Advertisement
০২ মে ২০২৪

আগুন লেগে গেল ছাড়পত্র দেওয়ার দু’মাসের মধ্যেই

পুর আধিকারিকদের একাংশ সকালেই জানিয়েছিলেন, বাগড়ি মার্কেটে সার্বিক অগ্নিসুরক্ষা ব্যবস্থাই নেই। অনেক বার বলা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা কর্ণপাত করেননি বলেই তাঁদের অভিযোগ

আগুনের গ্রাসে: ধোঁয়ার মধ্যেই জলের ধারা। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

আগুনের গ্রাসে: ধোঁয়ার মধ্যেই জলের ধারা। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:২২
Share: Save:

এক বছরের মধ্যে পর্যাপ্ত অগ্নি-সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে, এই শর্তে বাগড়ি মার্কেটকে সাময়িক ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছিল কলকাতা পুরসভা। মাত্র দু’মাস আগে।

কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, গত জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় পুরভবনে ব্যবসায়ী সমিতি, দমকল, পুর প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। যে সমস্ত বাজারে অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই, তাদের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। বিপজ্জনক ৩২টি বিল্ডিং, যা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয় এবং যেখানে দোকান রয়েছে, সেগুলিকে শর্তসাপেক্ষ ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়। বাগড়ি মার্কেটের ক্ষেত্রেও বলা হয়, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে অগ্নিসুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার না করলে ভবিষ্যতে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হবে না। পরবর্তী দু’মাসে ছবিটা যে পাল্টায়নি তা স্পষ্ট।

তা হলে কেন এ ধরনের শর্তসাপেক্ষে লাইসেন্স দেওয়া হবে? রবিবার রাতে সদুত্তর মেলেনি। মেয়র তথা দমকলমন্ত্রী শোভন বলেন, ‘‘কয়েকটি বিপজ্জনক বাড়িকে (বাগড়ি মার্কেট) চিহ্নিত করেছিলাম। জতুগৃহের মতো অবস্থা। তাদের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা বসাতে বলা হয়েছিল। তা বসানোর দায়িত্ব তাদেরই। দৈনন্দিন নজরদারি সম্ভব নয়।’’

পুর আধিকারিকদের একাংশ সকালেই জানিয়েছিলেন, বাগড়ি মার্কেটে সার্বিক অগ্নিসুরক্ষা ব্যবস্থাই নেই। অনেক বার বলা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা কর্ণপাত করেননি বলেই তাঁদের অভিযোগ। আর নগরোন্নয়ন দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘পরিদর্শনেই ধরা পড়েছিল, সিঁড়ি দাহ্যবস্তুতে ঠাসা। খুপরি ঘরগুলোতে কী রয়েছে, ব্যবসায়ীরাই জানেন না।’’ এমন ক্ষেত্রে কেনই বা লাইসেন্স বাতিল করা হয় না?

ঘটনাস্থলে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

পুর কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ট্রেড লাইসেন্স পুরোপুরি না দেওয়ার আইনি ক্ষমতা পুরসভার লাইসেন্স দফতরের নেই। সে ক্ষেত্রে আগে মিউনিসিপ্যাল ট্রাইব্যুনালে ব্যাপারটা জানাতে হয়। তা ‘ঝক্কির ও সময়সাপেক্ষ’। তা-হলে আইন কেন সংশোধন করা হচ্ছে না? এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘ট্রেড লাইসেন্স আটকে রাখলেই ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হবেন। তা আর কে চান?’’

দাহ্য সুগন্ধির রাশি রাশি বোতল পুড়ে ছাই বাগড়ি মার্কেটে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

যদিও পুর কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ মানতে চাননি। এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘শর্তসাপেক্ষে লাইসেন্স দেওয়ার পিছনে মানবিক কারণও রয়েছে। এ শহরের যা আর্থ-সামাজিক অবস্থা, তাতে পুজোয় ব্যবসা বন্ধ থাকবে, এটা ভাবা যায় না।’’

আরও পড়ুন: ফের যেন অগ্নিপরীক্ষা, পুড়ে ছাই বাগড়ি বাজার, পুজোর আগে সর্বস্বান্ত বহু

পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অবশ্য জানালেন, শুধু এক বার পরিদর্শনের ভিত্তিতে ফায়ার লাইসেন্স দিলে হবে না। তাঁর কথায়, ‘‘দমকল অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে আপত্তি করলে, ছাড়পত্র না দিলে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ায় কড়াকড়ি করা যেতে পারে। কলকাতা পুরসভা প্রস্তাব দিলে বিবেচনা করব।’’ আইন সংশোধনের প্রস্তাব কি তাঁরা দেবেন? দমকলমন্ত্রী তথা মেয়রকে এ বিষয়ে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও জবাব দেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE