শব্দবাজি ফাটানোর প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। অভিযোগ, সেই অপরাধে তাঁকে স্থানীয় ক্লাবে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানে যেতে রাজি না হওয়ায় বেলঘরিয়ার ওই শিক্ষকের বাড়িতে ওই ক্লাবের সদস্যেরা হামলা চালান বলে অভিযোগ উঠেছে। ক্লাবের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, ঘটনায় তাদের কোনও সদস্য জড়িত নন। ক্লাবেও সালিশির জন্য কাউকে ডাকা হয়নি।
পুলিশ সূত্রে খবর, বেলঘরিয়ার বি এম ব্যানার্জি রোডের বাসিন্দা তমাল দাস স্থানীয় নন্দননগর উচ্চ বিদ্যালয়ের দর্শনের শিক্ষক। তাঁর স্ত্রী সোমা দাস কলকাতা পুরসভার কনসালট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার। কালীপুজোর দিন রাত দেড়টা নাগাদ তাঁদের সাড়ে তিন বছরের মেয়ে কৃষ্টির জ্বর বেড়ে যাওয়ায় তার মাথায় জল ঢালছিলেন ওই দম্পতি। অভিযোগ, তখন তাঁদের বাড়ির কাছেই বিকট শব্দে বাজি ফাটলে তমালবাবু দেখেন তাঁদেরই এক প্রতিবেশী দম্পতি হেঁটে যাচ্ছেন। পরদিন, ৩০ অক্টোবর বাড়ির পাশে লাগানো সিসিটিভি ফুটেজে তমালবাবু দেখেন, রাতে যে দম্পতিকে দেখেছিলেন, তাঁরাই চকলেট বোমাটি ছোড়েন।
এর পরে সকাল ১০টা নাগাদ বেলঘরিয়া স্টেশন সংলগ্ন বাজারে গিয়ে ওই প্রতিবেশী পল্লব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হলে তমালবাবু শব্দবাজি ফাটানো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘‘শব্দবাজি নিষিদ্ধ। নেশা না করলে রাত দেড়টার সময়ে কারও পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়।’’ পল্লববাবুও স্বীকার করেন তাঁর স্ত্রী মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় শব্দবাজি ফাটিয়ে ঠিক করেননি। তমালবাবুর স্ত্রী সোমাদেবীর দাবি, ওই দিন দুপুরে মেয়েকে ডাক্তার দেখিয়ে ফেরার পরে পরিবারের লোকেরা জানান এলাকার কয়েক জন যুবককে নিয়ে মৌসুমীদেবী এসে বলে গিয়েছেন রাত ৮টায় স্থানীয় আজাদ হিন্দ সঙ্ঘে গিয়ে তমালবাবুকে দেখা করতে হবে। বিষয়টি পুলিশে জানান ওই শিক্ষক।
অভিযোগ, ক্লাবে না যাওয়ায় রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ পল্লববাবু-সহ আরও কয়েকজন এসে তমালবাবুকে হুমকি দিয়ে চলে যান। আধ ঘণ্টা পরে তাঁরা ফের এসে দরজায় লাথি মারতে থাকেন বলেই অভিযোগ করেন সোমাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। ওঁরা দরজায় লাথি মারছিল। দরজা খুলতেই আমাকেও লাথি মারল। ছেলে দরজাটা বন্ধ না করে দিলে কি হত জানি না।’’ ফের ঘটনাটি বেলঘরিয়া থানায় জানান তমালবাবু। সোমাদেবীর দাবি, পুলিশ এলে অভিযুক্তেরা সকলেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। তবে গত ২ নভেম্বর বেলঘরিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই শিক্ষক।
এই ঘটনার সঙ্গে ক্লাবের কোনও যোগ নেই বলেই দাবি আজাদ হিন্দ সঙ্ঘের সম্পাদক সমীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, ‘‘ক্লাবের বিষয় নয়, তাহলে কেন ওঁকে ক্লাবে ডাকতে যাব? এটা প্রতিবেশীদের মধ্যে সামান্য ঝামেলা।’’ অন্য দিকে পল্লববাবু বলেন, ‘‘নিজের ও স্ত্রীর ভুলটা স্বীকার করে নিয়েছিলাম। কিন্তু তমালবাবু সবার সামনে আমার স্ত্রীকে মাতাল বললেন।’’ তিনি জানান, পাড়ার লোকেরা মিলে বিষয়টি মিটমাটের জন্যই তমালবাবুকে পুজোর প্যান্ডেলে আসতে বলা হয়। পল্লববাবু বলেন, ‘‘পাড়ার ছেলেরা ওই জন্যই ডাকতে গিয়েছিল। কিন্তু সোমাদেবী গালিগালাজ করাতেই তাঁরা রেগে দরজায় ধাক্কা দেন। তবে পুলিশের কথা মতো পরে আমরা তমালবাবুর কাছে ক্ষমা চাই।’’
ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (জোন ২) ধ্রুবজ্যোতি দে বলেন, ‘‘ঘটনার দিন পুলিশ গেলেও তমালবাবুরা অভিযোগ করেননি। তবে ২ নভেম্বর অভিযোগ দায়েরের পরে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy