Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Anis Khan

Anis Death: আত্মহত্যা হয়ে গিয়েছে খুন! বহু তদন্তেই মোড় ঘুরিয়েছে দ্বিতীয় বারের ময়না-তদন্ত

মৃতের পরিবার এ ব্যাপারে নিমরাজি হলেও রাজ্যের ফরেন্সিক চিকিৎসকদের বড় অংশই জানাচ্ছেন, কী ভাবে মৃত্যু হয়েছে, তা তো বোঝা যাবেই, সেই সঙ্গেই জানা সম্ভব, উপর থেকে ওই তরুণকে ফেলে দেওয়া হয়েছে, না কি তিনি পড়ে গিয়েছিলেন!

আনিস খানের মরদেহের নতুন করে ময়না-তদন্ত হলে কি অন্য কোনও তথ্য উঠে আসবে?

আনিস খানের মরদেহের নতুন করে ময়না-তদন্ত হলে কি অন্য কোনও তথ্য উঠে আসবে? ফাইল চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস ও চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:২৫
Share: Save:

কখনও মৃত্যুর এক মাস, কখনও বা বেশ কয়েক মাস পরেও মরদেহ মাটির নীচ থেকে তুলে এনে ময়না-তদন্তের নজির রয়েছে। নতুন করে ময়না-তদন্তের জেরে মামলার অভিমুখ ঘুরে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বহু ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, অস্বাভাবিক মৃত্যু বলে যা চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেটাই খুনের ঘটনার রূপ নিয়েছে। ঝুলন্ত মৃতদেহ দেখে যা আত্মহত্যা বলে ভাবা হয়েছিল, ভিসেরা রিপোর্ট আসার পরে সেটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে মারধর করে ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনা!

ছাত্রনেতা আনিস খানের মরদেহের নতুন করে ময়না-তদন্ত হলে তেমনই কোনও অজানা তথ্য বেরিয়ে আসবে কি না, এখন সেই নিয়ে চর্চা চলছে। মৃতের পরিবার এ ব্যাপারে নিমরাজি হলেও রাজ্যের ফরেন্সিক চিকিৎসকদের বড় অংশই জানাচ্ছেন, কী ভাবে মৃত্যু হয়েছে, তা তো বোঝা যাবেই, সেই সঙ্গেই জানা সম্ভব, উপর থেকে ওই তরুণকে ফেলে দেওয়া হয়েছে, না কি তিনি পড়ে গিয়েছিলেন! তাঁদের কথায়, ‘‘আঘাতের চিহ্ন এবং পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণ মিলিয়ে দেখলেই সবটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’

কলকাতার একটি মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘মৃতের শরীরে ‘ডিফেন্স উন্ড’ রয়েছে কি না, তা আগে যাচাই করা দরকার। আনিসের ঘটনায় একটি জানলা দেখানো হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, সেখান থেকে পড়েই
মৃত্যু। তাঁকে যদি ওই জানলা পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলা হয়ে থাকে, তা হলে ওই পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার সময়ে তিনি নিশ্চয়ই আত্মরক্ষার চেষ্টা করে থাকবেন। সে ক্ষেত্রে মৃতের শরীরে ‘ডিফেন্স উন্ড’ থাকার সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু যদি অন্য কোনও ভাবে বা পালাতে গিয়ে নীচে পড়ে থাকেন, তা হলে ‘ডিফেন্স উন্ড’
থাকবে না।’’ সে ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে শরীরের অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আঘাত।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দেহ উদ্ধারের পরে ঘটনাটি খুন না আত্মহত্যা, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বেশ কয়েকটি বিষয় মিলিয়ে দেখতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে ময়না-তদন্তের ভিত্তিতেই স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায়। জলে ডুবে, আগুনে পুড়ে বা উপর থেকে নীচে পড়ে মৃত্যুর মতো বেশ কিছু ক্ষেত্রে আবার ময়না-তদন্তের সঙ্গেই পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণের উপরে নির্ভর করতে হয়। কারণ, এই ধরনের ঘটনায় বহু ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র ময়না-তদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায় না। শরীরের অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আঘাতের সঙ্গে পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণ মিলিয়ে দেখতে হয়।

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক মেডিসিনের চিকিৎসক সোমনাথ দাস বললেন, ‘‘যে কোনও চিকিৎসক রোগীর সমস্যা শুনে রোগের ইতিহাস জানতে চান। তার পরে শরীরে হাত দিয়ে বা স্টেথো লাগিয়ে দেখেন। এর পরে কিছু পরীক্ষা করাতে দেন। সবটা মিলিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছন। এ ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তেমনই। যিনি ময়না-তদন্ত করবেন, তিনি ইতিমধ্যেই একটি ঘটনা পরম্পরা পেয়ে গিয়েছেন। এর পরে কী কী ধরনের আঘাত রয়েছে দেখে বিচার করতে হবে, উপর থেকে পড়ার ফলে ওই ধরনের বা ওই মাত্রার আঘাত লেগে থাকতে পারে কি না। সব শেষে সমস্ত রিপোর্ট মিলিয়ে একটি চূড়ান্ত মতামত তৈরি করবেন।’’

ফরেন্সিক চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, উপর থেকে পড়ার ক্ষেত্রে মাথার আঘাত সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর পরে বুক ও মেরুদণ্ডের আঘাত খতিয়ে দেখতে হয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে হাড়ের আঘাতও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সব মিলিয়ে যে সিদ্ধান্তে পৌঁছনো হয়, সেটাই শেষ নয়। এর পরে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের মতামত ও ময়না-তদন্তের রিপোর্টের পাশাপাশি আদালত সাক্ষ্য-প্রমাণ খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেয়।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক বিভাগের এক দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক বললেন, ‘‘বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য-প্রমাণের উপরে ভিত্তি করে যত দূর সম্ভব, বিজ্ঞান তত দূর এগোবে। বাকিটা আদালতের বিচার্য।’’ সেই সঙ্গে তাঁদের দাবি, অন্যান্য নানা মামলার মতো আনিস-মৃত্যুর তদন্তেও বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য-প্রমাণের উপরে ভিত্তি করে সত্য উদ্‌ঘাটন সম্ভব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anis Khan Anis Khan Death Mystery Enquiry
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE