পুরসভার শিক্ষা বিভাগে দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শুনানি শুরু হয়েছিল একবছরেরও বেশি আগে। কিন্তু শুনানি প্রক্রিয়ায় তদন্তকারী আধিকারিকের অনুপস্থিতি ও এক অভিযুক্তের গরহাজিরা ঘিরে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। পুরসভারশিক্ষা বিভাগের আধিকারিকদের একাংশের প্রশ্ন, ‘‘তা হলে কি দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে পুরোটাই লোক দেখানো?’’
২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে কলকাতা পুরসভা পরিচালিত ৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শৌচাগার সংস্কারের নামে প্রায় ৩৭ লক্ষ টাকা গরমিলের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে আগেই। চার অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে শুনানি শুরু হয়েছে গত বছরের নভেম্বরে। পুরসভা সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত আটটি শুনানি হয়েছে। অভিযোগ, অভিযুক্ত চারজনের মধ্যে তিন জন শুনানিতে নিয়মিত হাজিরা দিলেও নানা অজুহাতে এক মহিলা আধিকারিকের গরহাজিরা নিয়ে ক্ষুব্ধ পুরকর্তৃপক্ষ। গোদের উপরে বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে শুনানি প্রক্রিয়ায় তদন্তকারী আধিকারিকের অনুপস্থিতি। পুরসভা সূত্রের খবর, রাজ্যসরকারের ওই আধিকারিক মাসকয়েক আগে অবসর নেওয়ায় গত সেপ্টেম্বর থেকে কোনও শুনানিই হয়নি। প্রথমত, ওইআধিকারিক অবসর নেওয়ার পরে শুনানি সংক্রান্ত কোনও নথিই পুর কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেননি। পরে পুরসভার তরফে ওই অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিককে তাগাদা দিয়ে নথি আনা হয়েছে। নতুনতদন্তকারী আধিকারিক নিয়োগ করতে পুরসভার পার্সোনেল বিভাগের তরফে পুর কমিশনারের কাছেফাইল পাঠানো হয়েছে। কিন্তু নতুন তদন্তকারী আধিকারিক কবে নিযুক্ত হবেন এবং ফের শুনানি কবে শুরু হবে, সে বিষয়ে ধোঁয়াশাতৈরি হয়েছে। যদিও পুরসভার এক আধিকারিকেরআশ্বাস, ‘‘নতুন তদন্তকারী আধিকারিক নিযুক্ত করে শীঘ্রই শুনানি শুরু হবে।’’
প্রসঙ্গত, পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শৌচাগার সংস্কারের নামেমোটা টাকা দুর্নীতির অভিযোগে আগেই পুর শিক্ষা বিভাগের তদানীন্তন চিফ ম্যানেজার, ম্যানেজার, এক পুর আধিকারিক এবং এক কর্মীকেকারণ দর্শাতে বলেছিল পুরসভা। কিন্তু, তাঁদের উত্তরে সন্তুষ্ট না হওয়ায় চার জনের বিরুদ্ধে গত বছরের জুলাই মাসে চার্জশিট পেশ করা হয়েছিল। পরে পুরসভার‘ডিসিপ্লিনারি প্রসিডিংস সেল’-এ অভিযুক্তদের শুনানি শুরু হয় গত বছরের নভেম্বরে।
পুরসভা সূত্রের খবর, শিক্ষা বিভাগের তদানীন্তন ম্যানেজার অসুস্থতার কারণ দেখিয়েএকাধিক বার শুনানিতে গরহাজির ছিলেন। সাক্ষীদের ডেকে পাঠানোর দিনে গরহাজির থেকেছেন তিনি। তাঁর ভূমিকায় পুর কর্তৃপক্ষ খুশি নন। উল্লেখ্য, বছর দুয়েক আগে ওই মহিলা আধিকারিকনিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইমেলে অভিযোগজানিয়েছিলেন, কেবল মুসলিম হওয়ায় তাঁকে হেনস্থা করা হচ্ছে। ওই মহিলা আধিকারিকের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তখন মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন,‘‘ধর্মের দোহাই দিয়ে কেউ পার পাবেন না। দুর্নীতির সঙ্গে পুরসভা কোনও ভাবেই আপস করবে না।’’ বাম প্রভাবিত ‘কলকাতা পৌর শিক্ষক ও কর্মী সঙ্ঘ’-এর সাধারণ সম্পাদক অশোককুমার চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘শুনানিতে এক জন গরহাজির থাকছেন।আবার চার মাস আগে সরকারি আধিকারিক অবসর নিলেও তাঁর পরিবর্তে তদন্তকারীআধিকারিক পদে এখনও কাউকে নিযুক্ত করা হল না। এর থেকেই প্রমাণিত হয়, পুর কর্তৃপক্ষ আদতে পাহাড়প্রমাণ এই দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে চাইছেন।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)