Advertisement
০৬ মে ২০২৪

পুতুলে সাজানো কোর্টে বসবেন বিচারপতি

আলিপুর আদালত সূত্রের খবর, সনাতন আদালতের পরিবেশ আর একেবারেই রাখা হবে না এখানে।

ছোটদের জন্য এ ভাবেই সেজে উঠছে আলিপুরের বিশেষ পকসো আদালতের একাংশ। —নিজস্ব চিত্র।

ছোটদের জন্য এ ভাবেই সেজে উঠছে আলিপুরের বিশেষ পকসো আদালতের একাংশ। —নিজস্ব চিত্র।

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ০১:০১
Share: Save:

টিনটিন-কুট্টুস, মিকি মাউসের মতো কার্টুন চরিত্রে সাজবে এজলাস। আশপাশে সাজানো থাকবে পুতুল, খেলনা। বিচারকের আসনের সামনে থাকবে না লাল শালু মোড়া মোটা বই। সোফায় বসে দু’পক্ষের কথা শুনবেন বিচারপতি। এমন ভাবেই শিশুবান্ধব করে তোলা হবে আলিপুরের বিশেষ পকসো আদালত।

আলিপুর আদালত সূত্রের খবর, সনাতন আদালতের পরিবেশ আর একেবারেই রাখা হবে না এখানে। আলিপুর দায়েরা আদালতের প্রায় ৮০০ বর্গফুট ঘরটিতে এজলাসের গঠনটাই বদলে দেওয়া হবে। সম্প্রতি হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ টন্ডন ও সৌমেন সেন ওই ঘরটি পরিদর্শন করেছেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা বিচারক রবীন্দ্রনাথ সামন্ত, আলিপুর বিশেষ পকসো আদালতের বিচারক সোনিয়া মজুমদার ও আলিপুর দায়েরা আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী রাধাকান্ত মুখোপাধ্যায়। তাঁদের পরামর্শ মতোই শুরু হয়েছে শিশুবান্ধব আদালত তৈরির কাজ।

পকসো ধারায় বহু শিশুর উপরে নির্যাতনের মামলা হয়। আলিপুর আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, বিচারের জন্য তিন-চার বছরের শিশুদেরও আসতে হয় আদালতে। ওই শিশুরা আদালতের গুরুগম্ভীর পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে উঠতে পারে না। আদালতের এজলাসে এসে মানসিক চাপ বাড়ে। পকসো মামলায় নির্যাতিত শিশুদের সাক্ষ্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর কাছ থেকে পুরো ঘটনা ঠিক ভাবে জেনে লিপিবদ্ধ না করা গেলে আইনের ফাঁক দিয়ে বেকসুর খালাসও পেয়ে যেতে পারে অভিযুক্ত। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মানসিক চাপে পড়ে ঘটনার ঠিক বিবরণ দিতে অসুবিধে হয় তাদের। তা ছাড়া, বিচার প্রক্রিয়ার সময়েই অনেক ক্ষেত্রে শিশুরাও উপস্থিত থাকে। ওই সময়েও শিশুদের সাক্ষ্য প্রয়োজন হয়। এমন সময়ে একেবারে অচেনা পরিবেশে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে শিশুরা। অনেক ক্ষেত্রে গোটা ঘটনাই ভুলে যায় তারা।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বছর খানেক আগে কলকাতার বিচার ভবনে শিশুবান্ধব বিশেষ পকসো আদালতের এজলাস তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু আলিপুরের মুখ্য সরকারি আইনজীবী রাধাকান্ত মুখোপাধ্যায়ের দাবি, আলিপুরের শিশুবান্ধব এজলাস আরও ভাল করে তৈরি করা হচ্ছে। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শিশুবান্ধব কোর্টের দেওয়ালে যেমন বিভিন্ন ধরনের কার্টুন চরিত্রের ছবি আঁকা থাকবে, তেমনই আদালতে রাখা থাকবে নানা ধরনের পুতুল। একেবারে বাড়ির মতো পরিবেশ তৈরি করা হবে সেখানে। সোফায় বসে আইনজীবীদের বক্তব্য শুনবেন বিচারক। আলিপুর আদালতের এক আইনজীবী জানান, সম্প্রতি দু’টি স্কুলে তিন ও পাঁচ বছরের দুই ছাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই মামলায় গোপন জবানবন্দি দেওয়ার সময়ে অনেক কিছু মনে করতে পারছিল না দুই শিশুই। বিচারকের সামনে সাক্ষ্য দেওয়ার সময়ে কেঁদে ফেলছিল তারা। মায়ের কোলে গিয়ে মুখ গুঁজে দিচ্ছিল শিশুরা। ওই আইনজীবীর ব্যাখ্যা, আদালতে এসে পুলিশ দেখে এমনিতেই খানিকটা ভয় পেয়ে যায় শিশুরা। তার উপরে পরিবেশটাও গম্ভীর। ফলে সহজ ভাবে কথা বলতে অসুবিধে হয় অধিকাংশ শিশুরই। তবে শিশুবান্ধব আদালতে বিচারক ও আইনজীবীরা কালো কোর্ট পরবেন কি না, সে বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন রাধাকান্তবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ওই দিন দুই বিচারপতি এসেছিলেন। কালো কোর্টের বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী পর্যায়ে আলোচনা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Alipore POCSO Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE