Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হাঁটুর ব্যথা সারাতে শহরে সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল

সোঁদরবনের জঙ্গলে তার হুঙ্কার শুনলে হাঁটু কাঁপবে না, এমন মানুষ মেলা ভার। কিন্তু এ বার সেই দক্ষিণরায় নিজেই হাঁটুর ব্যথায় কাবু! এমন অবস্থা যে চিকিৎসা করাতে ১২১ কিলোমিটার উজিয়ে ঝড়খালি থেকে কলকাতায় আসতে হয়েছে বাদাবনের সেই ‘রাজা’-কে।

নড়ে বসছে না। শুক্রবার, আলিপুর চিড়িয়াখানায়। — নিজস্ব চিত্র

নড়ে বসছে না। শুক্রবার, আলিপুর চিড়িয়াখানায়। — নিজস্ব চিত্র

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৬ ০১:০৮
Share: Save:

সোঁদরবনের জঙ্গলে তার হুঙ্কার শুনলে হাঁটু কাঁপবে না, এমন মানুষ মেলা ভার। কিন্তু এ বার সেই দক্ষিণরায় নিজেই হাঁটুর ব্যথায় কাবু! এমন অবস্থা যে চিকিৎসা করাতে ১২১ কিলোমিটার উজিয়ে ঝড়খালি থেকে কলকাতায় আসতে হয়েছে বাদাবনের সেই ‘রাজা’-কে।

আলিপুর চিড়িয়াখানা সূত্রে খবর, গত বছরের শেষ দিকে কুলতলি থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল পূর্ণবয়স্ক ওই বাঘটিকে। লেজ ধরে তার দৈর্ঘ্য ফুট আটেক। উদ্ধারের পরে অসুস্থতা ধরা পড়ায় তার ঠাঁই হয় ঝড়খালির বন দফতরের শিবিরে। দেখা যায়, বাঘটির পিছনের দুই হাঁটুতে সমস্যা। এমনকী, হাঁটতেও রীতিমতো কষ্ট করতে হচ্ছে তাকে। প্রাথমিক ভাবে ঝড়খালিতেই চিকিৎসা শুরু হয়েছিল তার। কিন্তু ফল মেলেনি। তাই এ বার ওই অসুস্থ বাঘটিকে নিয়ে আসা হয়েছে আলিপুর চিড়িয়াখানার পশু হাসপাতালে।

রাজ্য চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সদস্য-সচিব বিনোদকুমার যাদব জানান, বাঘটির চিকিৎসার জন্য অভিজ্ঞ তিন জন পশু চিকিৎসককে নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড গড়া হয়েছে। তাঁরা বাঘটির হাঁটুর ব্যথা পরীক্ষা করছেন। কী ভাবে ব্যথা সারিয়ে তোলা যায়, শুরু হয়েছে সেই ব্যবস্থাও। চিড়িয়াখানা সূত্রে খবর, বাঘটির পিছনের দুই পায়ের হাঁটুতেই জল জমেছে। জল বার করতে অস্ত্রোপচার করা হতে পারে।

চিড়িয়াখানার একটি সূত্র জানাচ্ছে, একমাত্র হাঁটুর ব্যথা ছাড়া অবশ্য বাঘটির শরীরে আর কোনও অসুস্থতা এখনও ধরা পড়েনি। ফলে হাসপাতালে এসে মোটামুটি খোশমেজাজেই রয়েছে সে। নিয়মিত খাওয়াদাওয়াও করছে। আবার মাঝেমধ্যে ‘হালুম’ করে ডেকেও উঠছে বাঘ বাবাজি।

চিড়িয়াখানায় বাঘের সংখ্যা ছিল ৭। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ওড়িশার নন্দনকানন চিড়িয়াখানা থেকে আরও দু’টি বাঘ ও দু’টি বাঘিনীকে নিয়ে আসা হয় আলিপুরে। সব মিলিয়ে চিড়িয়াখানায় বাঘেদের সংসার এখন জমজমাট। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে কি সুন্দরবনের এই ডোরাকাটারও ঠাঁই হবে চিড়িয়াখানার ঘেরাটোপে? তেমনটা কিন্তু বলছেন না চিড়িয়াখানার কর্তারা। বিনোদ জানালেন, সুস্থ হয়ে উঠলে এই বাঘটিকে ফের সুন্দরবনেই ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।

বাঘটি চিড়িয়াখানায় ঠাঁই না পেলেও আলিপুর পরিবারে কিন্তু ফের এক নতুন সদস্য এসে গিয়েছে। চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিস সামন্ত জানান, কিছু দিন আগে মালদহের এক ব্যক্তির কাছ থেকে একটি স্লো-লরিস বা লজ্জাবতী বাঁদর উদ্ধার করেছিল বন দফতর। সম্প্রতি মালদহের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার তাকে চিড়িয়াখানার হাতে সঁপে দিয়েছেন। বাইরে থেকে কোনও প্রাণী এলে সেটিকে প্রথমে একটি নির্দিষ্ট ঘেরাটোপে আলাদা করে রাখা হয় (কোয়ারেন্টাইন)। তার কোনও রোগ রয়েছে কি না, আচরণে কোনও রকম অস্বাভাবিকতা রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করার জন্যই এই ব্যবস্থা। আশিসবাবু জানিয়েছেন, এই ‘কোয়ারেন্টাইন’ পর্ব শেষ হলেই নতুন সদস্যকে আনা হবে দর্শকদের সামনে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Royal bengal tiger Knee pain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE