ফল দ্রুত জানা চিকিৎসা শুরুর ক্ষেত্রে জরুরি।’’

নতুন এই যন্ত্রে এক ঘণ্টায় জানা যাচ্ছে পরীক্ষার ফল। নির্মাতা সংস্থার তরফে গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই যন্ত্রে চার ধরনের অসুখের নমুনা একসঙ্গে পরীক্ষা করা যাবে।’’ তাঁর দাবি, নাইসেড এবং ট্রপিক্যাল মেডিসিনের যে ঘরে পুরনো যন্ত্রটি রাখা আছে, সেই ব্যবস্থা তৈরি করতেই খরচ পড়েছিল প্রায় দু’কোটি টাকা। কারণ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করার পাশাপাশি ওই ঘরকে ‘বিএসএল-৩’ নকশায় তৈরি করতে হয়েছিল। কিন্তু নতুন যন্ত্রটি সাধারণ তাপমাত্রাতেই রাখা যাবে। জিনের ভিতরে ভাইরাস আছে কি না, তা-ও বলে দেবে সেটি।

স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কাজ শুরু করেছে নতুন যন্ত্র। বাকিগুলিতেও শীঘ্র শুরু হবে। এই যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষার ক্ষেত্রে ছ’টি মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধবে রাজ্যের অন্য মেডিক্যাল কলেজগুলি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE