Advertisement
E-Paper

নম্বরে দু’নম্বরি, ‘কেস’ খাচ্ছে আর এক অটো

লালবাজারের এক ট্র্যাফিক-কর্তার কথায়, ‘‘বালিগঞ্জ-চেতলা রুটের এক অটোচালক নিজের নম্বর প্লেটে কারচুপি করে নির্ভাবনায় ট্র্যাফিক আইন ভাঙছিলেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। আর তাঁর বিকৃত করা নম্বরটি মিলে যাচ্ছিল শিয়ালদহ এলাকায় সমীরবাবুর অটোর সঙ্গে। ফলে, এত দিন সমীরবাবু অন্যের পাপের শাস্তিতে ঝামেলা পোহাচ্ছিলেন।’’

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৭
ছিল শূন্য, হয়ে গেল আট। তাতেই বিভ্রান্তি। সোমবার, গড়িয়াহাট থানায় রাখা সেই অটো। নিজস্ব চিত্র

ছিল শূন্য, হয়ে গেল আট। তাতেই বিভ্রান্তি। সোমবার, গড়িয়াহাট থানায় রাখা সেই অটো। নিজস্ব চিত্র

এমন ভাবেও ‘কেস’ খাওয়া যায়! বারবার সেটাই ভাবছিলেন বেলেঘাটা-শিয়ালদহ রুটের অটোচালক সমীর দাস।

এবং ফের কেস খাচ্ছিলেন বেমক্কা। গত দু’মাসে অন্তত ৪৫ বার।

কিন্তু কেন কেস খাচ্ছেন, তা কিছুতেই মাথায় ঢুকছিল না! ধরা যাক, সমীরবাবু তখন স্টিয়ারিংয়ে বসে শিয়ালদহ স্টেশনের কাছে। কিন্তু পুলিশের খাতা বলছে, তিনি সিগন্যাল ভেঙেছেন রাসবিহারী মোড়ে। কিংবা তিনি হয়তো বেলেঘাটার কাছে অটোয় গ্যাস ভরতে ব্যস্ত, তখনই চেতলার কাছে ঠিক জায়গায় না-দাঁড়ানোর অভিযোগে ট্র্যাফিক পুলিশ তাঁর নামে কেস দিয়েছে। সমীরবাবু বুঝতে পারছিলেন না বিন্দুবিসর্গ। কিন্তু তাঁর মোবাইলে পরপর কেস খাওয়ার বার্তা এসেই যাচ্ছিল নাগাড়ে।

শেষমেশ গত শনিবার বিকেলে গড়িয়াহাটে সাউথ-ইস্ট ট্র্যাফিক গার্ডের কর্তব্যরত জনৈক সার্জেন্টের সৌজন্যে এই কেস-রহস্যের সমাধান হল। একটি অটোর নম্বর প্লেট দেখে সন্দেহ হয় ওই অফিসারের। অটো থামিয়ে তিনি দেখেন, ডব্লিউবি ০৪ডি ১০০৭ নম্বরের শেষ ‘জিরো’টার পেট কালো কালিতে কাটা। যার ফলে, ওই শূন্যটিকে ইংরেজির আটের মতো দেখতে লাগছে। অটোর গায়ে একটি জায়গা ছাড়া অন্যত্র নম্বর প্লেটের উপরে কালো টেপ মারা।
কেন তিনি এমন করেছেন, জিজ্ঞাসা করলে সদুত্তর মেলেনি ওই অটোচালকের কাছে। কিন্তু সার্জেন্ট তখনই অটোর ছবি তুলে লালবাজারে খবর পাঠিয়ে দেন।

বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গিয়েই সমীরবাবুর কেস খাওয়ার রহস্য ফাঁস হয়। লালবাজারের এক ট্র্যাফিক-কর্তার কথায়, ‘‘বালিগঞ্জ-চেতলা রুটের এক অটোচালক নিজের নম্বর প্লেটে কারচুপি করে নির্ভাবনায় ট্র্যাফিক আইন ভাঙছিলেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। আর তাঁর বিকৃত করা নম্বরটি মিলে যাচ্ছিল শিয়ালদহ এলাকায় সমীরবাবুর অটোর সঙ্গে। ফলে, এত দিন সমীরবাবু অন্যের পাপের শাস্তিতে ঝামেলা পোহাচ্ছিলেন।’’ পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত অটোচালককে গ্রেফতার করা যায়নি। তাঁর খোঁজ শুরু হয়েছে। তবে অটোটির মালিক অসীম মান্নাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রের খবর, সমীরবাবু বেশ কয়েক বার কেস খেয়ে লালবাজারে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন। তিনি বার বার পুলিশকর্তাদের বোঝান, অভিযোগ ওঠার সময়ে তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেনই না। যখন তিনি সিগন্যাল ভেঙেছিলেন বলে অভিযোগ, তখনই সমীরবাবু অন্যত্র অটোয় গ্যাস ভরছিলেন বলে কাগজপত্রের প্রমাণও দেখান পুলিশকে। পুলিশের দাবি, বার বার সমীরবাবুর কথা শুনে তাঁদের মনে হয়, ওই চালক সত্যি কথাই বলছেন। ফলে, কোনও অটোচালক নম্বর বিকৃত করে রাসবিহারী লাগোয়া এলাকায় কুকীর্তি করছেন কি না, শুরু হয় সেই নজরদারি। পুলিশের দাবি, এ ভাবেই সব রহস্যের সমাধান হয়।

সোমবার দুপুরে ফোনে সমীরবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এত দিনে যেন বুকের উপর থেকে পাথর নেমে গেল! কী করে বারবার কেস খাচ্ছিলাম, মাথায় ঢুকছিল না।’’ তবে বার বার বোকা বনার পরে এক ধরনের আতঙ্কও কাজ করছে তাঁর মনে। যা মালুম হচ্ছিল সমীরবাবুর গলার স্বরেই।

Case Auto Number Plate Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy