Advertisement
E-Paper

কলকাতার বাঘের বাবা লন্ডনে!

আলিপুর চিড়িয়াখানার পাঁচটি বাঘ, একটি লেপার্ড এবং একটি সিংহকে ২০১৫ সালে দত্তক নিয়েছিলেন রহমান। চিড়িয়াখানার দত্তক কর্মসূচির (অ্যাডপশন অব জু অ্যানিম্যালস) অধীনে রহমান প্রথমে তিন বছরের জন্য দত্তক নিয়েছিলেন বাঘ-সিংহদের। পরে আরও এক বছরের মেয়াদেই সে চুক্তির নবীকরণ করেন।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:০৫
দত্তক সন্তান: আলিপুর চিড়িয়াখানার বাঘ-সিংহেরা। নিজস্ব চিত্র

দত্তক সন্তান: আলিপুর চিড়িয়াখানার বাঘ-সিংহেরা। নিজস্ব চিত্র

‘‘ওরা এখন আমার পরিবারেরই সদস্য। ভালবাসি বলেই তো দত্তক নিয়েছি।’’ লন্ডন থেকে ফোনে বললেন শেখ উসিউর রহমান। ছেলে-মেয়েদের দত্তক নেওয়ার চুক্তি গত মাসেই শেষ হয়েছে রহমানের। তাতে কী! এ তো যে সে ছেলে-মেয়ে নয়। বাঘ-সিংহের বাবা হতে পারেন ক’জন? সেই অহঙ্কারেই ভরপুর রহমান আরও বললেন, ‘‘কলকাতায় যাইনি এ বার। গেলেই আবার ওদের দায়িত্ব নেব।’’

আলিপুর চিড়িয়াখানার পাঁচটি বাঘ, একটি লেপার্ড এবং একটি সিংহকে ২০১৫ সালে দত্তক নিয়েছিলেন রহমান। চিড়িয়াখানার দত্তক কর্মসূচির (অ্যাডপশন অব জু অ্যানিম্যালস) অধীনে রহমান প্রথমে তিন বছরের জন্য দত্তক নিয়েছিলেন বাঘ-সিংহদের। পরে আরও এক বছরের মেয়াদেই সে চুক্তির নবীকরণ করেন। চুক্তি শেষ হয়েছে গত মাসে। কিন্তু ওদের ওপরে ‘মায়া পড়ে যাওয়া’ রহমান এখন চান সন্তানরা তাঁরই থাকুক। এমনও তো হতে পারে যে যাকে দত্তক নিতে চাইছেন, তাকে পেলেন না! তখন? একটু ভাবলেন বাঘ-সিংহের প্রবাসী-বাবা। বললেন, ‘‘যাকে চাইছি তাকে না পেলে খারাপ তো লাগবেই। কিন্তু অন্যরা তো রয়েইছে। তাদের নেব। ওদেরও পরিবারের সদস্যের মতোই ভালবাসব।’’

শুধু বাঘ-সিংহ কেন, এই কর্মসূচির অধীনে চিড়িয়াখানার পশুপাখিদের বাবা-মায়েরা ছড়িয়ে রয়েছেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায়। নিয়ম অনুযায়ী, ব্যক্তি হোক বা প্রতিষ্ঠান, চিড়িয়াখানার সমস্ত পশুপাখিকেই দত্তক নেওয়া যেতে পারে। চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, ২০১৮-’১৯ সালে পশুপাখিদের দত্তক নিয়েছেন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে মোট ২৯ জন। চিড়িয়াখানার আয় বাড়াতে এবং বন্যপ্রাণী সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ২০১৩-’১৪ সাল থেকে এই দত্তক কর্মসূচি শুরু হয়। দেশের একাধিক চিড়িয়াখানায় এই ব্যবস্থা রয়েছে। আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত বলেন, ‘‘কখনও কখনও ভাল সাড়া পাওয়া যায়। কখনও উৎসাহ থিতিয়ে যায়। এ ভাবেই চলছে।’’

বাঘের অভিভাবকের পরিচয় লেখা বোর্ডে।

তবে সকলেই যে বাঘ-সিংহ দত্তক নিতে উৎসাহী হন এমন‌ নয়। অধিকর্তার কথায়, ‘‘কেউ বাঁদর নেওয়ার জন্য আগ্রহ দেখান। আমরা যদি বলি, অন্য কিছু দত্তক নিন। তাঁরা নাছোড়। বাঁদরই নেবেন!’’ যেমন ম্যাকাও দত্তক নিয়েছেন অনিল পাণ্ডে নামে এক ব্যবসায়ী। অনিলবাবু বলছেন, ‘‘বরাবরই পাখি বেশি পছন্দ করি। নিয়মিত ওদের দেখতে যাই।’’

একেক প্রাণীকে দত্তক নেওয়ার খরচ একেক রকম। যেমন বাঘ-সিংহ ও হাতি দত্তক নেওয়ার খরচ সব থেকে বেশি, বছরে দু’লক্ষ টাকা। লেপার্ড, স্নো লেপার্ড, জাগুয়ার, জিরাফ, জলহস্তি, গন্ডারের জন্য বছরে দিতে হয় এক লক্ষ টাকা। হায়না, ক্যাঙ্গারু, জেব্রাদের জন্য ৭৫ হাজার টাকা। কুমির, ঘড়িয়াল, শিম্পাঞ্জি, অস্ট্রিচের মতো প্রাণীদের ৫০ হাজার টাকা। লেঙ্গুর, বাঁদরকে দত্তক নিতে দিতে হয় ৩০ হাজার এবং সব ধরনের পাখি, সাপ, সজারু, কাঠবেড়ালি-সহ অন্য প্রাণীর জন্য খরচ হয় ২৫ হাজার টাকা।

দত্তক নিতে আগ্রহীকে প্রথমে আলিপুর চিড়িয়াখানায় আবেদন করতে হয়। তা গ্রাহ্য হলে তিনি যে প্রাণীটি দত্তক নিতে চাইছেন, সেই অঙ্কের একটি অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেক জমা দিতে হয়। চেকটি ভাঙানোর পরেই তাঁর সঙ্গে একটি চুক্তিপত্র করেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে একটি শংসাপত্র দেওয়া হয় এবং চিড়িয়াখানায় প্রবেশের কার্ডও দেওয়া হয়। ওই কার্ড দেখিয়ে তিনি-সহ মোট চার জন ‘দত্তক সন্তানের’ কাছে যেতে পারেন। যে প্রাণীটিকে তিনি দত্তক নিলেন, তার খাঁচার সামনে অভিভাবকের নাম-ঠিকানা এবং কত বছরের জন্য তিনি দত্তক নিয়েছেন, তা উল্লেখ করে একটি বোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়।

যেমন তিনটি ‘মাউস ডিয়ার’ দত্তক নিয়েছেন আটাত্তর বছরের নিভা চৌধুরী। তিনি বলছেন, ‘‘ভালবাসা থেকে দত্তক নিয়েছি। চারদিকে তো বন্যপ্রাণ প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। এটুকুও যদি করতে পারি!’’

London Zoo Alipur Zoological Garden
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy