Advertisement
E-Paper

গুদামে পড়ে দুর্গা প্রতিমা, ক্ষতির মুখে কুমোরটুলি

করোনা পরিস্থিতিতে প্রতিমা বানানো থেকে শুরু করে বিক্রি এবং শেষে প্রতিমা পড়ে থাকার যে অভিজ্ঞতা গত কয়েক মাসে হল, তার পুনরাবৃত্তি কোনও দিনই চান না বলে জানাচ্ছেন শিল্পীরা।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২০ ০৩:৩৮
অনাদরে: বিক্রি না হওয়া দুর্গা প্রতিমার সারি। রবিবার, কুমোরটুলিতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

অনাদরে: বিক্রি না হওয়া দুর্গা প্রতিমার সারি। রবিবার, কুমোরটুলিতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দুর্গাপুজোর পরে কেটে গিয়েছে এক মাস। এখনও কুমোরটুলির বিভিন্ন স্টুডিয়োয় পড়ে রয়েছে একাধিক অবিক্রীত দুর্গা প্রতিমা। কুমোরটুলির শিল্পীরা জানাচ্ছেন, করোনা পরিস্থিতিতে শেষ মুহূর্তে অনেকে পুজো বাতিল করায় আর প্রতিমা নিতে আসেননি। ফলে সে সব রয়ে গিয়েছে শিল্পীদের কাছেই। এই ভাবে প্রতিমা পড়ে থাকার ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে হয়নি বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা।

রবিবার কুমোরটুলিতে গিয়ে দেখা গেল পড়ে থাকা দুর্গা প্রতিমার সামনেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে জগদ্ধাত্রী প্রতিমা। বিক্রি হয়ে গিয়েছে লক্ষ্মী, কালী প্রতিমাও। শিল্পীরা জানাচ্ছেন, জগদ্ধাত্রী প্রতিমা মূলত বায়না অনুযায়ীই তৈরি করা হয়। তাই এই প্রতিমা প্রায় সবই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু শিল্পীরা অনেক দুর্গা প্রতিমা বায়না ছাড়াও বানান। উদ্যোক্তারা কুমোরটুলি থেকে সরাসরি প্রতিমা কিনে নিয়ে যান। মূলত সেই সব প্রতিমাই এ বছর বিক্রি হয়নি।

করোনা পরিস্থিতিতে প্রতিমা বানানো থেকে শুরু করে বিক্রি এবং শেষে প্রতিমা পড়ে থাকার যে অভিজ্ঞতা গত কয়েক মাসে হল, তার পুনরাবৃত্তি কোনও দিনই চান না বলে জানাচ্ছেন শিল্পীরা। অধিকাংশ শিল্পীর কাছেই রয়ে গিয়েছে অন্তত একটি-দু’টি করে প্রতিমা। দুর্গাপুজোর পরে লক্ষ্মীপুজোয় দুর্গার পাশে থাকা লক্ষ্মী প্রতিমা বিক্রি করে দেওয়া গিয়েছে। এমনকি, কার্তিকের মূর্তিও আলাদা করে বিক্রি করা গিয়েছে। কিন্তু মূল দুর্গা প্রতিমা বিক্রির কোনও সুযোগ মেলেনি। আগামী বছর ওই সব প্রতিমা বিক্রি করার মতো অবস্থায় থাকবে কি না, তার নিশ্চয়তাও নেই। তাই এই সব প্রতিমা তৈরির পুরো খরচই লোকসানের খাতায় চলে গেল বলে জানাচ্ছেন শিল্পীরা।

আরও পড়ুন: ভুয়ো নম্বর প্লেটের গাড়িতে এটিএম লুট, সন্দেহ পুলিশের

অপূর্ব পাল নামে এক শিল্পী জানাচ্ছেন, কুমোরটুলিতে প্রায় দেড়শোর মতো প্রতিমা অবিক্রিত থেকে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘অন্য বছর পুজোর আগে চাহিদা অনুযায়ী প্রতিমার জোগান দিতে হিমসিম খাই। এ বার পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল। প্রতিমা মূলত বাঁশ ও খড় দিয়ে তৈরি। এক বছর ধরে সংরক্ষণ করা কঠিন। নষ্ট হয়ে গেলে ফেলে দিতে হবে।’’

আর এক শিল্পী সুভাষ পাল বলেন, ‘‘আমার তিনটি দুর্গা প্রতিমা বিক্রি হয়নি। লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হল। গুদামে রাখার ব্যবস্থা করেছি। যদি ঠিক থাকে, তা হলে সামনের বছর বিক্রি হতে পারে।’’ সুভাষবাবু জানান, লোকসানের উপরে গুনতে হবে গুদামের ভাড়া। তার অঙ্কও কম নয়।

কুমোরটুলির শিল্পীরা জানাচ্ছেন, অন্য বছর দূর থেকে উদ্যোক্তারা প্রতিমা কিনতে আসেন। এ বার তাঁরা প্রায় কেউ-ই আসেন নি। অপূর্ববাবু বলেন, ‘‘এ বার এমনিতেই কম প্রতিমা বানিয়েছিলাম। কিন্তু তা-ও সব বিক্রি হল না।’’ কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সংস্কৃতি সমিতির সম্পাদক বাবু পাল বলেন, ‘‘বেশ কিছু আবাসন শেষ মুহূর্তে দুর্গাপুজো বাতিল করেছে। ফোন করে জানানো হয়েছে, আবাসনে একাধিক ব্যক্তির করোনা হয়েছে। কিন্তু তত ক্ষণে প্রতিমা তৈরি হয়ে গিয়েছে।’’

এক শিল্পী বলেন, ‘‘আশা করছি আগামী তিন-চার মাসে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হবে। পরবর্তী উৎসবগুলিতে করোনা পরিস্থিতির আঁচ কম পড়বে। তবে এ বার শিল্পীরা যে আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হলেন, তাতে আগামী বছর তাঁরা সাবধানি হবেন। বায়না ছাড়া দুর্গা প্রতিমা বানানোর কথা হয়তো অনেকেই ভাবতে পারবেন না।’’

Durga Idol Kumortuli
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy