সন্তানহারা: পোড়া জায়গায় গিয়ে সন্তানদের খোঁজে মা কুকুর। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ
বি টি রোডের কাছে সব্জিবাগান এলাকার একটি টালির বাড়িতে আগুন লেগে পুড়ে গেল আস্ত একটি ঘর। সোমবার ভোর ৪টে-সাড়ে ৪টে নাগাদ ওই আগুন লাগে। এই ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও ঘরে রাখা বইখাতা সব পুড়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে মারা গিয়েছে সাতটি কুকুরছানা। মাত্র তিন দিন আগে ওই বাড়ির রান্নাঘর সংলগ্ন চিলতে জায়গায় সন্তান প্রসব করেছিল পাড়ার একটি পথকুকুর।
যে বাড়িটিতে আগুন লেগেছিল, সেই বাড়ির মালিক অশোককুমার চন্দ ও তাঁর পরিবার এ দিন কোনও ক্রমে রক্ষা পেয়েছেন। কলকাতা পুরসভার দু’নম্বর ওয়ার্ডের ওই বাড়িটিতে আগুন লাগার খবর পেয়ে ভোরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিল দমকলের চারটি ইঞ্জিন। তাঁদের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। অশোকবাবুর বড় ছেলে আদিত্য ক্লাস নাইনে পড়ে। আগুনে পুড়ে গিয়েছে তার সব বইপত্র। সে বলল, ‘‘অনলাইন ক্লাস চলছে। মোবাইলটা এর মধ্যেই কোনও ভাবে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছি।’’
তবে বাঁচানো যায়নি মা কুকুরের সাতটি ছানাকে। অশোকবাবু জানাচ্ছেন, অগ্নিকাণ্ডের সময়ে রান্নাঘরের দিকে একটি অংশে আটকে পড়েছিল তারা। সেখানেই ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে ছানাগুলির মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা স্থানীয়দের।
একটি গেঞ্জির কারখানার কর্মী অশোকবাবু ও তাঁর স্ত্রী দীপালি চন্দ জানান, মাত্র তিন দিন আগে সন্তান প্রসব করেছিল মা কুকুরটি। বাড়িটির রান্নাঘরের দিকে একটি টিনের বেড়ার ফাঁক গলেই যাতায়াত করত সে। আর সেখানেই একটি কাঠের পেটির ভিতরে ছিল ছানাগুলি। এ দিন সকালে দমকলকর্মীরা যখন আগুন নেভানোর কাজে ব্যস্ত, তখন বার বার তাঁদের পায়ে পায়ে ঘুরতে দেখা গিয়েছিল মা কুকুরটিকে। বার বারই সে ধ্বংসস্তূপের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু দমকলকর্মীরাই তাকে সরিয়ে দিচ্ছিলেন, যাতে কুকুরটির ক্ষতি না হয়। তখনই অশোকবাবুরা বুঝতে পারেন, কুকুরটির ছানাগুলিকে বার করা হয়নি। অশোকবাবুর কথায়, ‘‘ভোরে টের পাই, ঘরে আগুন লেগেছে। কোনও ভাবে দুই সন্তান এবং স্ত্রীকে নিয়ে বাইরে চলে আসি। তখন আর খেয়াল হয়নি যে, কুকুরছানাগুলি আটকে পড়েছে। খুব কষ্ট হচ্ছে মা কুকুরটিকে দেখে।’’
আদিত্য জানায়, পাড়ায় মা কুকুরটিকে অনেকেই খেতে দেন। কিন্তু এ দিন সকাল থেকে তাকে খেতে দেওয়া হলেও কিছুই মুখে তোলেনি সে। এ দিন বেলায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া জায়গাটি ঠান্ডা হওয়ার পরে সেখানে ঢুকে তন্নতন্ন করে খোঁজার চেষ্টা করছে সন্তানহারা কুকুরটি। কখনও লোকজনের গা শুঁকছে, কখনও সন্তানদের খুঁজে পেতে অন্য কোনও ঘরে ঢুকে পড়ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy