Advertisement
০৫ মে ২০২৪

আধার সংযোগের নামে অনলাইন জালিয়াতি

পুলিশ জানায়, সোমবার কলকাতা পুরসভার চিফ ইঞ্জিনিয়ার উৎপল কুমার চৌধুরী সার্ভে পার্ক থানায় অভিযোগ করে জানিয়েছেন, গত শনিবার তিনি একটি অনলাইন ওয়ালেটের সঙ্গে নিজের আধার কার্ড যুক্ত করার চেষ্টা করছিলেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৫৪
Share: Save:

অনলাইন ওয়ালেটের সঙ্গে আধার কার্ড যুক্ত করাতে গিয়ে প্রতারিত হলেন কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও বুধবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি।

পুলিশ জানায়, সোমবার কলকাতা পুরসভার চিফ ইঞ্জিনিয়ার উৎপল কুমার চৌধুরী সার্ভে পার্ক থানায় অভিযোগ করে জানিয়েছেন, গত শনিবার তিনি একটি অনলাইন ওয়ালেটের সঙ্গে নিজের আধার কার্ড যুক্ত করার চেষ্টা করছিলেন। এর জন্য তিনি একটি ওয়েবসাইটের দ্বারস্থ হন। সেখান থেকে পাওয়া একটি মোবাইল নম্বরে এর জন্য ফোন করেন তিনি। তাঁর দাবি, ওই নম্বরটি প্রথমে ব্যস্ত ছিল। এর কিছুক্ষণ পরেই তাঁর মোবাইলে একটি ফোন আসে। বিজয় কুমার নামে এক ব্যক্তি হিন্দি-বাংলা মেশানো কথায় তাঁকে জানান, তিনি আধার কার্ডের সঙ্গে ওই অনলাইন ওয়ালেটে সংযোগের কাজ করেন। ওই ওয়েবসাইটে গেলে তার প্রমাণ পাবেন বলে সে দাবি করে ফোনে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই যুবকের কথায় আশ্বস্ত হন অভিযোগকারী। কোন ডেবিট কার্ড দিয়ে ওই অনলাইন ওয়ালেটে পেমেন্ট করা হয়েছিল, তা জানতে চাওয়া হয়। অভিযোগ, সেই সূত্র ধরেই জালিয়াতেরা তাঁর ডেবিট কার্ডের নম্বর এবং পিন কোড জেনে নেয়।

উৎপলবাবু বলেন, “যে ভাবে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তাতে আমার কোনও সন্দেহ হয়নি। আমি সব তথ্য দিয়ে দিয়েছিলাম।” তিনি অভিযোগ করেন, এর কিছুক্ষণ পর থেকেই আমার মোবাইলে টাকা তোলার খবর দিয়ে এসএমএস আসতে শুরু করে। তা থেকে তিনি জানতে পারেন, অনলাইন শপিংয়ের জন্য টাকা কাটা হচ্ছে। দু’দফায় প্রায় ৬০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয় তাঁর আমানত থেকে। লালবাজার জানিয়েছে, এর পরেই তিনি প্রথমে স্থানীয় সার্ভে পার্ক থানার আধিকারিককে সব জানান ফোনে। পরে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে ডেবিট কার্ড বন্ধ করে দেওয়ার পরমার্শ দেওয়া হয়।

পুলিশ সূত্রের খবর, ব্যাঙ্কে গিয়ে অভিযোগকারী জানতে পারেন তাঁর ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে গুরুগ্রাম থেকে অনলাইনে কেনাকাটা করা হয়েছে। অথচ ওই সময়ে তিনি কলকাতায় ছিলেন। আধার সংযোগের নামে তিনি যে প্রতারকদের পাল্লায় পরেছেন, এটা বুঝতে পেরেই পুরসভার ওই আধিকারিক সোমবার সার্ভে পার্ক থানায় লিখিত ভাবে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

লালবাজারের গোয়েন্দাদের একাংশের বক্তব্য, এর আগে ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে ফোন করে ডেবিট কার্ডের তথ্য হাতিয়ে টাকা তুলে নেওয়ার বহু ঘটনা ঘটেছে। যার ভিত্তিতে লালবাজারের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার হাতে একাধিক বার এমন চক্র ধরা পড়েছে। কিন্তু আধার সংযোগের নামে ওয়েবসাইটে ফোন নম্বর দিয়ে প্রতারণার ঘটনা এর আগে সচরাচর ঘটেনি বলেই জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। এর মাস দেড়েক আগে একটি অনলাইন সংস্থায় কেনাকাটার পরে ওই কার্ড জালিয়াতি চক্রের পাল্লায় পড়েছিলেন যাদবপুরের এক মহিলা। এখনও সেই ঘটনার কিনারা করতে পারেনি পুলিশ।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, যে নম্বরটি থেকে ফোন করা হয়েছিল, সেটি থেকে আগেও একাধিক বার জালিয়াতি করা হয়েছে। তা দিয়ে অনলাইনে দামি জিনিসপত্র কিনে টাকা হাতায় দুষ্কৃতীরা। ভিন্‌ রাজ্যের ওই নম্বরটি থেকে ঘটনার পরেও ফোন এসেছিল অভিযোগকারীর কাছে। যা দেখে পুলিশের অনুমান, ঝাড়খণ্ডের জামতাড়ার গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত এই জালিয়াতেরা। যে সব ওয়ালেট ব্যবহার করে জিনিস কেনাকাটা করা হয়েছে, সেই সূত্র ধরেই দুষ্কৃতীদের শনাক্ত করার কাজ চলছে বলে জানান তদন্তকারীরা। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিভিন্ন নতুন নতুন পন্থা বার করে জালিয়াতেরা অ্যাকাউন্ট সাফ করে দিচ্ছে। গ্রাহক সজাগ এবং সচেতন না হলে ওই জালিয়াতি আটকানো সম্ভব নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE