Advertisement
১১ মে ২০২৪

ধিক্কার জানাতে পথে নামলেন আলিগড়ের প্রাক্তনীরাও

কলকাতার সইফি হল স্কুলের ইংরেজির শিক্ষিকা শামিনা খান আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। তাঁর হাতে ধরা পোস্টারে ইংরেজিতে লেখা, ‘পড়ুয়াদের উপরে নির্যাতন বন্ধ হোক’।

আন্দোলন: নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে ডাকা নাগরিক মিছিলে জনজোয়ার। বৃহস্পতিবার, ধর্মতলায়। নিজস্ব চিত্র

আন্দোলন: নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে ডাকা নাগরিক মিছিলে জনজোয়ার। বৃহস্পতিবার, ধর্মতলায়। নিজস্ব চিত্র

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:০৭
Share: Save:

ওঁরা সকলেই উত্তরপ্রদেশের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় গত কয়েক দিন ধরে দেশ জুড়ে যে আন্দোলন চলছে, তাতে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে ওঁদের। ওই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে দেশের দু’টি প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা পুলিশের হাতে যে ভাবে নিগৃহীত হয়েছেন, তাতেও তাঁরা মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। সেই কারণেই নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার মৌলালির রামলীলা ময়দান থেকে নিউ মার্কেট পর্যন্ত মিছিলে হাঁটলেন তাঁরা।

কলকাতার সইফি হল স্কুলের ইংরেজির শিক্ষিকা শামিনা খান আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। তাঁর হাতে ধরা পোস্টারে ইংরেজিতে লেখা, ‘পড়ুয়াদের উপরে নির্যাতন বন্ধ হোক’। কারও কারও হাতে আবার জাতীয় পতাকা। কারও হাতে লেখা, ‘নো এনআরসি, নো সিএবি’। এ দিন মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে শামিনা বললেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীরা তো অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। অথচ আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ও দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের পুলিশ যে ভাবে মারধর করেছে, তাতে ধিক্কারের কোনও ভাষা নেই।’’ কিছুটা থেমে তিনি বলেন, ‘‘এক জন শিক্ষক হয়ে পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতেই এই আন্দোলনের শরিক হলাম।’’

গত রবিবার সন্ধ্যায় পুলিশের বেধড়ক লাঠি কেড়ে নিতে বসেছে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মহম্মদ মিনহাজউদ্দিনের বাঁ চোখের দৃষ্টি। পুলিশের লাঠিতে শায়ন মুজিব নামে এক ছাত্রের দু’টি হাঁটুই চুরমার হয়ে গিয়েছে। আবার পুলিশের মারের চোটে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আর এক ছাত্র মহম্মদ মুস্তাফার দু’টি হাতের অবস্থা খারাপ। প্রত্যেকটি ঘটনার সমালোচনা করে শামিনের প্রশ্ন, ‘‘এই তিন ছাত্রের স্বাভাবিক জীবন পুলিশ কি ফিরিয়ে দিতে পারবে? আসলে রাষ্ট্র গায়ের জোরে পুলিশকে দিয়ে এই নিগ্রহের কাজ করছে। আমরা পুলিশের এই ভূমিকা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।’’

পা মেলালেন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীরাও। বৃহস্পতিবার, ধর্মতলায়। নিজস্ব চিত্র

শামিনার সঙ্গে এ দিন রাজপথে পা মিলিয়েছিলেন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের কিশোর রহমান, আমিনা মেহতাব, ওয়াকার খানেরা। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের স্নাতকোত্তর-উত্তীর্ণ আমিনা বললেন, ‘‘আমাদের দেশের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়টিই মুছে ফেলতে চান মোদী-শাহ জুটি। এটা একটা বিপজ্জনক ইঙ্গিত।’’ কিশোর রহমানের অভিযোগ, ‘‘ছাত্রছাত্রীরা তো ন্যায়ের পক্ষেই আন্দোলন করছেন। তা হলে রাষ্ট্র তাঁদের প্রতিবাদের মুখ বন্ধ করতে চাইছে কেন? এটা কোনও ভাবেই হতে পারে না। পড়ুয়াদের পাশে থাকতেই আমাদের এখানে আসা।’’

আরও পড়ুন: মধ্য রাতে বদলে যাওয়া ফুটপাতে শুয়ে তিন বছর ধরে বিচারের আশায় ‘দিশা’র পরিবার

‘আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি ওল্ড বয়েজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর ব্যানার নিয়ে এ দিন শহরে হাঁটলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় তিনশো জন প্রাক্তন পড়ুয়া। ওই সংগঠনের সম্পাদক, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ওয়াকার খানের কথায়, ‘‘এত বছর ধরে এ দেশে রয়েছি। আমাদের সম্প্রীতি কিন্তু বরাবর অটুট ছিল। এখন বিজেপি সরকার ধর্মের ভিত্তিতে যে ভাবে দেশটাকে ভাগ করতে চাইছে, তা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা যাবে না।’’ সংগঠনের সভাপতি আতাউল্লাহ খানের কথায়, ‘‘দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া এবং আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের পুলিশ যে ভাবে লাঠিপেটা করেছে, তার তীব্র নিন্দা করছি। সেই সঙ্গে বিজেপি সরকারের প্রতি আমাদের হুঁশিয়ারি, নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহার না করলে আমরা বড়সড় আন্দোলনের পথে যাব।’’ আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদের সঙ্গে তাঁদের ছেলেমেয়েরাও এ দিন মিছিলে হেঁটেছেন।

আরও পড়ুন: বাবাকে ভিডিয়ো কল করে হস্টেলের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী যাদবপুরের ছাত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE