Advertisement
E-Paper

চপ-মুড়ি, কেটলি নিয়ে চাকরির দাবিতে এসএসসির প্রার্থীদের মিছিল! বুধবার চা আর ঘুগনি বিক্রির কথা বলেছিলেন মমতা

বৃহস্পতিবার শহরে দু’টি মিছিল হয়েছে। প্রথমটি সল্টলেকে বিকাশ ভবনের সামনে দৃষ্টিহীন ও প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রার্থীদের মিছিল। দ্বিতীয়টি শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত এসএসসি-র ‘বঞ্চিত’ চাকরিপ্রার্থীদের মিছিল।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৪:৪৩
(বাঁ দিকে) চপ-মুড়ি হাতে মিছিলে এক চাকরিপ্রার্থী। বৃহস্পতিবার ধর্মতলায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) চপ-মুড়ি হাতে মিছিলে এক চাকরিপ্রার্থী। বৃহস্পতিবার ধর্মতলায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বুধবার ব্যবসায়ীদের সম্মেলনে চা এবং ঘুগনি বিক্রির নিদান দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর দিনই পথে নামলেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের কারও হাতে চপ-মুড়ির ঠোঙা, কারও হাতে চায়ের কেটলি। দাবি, তাঁরা ‘বঞ্চিত’। তাঁদের হকের চাকরি বিক্রি হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান চা বিক্রি করতে বলায় তাঁরা নিরুপায় হয়ে পথে নেমেছেন। বিষয়টি যে ‘প্রতীকী’, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য জুড়ে যাওয়ায় সেটি বাড়তি গুরুত্ব পেয়ে গিয়েছে।

বৃহস্পতিবার শহরে চাকরিপ্রার্থীদের দু’টি মিছিল হয়েছে। প্রথমটি সল্টলেকে বিকাশ ভবনের সামনে দৃষ্টিহীন ও প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রার্থীদের মিছিল। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাঁরা বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের দাবি, যে পদে যে ভাবে চাকরি করছিলেন, সেই পদ এবং চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু দেখা মেলেনি। বিকাশ ভবনের বাইরে দাঁড়িয়ে ক্ষোভ উগরে দেন দৃষ্টিহীন প্রার্থীরা।

দ্বিতীয় মিছিলটি এসএসসি-র নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যোগ দেওয়া নতুন চাকরিপ্রার্থীদের কর্মসূচি। তাঁরা এই প্রথম চাকরির পরীক্ষা দিয়েছেন। আগে কখনও চাকরি করেননি। তাঁদের অভিযোগ, পুরনো ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের সুযোগসুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই হকের চাকরি থেকে তাঁরা বঞ্চিত। কমিশনের শূন্যপদ বৃদ্ধির দাবি নিয়ে মিছিল করছেন এই নতুন প্রার্থীরা। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শোনার পর তাঁদেরই কেউ কেউ চা-চপ-মুড়ি নিয়ে মিছিলে শামিল হয়েছেন।

বুধবার নেতাজি ইন্ডোরে ব্যবসায়ীদের একটি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেখানে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প নিয়ে রাজ্য সরকারের একাধিক ভাবনা এবং উদ্যোগের কথা বলেন তিনি। সেই প্রসঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘আমি যদি বলি ১০০০ টাকা নাও, দুটো চায়ের কেটলি কেনো। ঘর থেকে কিছু চা পাতা নিয়ে চা তৈরি করো। বিস্কুট নাও। বৌকে দিয়ে ঘুগনি তৈরি করে আনো। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াও, বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়াও, দেখো তা কত টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়। কোনও কাজ ছোট নয়। সব কাজই বড়।’’ পাশাপাশিই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চা বিক্রির প্রসঙ্গ টেনে মমতা আরও বলেছিলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন, তিনি চা বেচতেন, তখন তো তাঁকে নিয়ে কিছু বলা হয় না! আমি চায়ের কথা বললে অনেকে আমাকে ক্ষ্যাপায়। কখনও জীবনে হতাশ হবেন না। স্বপ্ন দেখতে শিখুন।’’

তার পরদিনই শহরের রাজপথে মিছিল বেরিয়েছে। সেই মিছিল থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষও করা হয়েছে। কেটলি হাতে এক মিছিলকারী যেমন বলেন, ‘‘এ ছাড়া আমাদের আর গতি নেই। মুখ্যমন্ত্রীই বলছেন চপ-মুড়ি বিক্রি করতে। হাজার টাকা করে ভাতা দিচ্ছেন। ব্যবসার পরিকল্পনা করে দিচ্ছেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এবং তাদের অভিভাবকদের বলব, আপনারা পথে নামুন। না হলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার।’’ আর এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী চপ বিক্রির নিদান দিয়েছেন। আমরা ওঁর খেলায় হেরে গিয়েছি। উপায় নেই বলে দিদির কথা মেনে নিয়ে নতমস্তকে রাস্তায় নেমেছি। আমাদের হকের চাকরি বিক্রি হয়ে গিয়েছে। ঘুরপথে চাকরি যাঁরা পেয়েছিলেন, তাঁরা পুরো নম্বর পেয়েছেন। আসলে তাঁদের কাছে আবার চাকরি বিক্রি করা হয়েছে।’’

অতীতেও একাধিক বার চা কিংবা চপ-ঘুগনি বিক্রির নিদান দিয়েছেন মমতা। নিজস্ব ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক উদ্যোগের মাধ্যমে স্বনির্ভর হওয়ার বার্তা দিতেই তাঁর ওই পরামর্শ। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সেই বার্তা বরাবরই বিরোধীদের সমালোচনার কেন্দ্রে থেকেছে। তাঁদের দাবি, রাজ্যে বেকারত্বের হার বাড়ছে। দুর্নীতির কারণে চাকরি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তাই যোগ্যদের চাকরি দিতে না পেরে চা-তেলেভাজার দোকান খোলার পরামর্শ দিচ্ছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার চাকরিপ্রার্থীদের মিছিলেও কেটলি, চা, চপ-মুড়ি রাখা হয়েছিল সেই প্রতীকী প্রতিবাদের অঙ্গ হিসাবেই।

এসএসসি-র প্রার্থীরা শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করেন। তাঁদের অভিযোগ, অভিজ্ঞতার জন্য কমিশন ১০ নম্বর বা়ড়তি দেওয়ায় নতুন পরীক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয়েছেন। তাই বাড়তি আরও অন্তত এক লক্ষ শূন্যপদ তৈরি করার দাবি জানিয়েছেন কেউ কেউ। ১০ নম্বর বাড়তি প্রসঙ্গে এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘‘১০ বছর ধরে এসএসসি-র জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। এখন কমিশন ১০ নম্বর দিয়ে আমাদের বঞ্চিত করল। বেঁচে থাকার জন্য তাই আমাদের হাতে চপ-মুড়ি আর চা।’’

SSC Protest Mamata Banerjee TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy