Advertisement
১৯ মে ২০২৪

দুই পৃথিবীর ফাঁক ভরতে কলকাতা নিয়ে স্প্যানিশ বই

কলকাতা দেখে ঘাবড়ে যাওয়া এমিলিই এখন আচ্ছন্ন এ শহরের প্রেমে। সেই প্রেমের উদ্‌যাপন করতেই এ বার কলকাতার ইতিহাস-সংস্কৃতি নিয়ে একটি বই লিখবেন বলে ঠিক করেছেন তিনি।

শহরের পথে এমিলি পুজ ভিলারো। নিজস্ব চিত্র

শহরের পথে এমিলি পুজ ভিলারো। নিজস্ব চিত্র

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:০৩
Share: Save:

আর পাঁচ জন বিদেশি পর্যটকের সঙ্গে যেমনটা ঘটে থাকে আর কী! তেমনই, কলকাতার সঙ্গে প্রথম দেখাতে মোটেও প্রেম হয়নি সূদূর বার্সিলোনার কাছে জিরানোর বাসিন্দা এমিলি পুজ ভিলারোর। তবে সেটা দু’দশক আগের কথা। সে-কলকাতার পথেঘাটের কালিঝুলি, গরিব মানুষ, গরু, রিকশা বা হই-হট্টগোলের চিল-চিৎকারে বেশ ঘাবড়েই গিয়েছিলেন তিনি।

তবে ছবিটা এখন বদলে গিয়েছে। কলকাতা দেখে ঘাবড়ে যাওয়া এমিলিই এখন আচ্ছন্ন এ শহরের প্রেমে। সেই প্রেমের উদ্‌যাপন করতেই এ বার কলকাতার ইতিহাস-সংস্কৃতি নিয়ে একটি বই লিখবেন বলে ঠিক করেছেন তিনি। বইটি ইউরোপ-লাতিন আমেরিকার স্প্যানিশ বিশ্বকে উপহার দিতে চান জিরানো বিশ্ববিদ্যালয়ে এডুকেশনাল সাইকলজির এই অধ্যাপক।

ইংরেজি তো বটেই, জার্মান ও ফরাসিতেও কলকাতা নিয়ে সাহিত্য রচনা হয়েছে। তবে স্প্যানিশে লেখা যৎসামান্যই। বিশ্ব পর্যটকদের জন্য ‘লোনলি প্ল্যানেট’-এর স্প্যানিশ সংস্করণেও কলকাতা নিয়ে বরাদ্দ মেরেকেটে দু’টো পাতা। এই ‘তাচ্ছিল্য’ ভাল চোখে দেখছেন না এমিলি।

‘‘এটা ডাহা অবিচার। দিল্লি, রাজস্থান, বারাণসী বা খাজুরাহো নিয়ে এত লেখা। অথচ কলকাতা বেচারি কল্কে পায় না। আলাদা একটা বই লিখে স্প্যানিশে কলকাতার কথা বলতে চাই।’’— এ শহরে ঘুরতে ঘুরতেই বলছিলেন এমিলি। কুড়ি বছর ধরে বারবার কলকাতায় আসছেন তিনি। ৫১ বছরের ছিপছিপে দীর্ঘদেহী এই প্রৌঢ় চষে ফেলেছেন দক্ষিণেশ্বরের কালী মন্দির থেকে চিৎপুরের নাখোদা মসজিদ, বেলগাছিয়ার পরেশনাথ মন্দির থেকে সন্ত জনের গির্জা। ‘‘কলকাতায় একসঙ্গে এত রকমের মানুষের ভিড়, বিভিন্ন ধর্মের মেলামেশা— এ সব থেকে ইউরোপের অনেক কিছু শেখার আছে।’’ তাঁর বইয়ে কলকাতার এই বর্ণময় ছবিটাই তুলে ধরতে চান এমিলি।

তবে বাঙালি রান্নায় লঙ্কার ঝাঁঝ অবশ্য এখনও সমঝে চলেন স্পেনের অধ্যাপক। কিন্তু পেঁয়াজের খোসার মতো কলকাতা যেন পরতে পরতে ধরা দিচ্ছে তাঁর কাছে। ‘‘বছর দুয়েক আগেও রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দের কথা জানতাম না আমি!’’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বারাসত স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষাতত্ত্বের শিক্ষকদের সঙ্গে নিত্য যোগাযোগের সুবাদেই এ সব জেনে ফেলেছেন এমিলি। তাঁর আফশোস, ‘‘কলকাতা ইউরোপকে যতটা জানে, ইউরোপ ততটা জানে না কলকাতাকে।’’ তাঁর লেখা বইয়ে, দুই পৃথিবীর এই ফাঁকটুকু ভরাট করাই এমিলির লক্ষ্য।

এ শহরের ইন্দো-হিসপ্যানিক একাডেমির অধিকর্তা দিব্যজ্যোতি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে জোট বেঁধে বইয়ের কাজটা আপাতত শেষ করতে চাইছেন এমিলি। ‘‘আমার বিদেশি চোখে হয়ত কলকাতার সবটা ধরা পড়বে না। তাই পুরো কাজটা একা করতে চাই না।’’ বইমেলার সময় থেকে এ শহরেই রয়েছেন এমিলি। বেলুড় বিদ্যামন্দিরে শিক্ষণ মনস্তত্ত্ব নিয়ে বক্তৃতা বা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাতত্ত্ব বিভাগে কিছু যৌথ প্রকল্পের কাজ নিয়ে এসেছেন। তার সঙ্গেই রয়েছে প্রিয় শহরে টো টো কোম্পানির টান। দ্রুত ছকে ফেলছেন তাঁর বইয়ের কলকাতায় কী কী থাকবে! পরের বইমেলাতেই তাঁর বইটা এনে ফেলতে পারাই এখন পাখির চোখ এমিলির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE