‘কনে’ সেজেগুজে তৈরি। কিন্তু দীর্ঘ অপেক্ষা করার পরেও ‘পাত্রের’ দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। অগত্যা যাঁরা ‘অতিথি’, তাঁরা ফিরছেন বিফলমনোরথ হয়ে। কবে ‘পাত্র’ আসবে, দিন-রাত কার্যত এক করে সেই উত্তরই এখন হাতড়ে চলেছেন তাঁরা।
‘কনে’ অর্থাৎ এটিএম। আর ‘পাত্র’ নতুন ৫০০ টাকার নোট। লেনদেন পরিষেবা বন্ধ করে শহর জুড়ে এটিএমগুলি ক্যালিব্রেশন করা হয়েছিল নতুন ৫০০ এবং ২০০০ টাকার নোটের জন্য। কিন্তু ঘটা করে আয়োজনই সার। নতুন ৫০০ টাকার নোট যেন সোনার হরিণ। শোনা যাচ্ছে বাজারে এসেছে, কিন্তু লাইনে দীর্ঘ অপেক্ষার পরে মেশিনের কাছে গেলে আর ধরা দিচ্ছে না। এমনকী, ১০০ টাকার নোটও নেই। খুচরোর সন্ধানে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন এটিএম চষে ফেললেও তাই খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে অধিকাংশ গ্রাহককে।
শহরের অধিকাংশ এটিএমের সামনে ‘নো ক্যাশ’ বোর্ড। যে সব এটিএমে টাকা আছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শুধু দু’হাজারি নোট। সাধারণ মানুষের কাছে যা এখন ‘গোলাপি ভিলেন’। কারণ, বাজার কিংবা মুদির দোকানে সেই গোলাপি নোট নিয়ে গেলে জুটছে শুধু প্রত্যাখ্যান।
রাসবিহারী থেকে ধর্মতলা বা ভবানীপুর থেকে শ্যামবাজার, সর্বত্র হয়রানির ছবিটা এ দিনও বদলায়নি। এটিএম পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি নোট বাতিলের এক মাস পরেও। কলকাতা পুরসভা সংলগ্ন পাঁচটি এটিএমের মধ্যে বন্ধ ছিল তিনটিই। একই ছবি গড়িয়াহাট চত্বরে। পরপর চারটি এটিএমে ‘নো ক্যাশ’ বোর্ড। কলেজ স্ট্রিট চত্বরে বেশ কিছু এটিএম খারাপ। তাই বন্ধই ছিল লেনদেন।
তবে, যে এটিএমে ১০০ ও নতুন ৫০০ টাকার নোট পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে সাপের মতো এঁকেবেঁকে গিয়েছে লাইন। পথচারীও গন্তব্যে না গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন সেই লাইনে। ধর্মতলা চত্বরে দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম চালু থাকলেও একটি থেকে শুধু ১০০ টাকার নোট পাওয়া যাচ্ছিল। অন্যটিতে শুধু ২০০০ টাকার নোট। বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমে দুপুরে ১০০ এবং নতুন ৫০০ টাকার নোট পাওয়া যাচ্ছিল। ধর্মতলার এক অফিসে যাওয়ার কথা থাকলেও তা বাদ দিয়ে সেই এটিএমের লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন অসীম সেন। বললেন, ‘‘১০০ টাকার নোট পকেটে থাকা এখন সব চেয়ে জরুরি। তাই সব কাজ ফেলে দাঁড়িয়ে পড়েছি।’’ অফিসের কাজ ফেলে ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে টাকা তুলেছেন সলিল রায়চৌধুরী। সলিলবাবু বললেন, ‘‘৫০০, ১০০ টাকার নোট তো এখন মহার্ঘ। এক মাস হয়ে গেলেও নগদের সমস্যা মিটল না। বাধ্য হয়ে কাজ ফেলেই টাকা খুঁজতে বেরিয়েছি।’’
অঙ্কন: অশোক মল্লিক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy