Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Child death

Child Death: মাছ-চোর সন্দেহে তুলে আছাড় মারার অভিযোগ, অসুস্থ শিশুর মৃত্যু হাসপাতালে, উত্তপ্ত শাসন

বাড়ির পাশের ভেড়িতে জলে চুম্বক ফেলে খেলছিল শাহাদমণি। তখন মাছ-চোর সন্দেহে পাহারাদার আব্দুল শাহাদমণিকে আছাড় মারে বলে অভিযোগ।

শাহাদমণি মণ্ডল (বাঁ দিকে), মারধরের অভিযোগে ধৃত আব্দুল আজিজ সিদ্দিকের (ডান দিকে) বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

শাহাদমণি মণ্ডল (বাঁ দিকে), মারধরের অভিযোগে ধৃত আব্দুল আজিজ সিদ্দিকের (ডান দিকে) বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২১ ০৬:০৯
Share: Save:

চোর সন্দেহে বেধড়ক পেটানো হয়েছিল সাত বছরের একটি শিশুকে। যার জেরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। শুক্রবার দুপুরে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে শাহাদমণি মণ্ডল (৭) নামে ওই শিশুর। এই ঘটনায় এ দিন বিকেলে উত্তেজনা ছড়ায় শাসনে, যেখানে ওই শিশুটির বাড়ি। বারাসত পুলিশ জেলার সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় জানান, শিশুটিকে মারধরের অভিযোগ পেয়েই আব্দুল আজিজ সিদ্দিক নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করে তদন্তও হচ্ছিল। এ বার খুনের ধারা যুক্ত করা হবে। আজ, শনিবার আর জি করে শিশুটির দেহের ময়না-তদন্ত হওয়ার কথা।

মৃতের পরিবার জানায়, গত ৪ নভেম্বর বাড়ির পাশের ভেড়িতে বন্ধুদের সঙ্গে জলে চুম্বক ফেলে খেলছিল শাহাদমণি। তখনই মাছ চোর সন্দেহে পাহারাদার আব্দুল শাহাদমণিকে আছাড় মারে বলে অভিযোগ। যার জেরে শিশুটি জ্ঞান হারায়। তখন তাকে বস্তাবন্দি করে রাখা হয় বলেও অভিযোগ। জ্ঞান ফেরার পরে শাহাদমণির হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর দিনকয়েকের মধ্যেই শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে।

শিশুটির বাবা পিয়ার আলি বলেন, ‘‘ছেলে জানিয়েছিল, ওকে তুলে আছাড় মারে লোকটি। ও অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে ওর হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে বলা হয়েছিল, কাউকে যেন কিছু না বলে। কিন্তু দিনকয়েকের মধ্যেই ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে।’’ পুলিশ জানায়, শাসনের উত্তর ফলতি গ্রামের উত্তরপাড়ায় শিশুটির বাড়ি। পাশেই রয়েছে ১১০ বিঘার একটি মাছের ভেড়ি। সেখানেই খেলতে গিয়েছিল শাহাদমণি। খেলার ফাঁকে তারা ভেড়িতে নামে। অভিযোগ, তখনই পাহারাদার আব্দুল মাছ চোর সন্দেহে বাচ্চাদের তাড়া করে। বন্ধুরা পালালেও শাহাদমণি পালাতে পারেনি। তাকে ধরে একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে আব্দুল বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ।

মৃতের পিসি আর্জিনা বিবি বললেন, ‘‘একটি শিশুকে কেউ ওই ভাবে আছাড় মারে! প্রথমে আমার ভাইপো কিছু বলতে চায়নি। ভেবেছিল, বাবা বকবে। পরে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে সব কথা খুলে বলে। ওর বাবা-মা ভেড়ির মালিকের কাছে গিয়েছিল। কিন্তু পাহারাদারই যে মেরেছে, তার প্রমাণ চান তিনি।’’

শিশুটির পরিবার জানাচ্ছে, অসুস্থ হয়ে পড়ার পরে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল না। ১৩ নভেম্বর সে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। তখন তাকে বারাসত মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই হাসপাতাল আর জি করে নিয়ে যেতে বলে। তার সারা শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল। শিশুটির বাবা এ দিন বলেন, ‘‘আর জি করও জানিয়েছে, ওর সারা দেহে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল। তা থেকেই শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে।’’

পুলিশ জানিয়েছে, গত সোমবার আব্দুলকে গ্রেফতার করা হয়। সে অতীতেও বাচ্চাদের মারধর করেছে বলে জানা গিয়েছে। ওই ভেড়ির মালিক, তৃণমূল পরিচালিত ফলতি বেলিয়াঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য সিদ্দিক আলির পাল্টা বক্তব্য, ‘‘পুলিশ ঠিকমতো তদন্ত করুক। পাহারাদারই যে শিশুটিকে মেরেছে, তা কি কেউ দেখেছেন? আমি তো শুনেছি, ছেলেটি গাছ থেকে পড়ে গিয়েছিল। ওর বাবা-মা চিকিৎসা না করিয়েই ওকে বাড়িতে ফেলে রাখেন। আমিই তো হাসপাতালে পাঠিয়েছি। নিজেও হাসপাতালে গিয়েছি।’’

এ দিন শিশুটির মৃত্যুর খবরে গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়দের প্রশ্ন, শিশুটি গাছ থেকে পড়ে গেলে পাহারাদারের কথা বলতে যাবে কেন? স্থানীয় এক বাসিন্দার বক্তব্য, ‘‘শিশুটির পরিবার নিম্নবিত্ত। বাবা সামান্য কাজ করেন। তাঁর সাহস নেই অযথা গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যের ভেড়ির পাহারাদারকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর।’’

চলতি মাসেই এক্সাইড মোড়ে এক সিভিক ভলান্টিয়ার চোর সন্দেহে এক যুবকের বুকে পা তুলে দিয়েছিলেন। গত সেপ্টেম্বরে মানিকতলায় চোর সন্দেহে প্রহৃত এক যুবকের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয় অটো থেকে। এ বার শাসনের এই ঘটনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child death Lynching
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE