Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
আমার পাড়া

বদলের মাঝে সঙ্গী স্মৃতিই

ছেলেবেলার সেই দাপিয়ে বেড়ানো পাড়া, যার আনাচ-কানচে মিশে কত রঙের ছোঁয়া, কত সুখস্মৃতি, কত আবেগ। ভবানীপুরের পূর্ণ সিনেমা হলের পাশের রাস্তাটা আমার পাড়া। এই এলাকাটা এখন কালীঘাট রোড বলেই পরিচিত। অতীতে এই অঞ্চলের নাম ছিল চড়কডাঙা।

নিভৃতে: একটি দোকানে চলছে বই বাঁধাইয়ের কাজ। নিজস্ব চিত্র

নিভৃতে: একটি দোকানে চলছে বই বাঁধাইয়ের কাজ। নিজস্ব চিত্র

নিমাই ঘোষ
কালীঘাট রোড শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৭ ১৫:০০
Share: Save:

পাড়া শব্দটা উচ্চারণ করলেই এক মধুর অনুভূতি মনকে স্পর্শ করে। ছেলেবেলার সেই দাপিয়ে বেড়ানো পাড়া, যার আনাচ-কানচে মিশে কত রঙের ছোঁয়া, কত সুখস্মৃতি, কত আবেগ। ভবানীপুরের পূর্ণ সিনেমা হলের পাশের রাস্তাটা আমার পাড়া। এই এলাকাটা এখন কালীঘাট রোড বলেই পরিচিত। অতীতে এই অঞ্চলের নাম ছিল চড়কডাঙা।

সে সময়ে পাড়াটা ছিল অনেক ফাঁকা। বাড়ির সংখ্যাও ছিল কম। বড় বড় থাম, লম্বা বারান্দা, সঙ্গে রক দেওয়া সব বাড়ি নিয়ে এটা ছিল এক বর্ধিষ্ণু বাঙালিপাড়া। দেখতে দেখতে সেই পাড়াটাই বদলে গেল। আগে যেখানে ছিল শুধুই বাড়ি, সেখানে আজ এখন বহুতলের ভিড়ে ক’টা বাড়ি অবিশিষ্ট আছে তা গুনে বলে দেওয়া যায়। এত পরিবর্তনের জেরে পাড়াটাকে মাঝেমধ্যে বড় অচেনা লাগে‌। হঠাৎ পরিচিত কারও খবর নিতে গিয়ে যখন শুনি, নীরবে সে বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র চলে গিয়েছে, তখন মনে মনে খুব কষ্ট পাই। নতুনরা এলেও সে ভাবে আর যোগাযোগের সুযোগ হয় না এখন। তবে পুরনো প্রতিবেশী এখনও যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে রয়েছে সুসম্পর্ক। মন ভরে যায় যখন রাস্তায় বিরেয়ে হঠাৎ এগিয়ে আসে কোনও পুরনো মুখ।

আগে পাড়ার সকালটা শুরু হতো শিঙাড়া, জিলিপি দিয়ে। তেলেভাজার সেই দোকানের সামনে ভোর থেকে জমত ভিড়। অনেক পরিবর্তনের মাঝে কখন জানি উধাও হল সেই দোকানটাও। আছে নিমতলার মুড়ি-তেলেভাজার দোকানটা। এখনও সকালে পাওয়া যায় হালুয়া-কচুরি।

কাছেই হরিশ পার্কে সমবয়সিদের সঙ্গে ফুটবল, ক্রিকেট খেলতে যেতাম। সে সময়ে আমাদের স্কুল আর মিত্র ইনস্টিটিউশনের মধ্যে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হতো। হাঁটতে হাঁটতে বন্ধুদের সঙ্গে চলে যেতাম ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে। এখন সময়ের অভাবেই হোক বা অন্য কারণে, ছোটদের খেলার আগ্রহ কমে গিয়েছে।

প্রতি বছর চড়কডাঙা ক্লাবের উদ্যোগে কালীপুজো উপলক্ষে হতো জমজমাট জলসা। বেগম আখতার, বড়ে গুলাম আলি খান থেকে শুরু করে আজকের শ্রেয়া ঘোষাল। কে না এসেছেন সেই অনুষ্ঠানে! সেই সব বিখ্যাত শিল্পী অনুষ্ঠানের আগে এসে বসতেন আমাদের বাড়ির বসার ঘরে।

পাড়ার আড্ডাটা আগের তুলনায় কমেছে। একে একে রকগুলি হারিয়ে যাওয়ায় আড্ডার পরিবেশটাই উধাও হয়েছে। পাড়ায় নেই কোনও চায়ের দোকানও। তবে পাড়ার মুখে কয়েকটি দোকানের সামনে কিছু মানুষকে আড্ডা দিতে দেখা যায়।

শহরের অন্যান্য পাড়ার মতোই এখানেও বেড়েছে নাগরিক পরিষেবা। ঝলমলে আলো, পরিষ্কার রাস্তা দেখে ভাল লাগে। তবে এ পাড়ায় এক বড় সমস্যা পার্কিং। গলির মুখে অন্যের গাড়ি থাকায় সমস্যা হয় বইকী।

এ পাড়ায় ২০ নম্বর কালীঘাট রোড ঠিকানাটা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই বই বাঁধানোর দোকান থেকেই সত্যজিৎ রায় কিনতেন লাল খেরোর খাতা। তাতেই তিনি লিখতেন চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য।

অনেক বদলালেও পাড়াময় মিশে রয়েছে এক নস্ট্যালজিয়া। সেটাই বোধহয় আঁকড়ে ধরে রেখেছে আমায়। এ পাড়ার নানা রং আমায় দিয়েছে ছবি তোলার অনুপ্ররণা।

লেখক চিত্রগ্রাহক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE