গাড়িচালক হিসেবে তাঁর চাকরির চুক্তি ছিল এক বছরের। কিন্তু তার পরেও অস্থায়ী কর্মী পরিচয়ে ছ’বছর বেতন তুলে গিয়েছেন তিনি। এমনই অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বিধাননগর পুর নিগম। জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ঝরি রাম সিপিএমের এক প্রাক্তন বিধায়কের গাড়িচালক ছিলেন।
সূত্রের খবর, ২০০৯-এ ঝরি রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ পদ্মাবতী মণ্ডলের গাড়িচালক হিসেবে চাকরি পান এক বছরের চুক্তিতে। কিন্তু নিগমের আধিকারিকেরা জানান, মেয়াদ শেষের পরেও ওই ব্যক্তি পুরসভায় বহাল ছিলেন। ২০১০ থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রতি মাসে বেতনও তুলেছেন। যদিও ঝরির দাবি, ২০১৪ সালে বোর্ড ভাঙার পরে তিনি অস্থায়ী কর্মী হিসেবে পুরসভায় নিযুক্ত হন। দু’বছর তিনি কার্যত অফিসে এসে বসে থাকতেন। আর প্রতি মাসে
বেতন তুলতেন। তবে বিধাননগর পুর নিগমের আধিকারকদের দাবি, অস্থায়ী কর্মীর কোনও কাগজ ওই ব্যক্তি দেখাতে পারেননি।
বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তি রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার এক চেয়ারম্যান পারিষদের গাড়ি চালাতেন। মাত্র এক বছরের চুক্তি ছাড়া তিনি কোনও কাগজ দেখাতে পারেননি। তাঁকে বেতন ফেরত দিতে বলা হয়েছে।’’
ঝরি জানান, তিনি এক সময়ে রাজারহাটের সিপিএম বিধায়ক তথা বর্ষীয়ান নেতা রবীন মণ্ডলের গাড়ি চালাতেন। রবীনবাবু তখন রাজারহাটের ‘নেবারহুড ডেভেলপমেন্ট কমিটি’-র চেয়ারম্যান। ২০০৯ সালে রাজারহাট-গোপালপুরের চেয়ারম্যান পারিষদ তথা রবীনবাবুর স্ত্রী পদ্মাবতী মণ্ডলের গাড়িচালক হিসেবে চাকরি পান ঝরি।
সে সময়ে রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা ছিল সিপিএমের দখলে। তৎকালীন পুর-চেয়ারম্যান তাপস চট্টোপাধ্যায় (যিনি এখন বিধাননগর পুর নিগমে তৃণমূলের ডেপুটি মেয়র) ঝরিকে চেনেন না বলেই দাবি করেছেন। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘২০১৪ সালে বোর্ড ভেঙে যাওয়ার পরে প্রশাসক বসল। তখন তো আমার বর্তমান দলের দুই বিধায়ক সেই বোর্ডের সদস্য ছিলেন। তা সত্ত্বেও তখন কেন কেউ বিষয়টি দেখেননি?’’
প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তথা বিধানসভার প্রাক্তন চিফ হুইপ রবীনবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘নেবারহুড ডেভেলপমেন্ট কমিটিতে থাকার সময়ে ঝরি রাম এসেছিল। তখন ওকে চিনতাম। তার পরে সে কোথায় কী ভাবে চাকরি পেয়েছে, তা জানি না।’’
ঘটনার দায় নিতে চাননি পদ্মাবতীদেবীও। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভা আমাকে এক জন গাড়িচালক দিয়েছিল। তাঁকে তারা কী ভাবে নিয়োগ করেছিল, বলতে পারব না। আর যদি চুক্তি শেষের পরে বিনা কাগজে ওই ব্যক্তি বেতন তুলে থাকেন, তবে পুরসভাই বা তাঁকে বেতন দিল কেন?’’
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে প্রশাসকের অধীনে হওয়া বোর্ডের সদস্য ছিলেন রাজারহাট-গোপালপুরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু ও নিউ টাউনের বিধায়ক তথা বর্তমানে বিধাননগর পুর নিগমের মেয়র সব্যসাচী দত্ত। পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, ‘‘একে অন্যের দিকে আঙুল তুলে লাভ নেই। সিপিএম তার আমলে রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভায় বেআইনি ভাবে প্রচুর লোক নিয়োগ করেছিল। আমরা সেই সংখ্যা কমিয়ে অর্ধেক করেছিলাম।’’ একই দাবি করেছেন সব্যসাচীবাবুও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy