এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পরে শহরের কমিউনিটি হলগুলির ভাড়া বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পুরসভা। ফাইল ছবি।
করোনা সংক্রমণের সময়ে কোনও কমিউনিটি হল থেকেই কলকাতা পুরসভা ভাড়া পায়নি। কারণ, কোভিড-বিধি মেনে সমস্ত ধরনের জমায়েত, অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছিল। অথচ কমিউনিটি হলগুলির রক্ষণাবেক্ষণ, সেখানকার নিরাপত্তারক্ষী, সাফাইকর্মী-সহ চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের বেতন এবং অন্য নানা আনুষঙ্গিক খাতে পুরসভার কোষাগার থেকে ব্যয় হয়েছে। যে কারণে পুর কোষাগারে এই খাতে টাকা না এলেও খরচ হয়েছে বিস্তর।
পুরসভা সূত্রের খবর, ওই খরচের পরিমাণ প্রায় দু’কোটি টাকা! আয় ও ব্যয়ের সেই ফারাক ঘোচাতেই এ বার সচেষ্ট হয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পরে শহরের কমিউনিটি হলগুলির ভাড়া বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন ভাড়া আগামী পয়লা এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। পাশাপাশি ঠিক হয়েছে, এখন থেকে প্রতি দু’বছর অন্তর ভাড়ার বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজন অনুযায়ী তা বাড়ানো হবে।
পুরসভা সূত্রের খবর, আলোচনাধীন ৭২টি কমিউনিটি হলের মধ্যে ন’টির বর্তমান ভাড়া ১৫ হাজার টাকা করে। ওই হলগুলি কোন এলাকায় অবস্থিত এবং সেগুলির মাপ কত, তার ভিত্তিতে ওই ভাড়া বাড়িয়ে ১৮-২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। আরও ন’টি কমিউনিটি হলের ভাড়া ১০ হাজার টাকা করে। তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২-১৫ হাজার টাকা। একই ভাবে ৪০ হাজার টাকার কমিউনিটি হলের প্রস্তাবিত ভাড়া হয়েছে ৫০ হাজার, ১২ হাজার ও ২৮ হাজার টাকার হলের ভাড়া বাড়িয়ে করা হয়েছে যথাক্রমে ১৫ হাজার ও ৩৫ হাজার। এ ভাবে বাকি কমিউনিটি হলগুলির বর্তমান ভাড়ার তালিকাতেও পরিবর্তন করা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, অনুষ্ঠানের অন্তত ছ’মাস আগে অগ্রিম দিয়ে হল বুক করতে হবে। একমাত্র প্রাকৃতিক বিপর্যয়, মহামারি বা অন্য কোনও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ছাড়া বুকিং বাতিল করতে হলে মোট নির্ধারিত ভাড়ার ২৫ শতাংশ কেটে নেওয়া হবে। যাঁরা হল ভাড়া করছেন, তাঁদের বুকিংপিছু ১০ হাজার টাকা অগ্রিম দিতে হবে বলে পুরসভা সূত্রের খবর।
প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণের সময়ে ক্ষতি পোষাতে রাজস্ব ভাড়ার বিষয়টি বিশ্লেষণের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ। তাতে একাধিক মেয়র পারিষদ, পুরসভার সব বরোর চেয়ারম্যানেরা ছিলেন। সংশ্লিষ্ট কমিটির চেয়ারম্যান তথা মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার এ বিষয়ে জানাচ্ছেন, কমিউনিটি হলগুলি চালানোর খরচ যাতে উঠে আসে, সেই কারণেই ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট কমিউনিটি হলগুলি থেকে গত সাড়ে তিন বছরে আয় হয়েছে ৬.৩২ কোটি টাকা। সেখানে ব্যয়ের পরিমাণ ৮.৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ কোটি টাকা। বিশ্লেষণে এ-ও উঠে এসেছে, ৭২টি কমিউনিটি হলের মধ্যে ১৮টি কমিউনিটি হল বছরে গড়ে মাত্র ১০-১২ দিন ভাড়া নেওয়া হয়েছে। অথচ, সেখানে বছরভর কর্মী নিয়োগের জন্য তাঁদের বেতন দিতে হয়েছে। তার জন্য ঠিক হয়েছে, ওই কমিউনিটি হলগুলিতে আর সারা বছর লোক রাখা হবে না। শুধুমাত্র অনুষ্ঠানের দিন প্রয়োজনীয় কর্মী নিয়োগ করা হবে।
কমিউনিটি হল সংক্রান্ত কমিটির চেয়ারম্যানের বক্তব্য, ‘‘খরচ কমিয়ে রাজস্ব বাড়ানোর জন্যই এই পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’ পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এই ১৮টি কমিউনিটি হলের মধ্যে দু’টি কমিউনিটি হলে পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। কিন্তু বাকি ১৬টির ক্ষেত্রে এখনও তেমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy