উন্নয়নের মধ্যে একটুকরো ‘চোনা’ লেগে আছে। আর শাসকদল জানে এই ‘চোনাই’ হয়তো ইভিএম মেশিনে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলতে পারে। তাই দক্ষিণ দমদম পুরসভার নির্বাচনের প্রচারের শেষ লগ্নে শাসকদল আর বিরোধী পক্ষের বক্তব্যে বারবার ঘুরে ফিরে আসছে সেই বাগজোলা খাল।
গত পাঁচ বছরে দক্ষিণ দমদম পুরসভায় যে লক্ষণীয় উন্নয়ন হয়েছে, তা বিরোধীরাও কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন। কলকাতা শহরের প্রথম এসি বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে নয়ানজুলি সংস্কার, উচ্চ বাতিস্তম্ভ অনেক কিছুই হয়েছে এই পুরসভায়। কিন্তু অভিযোগ, বাগজোলা খাল রয়েছে বাগজোলা খালেই। এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বাগজোলা খালের সংস্কার সে ভাবে না হওয়ায় এলাকায় জল জমার সমস্যা কিছু জায়গায় আগের থেকে আরও বেড়েছে। শুধু জল জমাই নয়, নোংরা খালের কালো জল থেকে দক্ষিণ দমদম পুরসভার বিভিন্ন এলাকায় দূষণও ছড়াচ্ছে। তাই প্রার্থীরা ভোট চাইতে এলে সরাসরি প্রশ্নের মুখে পড়ছেন, বাগজোলা খালের সংস্কার কবে হবে? একটু বর্ষাতেই জলবন্দি হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা থেকে কবে মুক্তি পাবেন তারা?
মধুগড়, জপুর, সুভাষনগর, বেদিয়াপাড়া, দমদম পার্ক, বাগজোলা খালের দু’পাশের এলাকা। বছরের পর বছর একটু বৃষ্টিতেই এই এলাকার লোকেরা জলবন্দি হয়ে যান। খাল আর রাস্তা মিশে যায়। মানুষ রাস্তায় নেমে খালের মাছ ধরেন। স্কুল কলেজে যাওয়া থেকে শুরু করে অফিস কাছারি, ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যত সবই বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, খালের সংস্কার নিয়ে গতবারের বামফ্রন্ট পরিচালিত বোর্ডও যেমন কিছু করেনি, সে রকম এ বারের তৃণমূল পরিচালিত বোর্ডও অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও তেমন কিছুই করেনি। ফলে সমস্যা রয়েই গিয়েছে। সাধারণ মানুষের বক্তব্য, খাল সংস্কারের কাজ সেচ দফতরের হলেও সেখানেও পুরসভারও কিছু দায়িত্ব থাকে। এলাকাবাসীদের প্রশ্ন, কেন খালের জলে এত ময়লা জমে থাকবে? কেন ভ্যাট গজিয়ে উঠবে বাগজোলা খালের পাশেই? জপুর এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘বর্ষাকালে এমন অবস্থা হয় যে আমাদের মনে হয় না যে আমরা পুরসভা এলাকায় থাকি। খালের কালো দূষিত জল ঘরে ঢুকে যায়। পানীয় জল পাই না। মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন।’’
খালের সমস্যা যে মানুষকে রীতিমতো ভোগাচ্ছে তা এই পুরসভায় ভোটের প্রচারে এসে ভালই টের পেয়েছেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাই দিন দুই আগে এলাকার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল ও এ বারের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী প্রবীর পালের প্রচার সভায় এসে তিনি তাঁর বক্তৃতায় জোর দেন বাগজোলা খালের সংস্কার নিয়েই। রাজীববাবু বলেন, ‘‘লোয়ার বাগজোলা খাল কাটার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। জপুর, বেদিয়াপা়ড়ার এলাকায় ফের খাল কাটার কাজ শুরু হবে। খুব দ্রুতই এই খালের জল তরতর করে বয়ে যাবে। বর্ষায় খাল অবরুদ্ধ হয়ে থাকবে না। জল জমার সমস্যাই আর থাকবে না।’’ রাজীববাবু আরও বলেন, ‘‘কেষ্টপুরে বাগজোলা খালের জল যাতে দ্রুত বেরোতে পারে তার জন্য আরও অতিরিক্ত ছ’টি লকগেট করার কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। এই লকগেটগুলো তৈরি হয়ে গেলে বাগজোলা খালের সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে।’’
রাজীববাবুই শুধু নয়, ভোট প্রচারে এসে বাগজোলা খাল নিয়ে কথা বলেছেন এ বারের আরেক তৃণমূল প্রার্থী তথা লেকটাউন, বাঙুর এলাকার বিধায়ক সুজিত বসুও। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভা নতুন করে নিকাশি নালা তৈরি করছে। নিকাশি নালার কাজ অনেকটাই শেষ। সামনের বর্ষাতেই তার সুফল পাবে মানুষ।’’ যদিও সুজিতবাবুর এই যুক্তি মানতে রাজি নন বিরোধীপক্ষরা। পুরসভার বিরোধীপক্ষ সিপিএম প্রার্থী জ্যোতির্ময় বক্সী বা ভাস্কর গলুইদের বক্তব্য, বাগজোলা খাল পুরো সংস্কার না করে নিকাশি নালা তৈরির কোনও অর্থ নেই। সংস্কার না হওয়ায় খালের জল এ বার বর্ষায় উপচে নিকাশি নালা দিয়ে এলাকায় ফিরে এলাকাকে প্লাবিত করে দেবে।