Advertisement
E-Paper

বর্ষার আগে নিকাশির হাল ধরতে বৈঠক

মানুষের সচেতনতা না বাড়লে শহরের নিকাশি ব্যবস্থা উন্নত করা যে কঠিন কাজ তা মেনে নিচ্ছেন মেয়র এবং মন্ত্রী। শহরের বুক চিরে যে সব খাল প্রবাহিত হয়েছে, সেগুলির দুই ধারের কিছু বাসিন্দা খালগুলিকে জঞ্জাল ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করছেন। আর তাতেই রুদ্ধ হচ্ছে জলের প্রবাহ। বাড়ছে শহর জুড়ে জল জমার প্রবণতা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৬ ০২:০৩

মানুষের সচেতনতা না বাড়লে শহরের নিকাশি ব্যবস্থা উন্নত করা যে কঠিন কাজ তা মেনে নিচ্ছেন মেয়র এবং মন্ত্রী। শহরের বুক চিরে যে সব খাল প্রবাহিত হয়েছে, সেগুলির দুই ধারের কিছু বাসিন্দা খালগুলিকে জঞ্জাল ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করছেন। আর তাতেই রুদ্ধ হচ্ছে জলের প্রবাহ। বাড়ছে শহর জুড়ে জল জমার প্রবণতা। শুধুমাত্র সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থার অভাবে গত বছর গঙ্গার জল উপচে গিয়ে প্লাবিত হয়েছিল শহর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সে বার সারা রাত পুরভবনে জেগে থাকতে হয়েছিল মেয়র-সহ মেয়র পারিষদদের। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় তার জন্য এ বার প্রাক বর্ষার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে সেচ দফতর, নগরোন্নয়ন দফতর এবং পুরসভা। বৃহস্পতিবার শহর ও শহরতলির নিকাশি নালা সাফসুতরোর হাল হকিকত নিয়ে বৈঠক হয় কলকাতা-সহ সল্টলেক এবং হাওড়ার বালিতে।

কলকাতা পুরভবনে মেয়র তথা মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন পুরসভার নিকাশি দফতরের মেয়র পারিষদ তারক সিংহ, পুর কমিশনার খলিল আহমেদ-সহ পুরসভা ও সেচ দফতরের অফিসারেরা।

পুরসভা সূত্রে খবর, কলকাতা শহরে বৃষ্টির জল বেরনোর মূল রাস্তা হল শহর জুড়ে থাকা ১২টি খাল। কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ জুড়ে থাকা সেই সব খালের মাধ্যমে শহরের জল বের হয়। সেচ দফতর সূত্রের খবর, খাল পরিষ্কার করা হলেও তা ক্রমশ ভরাট হতে থাকে। তাই বর্ষার আগেই খাল সংস্কারের কাজ ফের শুরু করতে চলেছে রাজ্য সরকার।

গত কয়েক বছর ধরে পূর্ব কলকাতার বেলেঘাটা খাল, কেষ্টপুর খাল, ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেলে সংস্কারের কাজ করেছিল সেচ দফতর ও নগরোন্নয়ন দফতর। কোটি কোটি টাকা খরচ করে খাল সংস্কার ও খালপাড়ের সৌন্দর্যায়নের কাজ হল। কিন্তু গত কয়েক মাসে ফের রুদ্ধ হয়ে পড়েছে খাল। এ বিষয়ে সেচমন্ত্রী রাজীববাবুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বর্ষার সময় নিকাশির হেল্পলাইন ওই খালগুলিকে অন্য সময়ে জঞ্জাল ফেলার জায়গা মনে করেন। তাই খাল পরিষ্কার করা হলেও তা ফের ভরাট হয়ে যায়।’’ জঞ্জাল ফেলা বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন? মন্ত্রীর জবাব, ‘‘মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা চলছে। এর বেশি তো আর কিছু করার নেই।’’ পুরসভার একাধিক অফিসারের কথায়, খালপাড়ে যাঁরা অবৈধ ভাবে রয়েছেন তাঁদের সরানোও হয়েছে। অন্যত্র পুনর্বাসনও দেওয়া হয়েছে। তার পরেও ফের সেই জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে।

সেচমন্ত্রীকে থামিয়ে মেয়র শোভনবাবু বলেন, ‘‘খালপাড়ে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের আর্থসামাজিক বিষয়টাও দেখতে হয়। মানবিকতার সঙ্গে। তাই কোনও কড়া পদক্ষেপ করা হয়নি।’’ তবে এমন চলতে থাকলে শহরের খাল কতটা পরিষ্কার থাকবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে বলে মনে করেন পুরকর্তারা। মেয়রের অবশ্য দাবি, শহরের খালগুলির ৮০ ভাগ পরিষ্কারই রয়েছে। গত বারের চেয়ে এ বার জল নিকাশি ব্যবস্থা অনেকটা উন্নত।

বেলেঘাটার এক বাসিন্দা গৌর সরকার বলেন, ‘‘খালের কচুরিপানা সরিয়ে ড্রেজিং করে নাব্যতা বাড়ানো হয়েছিল। খালপাড় বেড়া দিয়ে ঘেরা হয়েছে। কিন্তু তার পরে ফের খালপাড় আবর্জনায় ভরেছে। খালের অবস্থা আগের মতোই।’’ সামনেই বর্ষার মরসুম। ফলে বাসিন্দারা ফের মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ারও আশঙ্কা করছেন।

ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের অন্য পাড়ে সল্টলেকে ২, ৩, ৪ এবং ৫ নম্বর সেক্টরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেলেও ছবিটা একই। অনেক জায়গায় কচুরিপানায় ভরেছে। জলের প্রবাহ বন্ধ হয়েছে। আবার সল্টলেকের ১ ও ২ নম্বর সেক্টরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা কেষ্টপুর খালেও জলের প্রবাহ রুদ্ধ হয়েছে। ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেল রুদ্ধ হওয়ায় মূল সল্টলেক কিংবা সুকান্তনগরের বাসিন্দারা রীতিমতো ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, বর্ষার আগে যদি খালের সংস্কার করা হয়, তবে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ থেকে কিছুটা নিস্তার মেলে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় এমন সমস্যা।

অভিযোগ স্বীকার করে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেলেঘাটা খালের অবস্থা সম্পর্কে দফতর ওয়াকিবহাল। দ্রুত খালের কাজ করা হবে। কেষ্টপুর খালের সৌন্দর্যায়নের কাজ চলছে। সেই কাজকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনাও আছে।’’ নগরোন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিব দেবাশিস সেন বলেন, ‘‘দ্রুত খাল পরিষ্কার করা হবে।’’

এ দিনই বালির ১৬টি ওয়ার্ডের নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে বৈঠকে বসেন হাওড়ার পুর কর্তারা। এ বার বর্ষার সময় আপৎকালীন ব্যবস্থায় যাতে বালির নিকাশি ‘রোগ’-এর চিকিৎসা করা সম্ভব হয় তার জন্যই বৈঠকে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি মেয়র পারিষদ (নিকাশি) শ্যামল মিত্রের। পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, ‘‘বালির জমা জল বেরনোর নালাগুলিই অধিকাংশ জায়গায় বুজে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছে। বিগত পুরবোর্ডে যাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন তাঁরা এগুলি কেন দেখেননি তা জানি না।’’

ফি বছর বর্ষাতেই সাবেক বালি পুরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডেই কম বেশি জল জমার সমস্যা তৈরি হত। সব থেকে বেশি সমস্যা হত লিলুয়া অঞ্চলে। বালি এবং বেলুড়েও কয়েকটি ওয়ার্ডে সেই সমস্যা দেখা দেয়। নিকাশি নালা উপচে জমা জল বাসিন্দাদের ঘরেও ঢুকে যায়। হাওড়ার সঙ্গে বালি সংযুক্ত হওয়ার পরেই নিকাশি উন্নয়নে ১৬টি ওয়ার্ডে নালা, নর্দমার পলি তোলা থেকে শুরু করে নতুন করে তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। তাই আসন্ন বর্ষায় ফের পুরনো ভোগান্তি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করেই এ দিন হাওড়া পুরসভার বালি শাখা অফিসে সমস্ত কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন শ্যামলবাবু। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বালির বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়াও।

পুরসভা সূত্রের খবর, বৈঠকে লিলুয়ার পাঁচটি (৬২,৬৩,৬৪,৬৫,৬৬) ওয়ার্ড, বেলুড়ের দুটি (৫৬, ৫৮) ওয়ার্ডের আংশিক এবং বালির দুটি (৫২,৫৩) ওয়ার্ডের আংশিক এলাকাকে জল জমার জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের জায়সবাল হাসপাতালও ফি বছর বর্ষায় জলমগ্ন হয়ে পড়ে। লিলুয়ার মহানালা, বালি ও বেলুড়ের দিকে রেলের নিকাশি নালা এবং গঙ্গার সঙ্গে যুক্ত নালাগুলিতে সমস্যা রয়েছে।

এ দিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকেই বর্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বালি শাখা অফিসে ৩০ জনের একটি সাফাইকর্মীর দল থাকবে। কোথাও জল জমে রয়েছে খবর পেলে সেখানে গিয়ে তাঁরা যে নালাটি আবর্জনা জমে সমস্যা করছে তা সাফ করে দেবেন। এর পাশাপাশি পাম্পও রাখা থাকবে।

Drainage system Monsoon Awareness
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy