Advertisement
১৮ মে ২০২৪
হাতে পেতে ‘ঠান্ডা লড়াই’

পুরসভাকে এডিবি-র ঋণ ১২৫০ কোটি টাকা

নোট-কাণ্ড নিয়ে দেশ তোলপাড়। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন ক্রমশ জোরদার করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরই মধ্যে সোমবার কলকাতা পুরসভাকে প্রায় ১২৫০ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক (এডিবি)।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১৫
Share: Save:

নোট-কাণ্ড নিয়ে দেশ তোলপাড়। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন ক্রমশ জোরদার করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরই মধ্যে সোমবার কলকাতা পুরসভাকে প্রায় ১২৫০ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক (এডিবি)। কিন্তু সেই টাকা হাতে পাওয়া নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে ‘ঠান্ডা ল়ড়াই’ শুরু হয়েছে কলকাতা পুরসভার, অর্থাৎ বকলমে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের।

পুরসভা সূত্রের দাবি, এডিবি-র টাকা হাতে পেতে গেলে অর্থ মন্ত্রকের অনুমতি লাগে। তা দেওয়া নিয়েই টালবাহানা করে চলেছে তারা। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, এ়ডিবি ঋণের টাকা পুরসভাকে হস্তান্তর করতে রাজি। কিন্তু বাগড়া দিচ্ছে মন্ত্রক। কেন্দ্রের দাবি, কাজের বরাত দিয়ে খরচ করুক পুরসভা। তার পরে সেই হিসেব দাখিল করলে টাকা মেটানো হবে। কিন্তু মেয়রের প্রশ্ন, ‘‘এত কোটি টাকা একটি পুরসভা পাবে কোথা থেকে?’’ সরাসরি না বললেও রাজনৈতিক সুসম্পর্ক না থাকাতেই যে এই বাধা তৈরি হচ্ছে, তা-ও হাবেভাবে বুঝিয়ে দেন তিনি।

অর্থ মন্ত্রক সূত্রের পাল্টা দাবি, কোনও প্রকল্পের ভাগে ভাগে কাজ হয় এবং সেই অনুযায়ী টাকা দেওয়া হয়। পুরসভার আগের প্রকল্পেও তেমনই হয়েছে। কিন্তু নবান্ন সম্প্রতি মন্ত্রককে জানিয়েছে, এই টাকা দেওয়ার কাজ রাজ্য সরকারের মাধ্যমে করতে হবে। সেই কারণেই কাজ করাতে গিয়ে পুরসভাকে গাঁটের কড়ি খরচ করতে হচ্ছে। এডিবির টাকা দেওয়ার নিয়মে বদল হয়নি।

তা হলে কি প্রকৃত লড়াই নবান্নের সঙ্গে ছোট লালবাড়ির? মেয়রের ব্যাখ্যা অবশ্য একেবারেই অন্য। তিনি জানান, রাজ্য সরকারের ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ দিয়ে কেন্দ্রের কাছে ফের আর্জি পাঠানো হয়েছে। অর্থাৎ, বল কেন্দ্রের কোর্টেই।

পুরকর্তাদের দাবি, এত টাকা দেশের কোনও পুরসভাকে এডিবি কখনও দেয়নি। শহরের উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাঁদের প্রকল্প ও পরিকল্পনা দেখেই খুশি হয়েই এত টাকা দিয়েছে এডিবি। ‘‘এত বড় সাফল্য পুরসভা আগে পায়নি,’’ বলছেন শোভনবাবু। পুরসভা সূত্রের খবর, এডিবি-র টাকার একটি বড় অংশ খরচ করা হবে কলকাতার বড় একটি অংশের নিকাশি উন্নয়নে। তার ফলে দক্ষিণ শহরতলিতে জল জমার ছবি বদলাবে।

গত কয়েক বছরে খাস কলকাতার নিকাশি চরিত্র অনেকটাই বদলে গেলেও যাদবপুর, বেহালার মতো দক্ষিণ শহরতলি বা বৃহত্তর কলকাতায় জল জমার সমস্যা কাটেনি। বিশেষত বর্ষার এই জমা জলে মশা ডিম পাড়ে। তা থেকে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এ বছরই দক্ষিণ শহরতলির বিস্তীর্ণ এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপে নাকাল হয়েছেন মানুষজন। মৃত্যুর নজিরও বিরল নয়।

মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের আশ্বাস, ‘কলকাতা এনভায়রনমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের’ দ্বিতীয় দফার এই কাজ শেষ হতে দু’-আড়াই বছর সময় লাগবে। তাতে এই জল জমার সমস্যা মিটে যাবে। পুরসভা সূত্রে খবর, এই কাজের ফলে যাদবপুর, টালিগঞ্জ, কেওড়াপুকুর, জেমস লং সরণি, সন্তোষ রায় রোডের মতো এলাকার বাসিন্দারা উপকৃত হবেন।

পুরকর্তারা বলছেন, এই কাজের জন্য ভূগর্ভে পাইপ বসানোর পাশাপাশি বর্জ্যশোধন কেন্দ্র তৈরি করা হবে। দক্ষিণ শহরতলির ঘিঞ্জি এলাকায় যাতে রাস্তা বেশি খোঁড়াখুঁড়ি না করতে হয়, তার জন্য ‘মাইক্রো-টানেলিং’ প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Asian Development Bank
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE