পূর্ব পুটিয়ারিতে এই বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়েছিল ফেব্রুয়ারি মাসে। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ।
পরিত্যক্ত একটি বাড়ি ভেঙে পড়ায় গুরুতর জখম হওয়া বৃদ্ধের মৃত্যু হল। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পুটিয়ারির দক্ষিণপাড়ায় একটি পরিত্যক্ত দোতলা বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ায় সেটির নীচে চাপা পড়েছিলেন বাড়ির মালিক সুজিত বিশ্বাস (৭০) ও তাঁর কন্যা তুলতুলি বিশ্বাস। দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারের পরে সুজিত ও তুলতুলিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। রবিবার রাতে এসএসকেএম হাসপাতালে বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।
বেআইনি নির্মাণকে কেন্দ্র করে দু’টি দুর্ঘটনা ঘটেছে গত মাসে। তাই বৃদ্ধের মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই পূর্ব পুটিয়ারির ওই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। যদিও পরে স্থানীয় বাসিন্দারা জানতে পারেন, বাড়িটি ব্যক্তিগত মালিকানার। তবে, এই ঘটনার সূত্রে বিপজ্জনক বাড়িতে বসবাস করার প্রবণতার বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে। ওই বাড়িটিও বহু বছর ধরে বিপজ্জনক অবস্থায় পড়ে ছিল। তা সত্ত্বেও সেই বাড়িতে মালিকের পাশাপাশি থাকতেন দু’ঘর ভাড়াটেও। দুর্ঘটনার পরে বাড়িটির বিপজ্জনক অংশ ভেঙে দিয়েছে কলকাতা পুরসভা। উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ভাড়াটেদেরও। এমনটাই জানিয়েছেন সুজিতের প্রতিবেশীরা।
বিপজ্জনক ওই বাড়িটির সামনে গিয়ে সোমবার দেখা গেল, বাড়ির যে অংশ এখনও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে মাথা তুলে রয়েছে, সেটির দশা অত্যন্ত করুণ। বাইরে থেকে দেখা গেল, গোটা বাড়ির দেওয়ালে ইট বেরিয়ে রয়েছে। বেহাল দশা পলেস্তারার। এমনকি, বাড়িটির স্তম্ভগুলিও কোথাও কোথাও ভেঙে গিয়েছে। তার মধ্যেই বসবাস করতেন সুজিত, তাঁর শারীরিক ভাবে অসমর্থ স্ত্রী বাসনা ও পালিতা কন্যা তুলতুলি। পরিবারের রোজগার বলতে ছিল, বাড়ি ভাড়ার কিছু টাকা ও একটি অটো থেকে আয়। দুর্ঘটনার সময়ে বাড়ির সিঁড়ির কাছে সুজিত বাসন ধুচ্ছিলেন। সেই সময়ে হুড়মুড়িয়ে ওই অংশটি ভেঙে পড়ে। ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়েন সুজিত। পায়ে ভাল রকম আঘাত লাগে তাঁর কন্যার। বৃদ্ধের প্রতিবেশী প্রদীপ ঘোষ বলেন, ‘‘গোটা বাড়ি তখন বিদ্যুদয়িত হয়ে যায়। সিইএসসি-কে খবর দিতে তারা এসে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করে। তার পরে সুজিতবাবুকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওঁর মেয়ের পায়ে প্লেট বসবে। ওঁর স্ত্রীকেও ওই ঘটনার পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’’ পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার পরে জখম সকলকেই এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি সুজিতকে এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে স্থানান্তরিত করা হয়। রবিবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ মনে করছে, বাড়ির অংশ ভেঙে তার নীচে চাপা পড়ার কারণেই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তবে, তাঁর দেহের সুরতহাল ও ময়না তদন্তের পরেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে মনে করছে পুলিশ।
প্রতিবেশীরা জানান, বহু বছর ধরেই বাড়িটি ওই রকম ভগ্নদশায় পড়ে ছিল। বৃদ্ধের সামর্থ্য ছিল না সেটির সংস্কার করার। ওই অবস্থায় বাড়িটি তিনি ভাড়াও দিয়ে রেখেছিলেন। গোটা বাড়ি ধসে পড়লে আরও বড় বিপদ হতে পারত বলেই মনে করছেন প্রতিবেশীরা। পরিবারে তেমন কেউ না থাকায় তাঁরাই বৃদ্ধের দেহের সৎকারের ব্যবস্থা করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy