মায়ের সঙ্গে আকাশ। — নিজস্ব চিত্র।
ক্রিকেটের ব্যাট ধরেছেন বার কয়েক। কিন্তু দৌড়ে রান নিতে পারেননি।
ছোট থেকেই ক্রিকেট-অন্ত-প্রাণ আকাশ চক্রবর্তী। কিন্তু ২২ গজে দৌড়নোর ক্ষমতা ছিল না। এই যন্ত্রণার মুক্তি খুঁজতে ডুব দিয়েছিলেন অঙ্ক বইয়ের পাতায়। শনিবার সিবিএসই-র দ্বাদশ শ্রেণির ফল প্রকাশের পরে সে যন্ত্রণারই যেন উপশম ঘটল।
অস্টিওপোরোসিসের জেরে কার্যত চলচ্ছক্তিহীন আকাশ চক্রবর্তী এ বার ৯২ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন। বছর সাতেক আগে ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটাও ঘুচে যায় তাঁর। সল্টলেকের হরিয়ানা বিদ্যামন্দিরের বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রটিকে পরীক্ষার হলে পৌঁছতেও মা-বাবা ও বন্ধুদের কাঁধে ভর
দিতে হতো। তবু দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই ছাড়েননি।
শনিবার দুপুরে ছেলের রেজাল্ট জেনে ফেরার পরে গর্বিত মায়ের তাই ফোনে গলা বুজে আসছিল। বাগুইআটির বাসিন্দা বহ্নি চক্রবর্তী বলছিলেন, ‘‘ভাল করে হাঁটতে পারত না, কথা বলতে পারত না বলে ছোটবেলায় কত স্কুল যে আমার ছেলেটাকে বাতিল করে দিয়েছিল। হ্যাঁ, ওর সামনের জীবনটাও আর পাঁচ জনের মতো সহজ নয়। আজকের
দিনটা তাই আমাদের বাড়তি
অক্সিজেন জোগাবে।’’
সিবিএসই বোর্ডের পরীক্ষায় বসে লেখালেখিও নেহাত সোজা ছিল না আকাশের পক্ষে। সিবিএসই-র নিয়মানুসারে, শারীরিক সমস্যা থাকার দরুণ চাইলে পরীক্ষায় সহায়ক পেতে পারতেন তিনি। কিন্তু তাঁর থেকে যোগ্যতায় কম এমন কাউকেই নিতে হবে। আকাশ এমন কাউকেই খুঁজে পাননি। তাই পরীক্ষার খাতায় নিজেই লিখেছেন। আকাশের কথায়, ‘‘লিখতে লিখতে হাতটা অসাড় যেতো, তখন মায়ের মুখটা মনে করতাম! একটু থেমে আবার শুরু করতাম।’’
আকাশের বাবা আশিস চক্রবর্তী পেশায় ব্যাঙ্ককর্মী। তিনি বলছিলেন, আকাশ ছোট থেকেই স্নায়ু ও হাড়ের সমস্যায় ভুগছিলেন। ‘স্পিচথেরাপি’ করে কথা বলার সমস্যাটা কাটলেও চলাফেরার খামতি ঠিক করা যায়নি। উল্টে, ২০০৯ সালের পরে দু’টো হাঁটুই অকেজো হয়ে যায়। ছেলের হার না-মানা জেদ তবু হাল ছাড়েনি। আশিসবাবুর কথায়, ‘‘হাঁটুর সমস্যায় নিয়মিত স্কুলে যাওয়াটা ওর পক্ষে সমস্যা হয়ে পড়েছিল। তবে ও ভেঙে পড়েনি।’’ আকাশের স্কুলের তরফ থেকেও সব রকমের সহযোগিতা মিলেছে বলে কৃতজ্ঞ তাঁর বাবা। আর আকাশের কাছে বড় ভরসা হয়ে উঠেছিলেন তাঁর বন্ধুরাও। সতীর্থ সৌভিক দত্তের কথা আলাদা করে বলছিল চক্রবর্তী পরিবার। আকাশের কথায়,‘‘আমার স্কুলব্যাগটা ক্লাসরুমে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে, স্কুল টিমের ক্রিকেট ম্যাচের খুঁটিনাটি আপডেট সব কিছুতে সৌভিক আমার পাশে থাকে। পরীক্ষার এই যুদ্ধে জিততেও ও আমায় দারুণ সাহায্য করেছে।’’
সিবিএসই-র শৃঙ্গজয়ের পরে হিসাবশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা চালাতে চান আকাশ। আইএএস হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তবে আর একটা ছোট্ট ইচ্ছেও আছে। এক বার ইডেনের মাঠে বসে, বিরাট কোহলির শতরানের সাক্ষী হওয়ার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy