৩৩ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে, এখনও আগুন নেভেনি। তার উপর পুলিশ ও দমকলের ভূমিকা নিয়ে ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ সেই উত্তাপকে যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সোমবার সকালে বাগড়ি মার্কেটের ছবিটা তুলে ধরতে যেতেই তেড়ে আসতে দেখা গেল কয়েক জন পুলিশকর্মীকে। ছবি তুলবেন না! ফোন বন্ধ করুন— প্রায় হুমকির সুরেই এ সব কথা বলতে শোনা গেল তাঁদের। ঘটনাস্থলে হাজির ছিলেন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারও। তাঁকেও রীতিমতো হুমকি দিতে দেখা যায়। ব্যবসায়ীদের জোর করে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তাঁরা যাতে সংবাদমাধ্যমে কোনও কিছু বলতে না পারেন সে দিকটাও নজরে রাখা হচ্ছিল। খোদ পুলিশ কমিশনারই যদি মেজাজ হারিয়ে ফেলেন, তা হলে তাঁর বাহিনী কী কাজ করবে? প্রশ্ন ব্যবসায়ীদের।
দমকলের বিরুদ্ধে সময়মতো ঘটনাস্থলে না আসার অভিযোগ উঠেছিল আগেই। দমকলের ভূমিকা নিয়ে ব্যবসীয়াদের মধ্যে ক্ষোভ জমা হচ্ছিল। সেই ক্ষোভ যেন আরও চারিয়ে দিয়েছে পুলিশের ভূমিকা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, যে সামগ্রীগুলো অক্ষত রয়েছে সেগুলো বার করে আনার চেষ্টা করতেই রে রে করে তেড়ে আসছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বহুতলটির কাছেই ঘেঁষতে দেওয়া হচ্ছে না কাউকে। তাঁরা জানাচ্ছেন, এখনও যে সব সামগ্রী ভিতরে রয়েছে সেগুলো বার করে আনলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা কমতে পারে।
দেখুন সেই ভিডিয়ো
ইতিমধ্যেই প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গিয়েছে আগুনের গ্রাসে। তাই শেষ সম্বলটুকু বাঁচানোর চেষ্টায় তত্পর হয়েছিলেন ব্যবসায়ীদের অনেকেই। কিন্তু পুলিশের বাধার মুখে পড়ে ফিরে আসতে হয়। তাঁদের প্রশ্ন, পুলিশ যদি এই সময় সহযোগিতা না করে তা হলে আর কখন করবে?
আরও পড়ুন: এখনও জ্বলছে বাগড়ি মার্কেট, চার ও পাঁচ তলায় আগুনের হলকা, নেভানোর চেষ্টা জারি
বহুতলটির চারপাশে কয়েকশো মানুষ ভিড় করেছিল। সেই ভিড়ের মধ্যে থেকেই উত্কণ্ঠায় ভরা মুখগুলো যেন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। তাঁদের মধ্যেই এক জন সিদ্ধার্থ সাহা। বাগড়ির এক তলাতেই পাইকারী পেনের দোকানের মালিক। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ কোনও রকম সহযোগিতা করছে না। আটকে থাকা সামগ্রী বার করতেদিচ্ছে না। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সেগুলো বার করতে গেলেও জোর করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে পুলিশ। আরও এক ব্যবসায়ী গয়েশ জোশীর অভিযোগ, এ দিন সকালে বাড়ির নীচের তলাগুলিতে আগুন নিভে গিয়েছে। সেখান থেকে সামগ্রী বার করার চেষ্টা করতেই পুলিশ তেড়ে আসে।
আরও পড়ুন: আগুন লেগে গেল ছাড়পত্র দেওয়ার দু’মাসের মধ্যেই
ব্যবসায়ীদের আরও অভিযোগ, দমকল ৩০টি ইঞ্জিনের কথা বললেও ৭-১০টি ইঞ্জিন নিয়েই কাজ চালানো হচ্ছে। দমকল যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পুরোপুরি ব্যর্থ সে অভিযোগও তুলেছেন ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই। এক ব্যবসায়ী জানান, ছ’মাস আগেই বাগড়ির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় ছাড়পত্র দিয়েছিল পুরসভা। বাস্তবে এই বহুতলটির অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা মোটেই ঠিক ছিল না। আর এ নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ব্যবসায়ীমহলে। বাগড়ি জতুগৃহ হয়ে রয়েছে সেটা জানা সত্ত্বেও কী ভাবে সেই ছাড়পত্র দেওয়া হল?
(কলকাতা শহরের রোজকার ঘটনার বাছাই করা বাংলা খবর পড়তে চোখ রাখুন আমাদের কলকাতা বিভাগে।)