আলোচনা: বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে ব্রাত্য বসু এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।
শহরের ঐতিহ্য বাঁচাতে পুর আইন শিথিল করার পক্ষে সওয়াল করলেন নামী স্থপতিরা। রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সদস্য পার্থরঞ্জন দাসের কথায়, ‘‘একই সঙ্গে পুরনো স্থাপত্য-স্মৃতি বাঁচিয়ে কলকাতাকে বসবাসের যোগ্য করে রাখতে একটা মধ্যপন্থা দরকার। তাতে পুরনো স্থাপত্যের আদলটা থাকবে, আবার নতুন যুগোপযোগী নির্মাণেও হাত দেওয়া যাবে।’’ তার বদলে ঐতিহ্য বলতে স্রেফ আদ্যিকালের কিছু নির্মাণ অবিকল রেখে দিলে শহর নিঃশব্দে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে, এমনটাই মনে করেন পার্থবাবু।
কলকাতার স্থাপত্য ঘরানার অভিযাত্রা নিয়ে আলোকচিত্রে ভরপুর একটি বই (কলকাতা হ্যাপেনিং সিটি) মঙ্গলবার প্রকাশ করলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সেখানেই উঠে এল কলকাতার ঐতিহ্য রক্ষায় নানা আশা-নিরাশার কথা। এ শহরেই কফি হাউস, আবার এ শহরেই বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের স্মৃতিজড়িত শ্যামবাজারের বসু পরিবার। ইতিহাসের এই ছোঁয়ায় শিহরণ হয়, বলছিলেন সৌমিত্র। যার ধরতাইয়ে মন্ত্রী তথা নাট্যব্যক্তিত্ব ব্রাত্য বসু বলে ওঠেন, ‘‘শঙ্খ ঘোষের কথাগুলো বারবার মনে হয়, এ কলকাতার ভিতরে আছে আর একটা কলকাতা।’’ স্থপতিদের চোখে, কলকাতা বা মুম্বইয়ের স্থাপত্য শরীরের একটা ধাঁচ আছে। তুলনায় দিল্লি, বেঙ্গালুরু অনেকটাই আকর্ষণহীন। কিন্তু এই কলকাতাকে বাঁচানোটা জরুরি।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনের সংস্কারের উদাহরণ তুলে ধরলেন উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া। বোঝালেন, সময়ের দাবি মেনে কী ভাবে বজায় রাখা সম্ভব অতীত রক্ষার কৃৎকৌশল। সাবেক বেকার বিল্ডিংয়ে পার্থরঞ্জনবাবুর সাহায্যে বিজ্ঞানের আধুনিক পরীক্ষাগার তৈরি করা হয়। আবার, স্থপতি দুলাল মুখোপাধ্যায়ের সাহায্যে গড়ে ওঠে টিচার্স কমন রুম। অনুরাধা বলছিলেন, ‘‘পুরনো বাড়ির মেজাজটা রাখতে চেয়েছিলাম, আবার সেই সঙ্গে ২০১৮-র দাবিমাফিক এসি বসানো, ওয়াই-ফাই বা টেলিফোনে সংযোগের সুব্যবস্থা— সেটাও ন্যূনতম চাহিদা ছিল। গুচ্ছের মেজনাইন তলের ঠাসাঠাসি বাদ দিয়েই অসাধ্যসাধন করেন স্থপতিরা।’’ স্থপতি অবিন চৌধুরীর গড়ে তোলা রাজারহাটে প্রেসিডেন্সির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসটিও মূল ভবনের সঙ্গে সাযুজ্য ধরে রাখে। বহু চেষ্টায় প্রেসিডেন্সির মূল ভবনে আদি যুগের ঘিয়ে রং ফিরিয়ে আনার গল্পও বললেন অনুরাধা।
সামগ্রিক ভাবে পুরনোকে রেখে নতুন ঐতিহ্য গড়ার স্বপ্নই উঠে এল কলকাতা-প্রেমিকদের আলোচনায়। রিয়্যাল এস্টেট কারবারি তথা শিল্পপতি নন্দু বেলানি মনে করালেন, ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার দাবিও কিন্তু একটুও খাটো নয়।