E-Paper

মনের ক্ষত মুছে বাঁচার টানে স্পর্ধিত গানজীবন

গত ২১ জুন, বিশ্ব সঙ্গীত দিবসের আগে পর পর লুম্বিনী পার্ক হাসপাতাল আর পাভলভে আবাসিকদের গানের ক্লাস নিয়েছেন ভাস্কর। নেন প্রতি সপ্তাহেই।

ভাস্কর মিত্র। নিজস্ব চিত্র

ভাস্কর মিত্র। নিজস্ব চিত্র

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২৫ ০৮:৫৮
Share
Save

হারমোনিয়ামে মেহেদি হাসান ধরেছেন ভাস্কর মিত্র! ‘রানজিশ হি সহি দিল কী দুখানে কে লিয়ে আ…’! একটু থেমে বললেন, “জীবনে সবারইদুঃখ, কষ্ট থাকে! কিন্তু এটা তো ইমন রাগের গান। গজ়ল মানে শুধু প্রেম, বিরহ নয়… গানে রাগের পেখম মেলা আরও নিখুঁত করার কথাই ভাবি আমি!”

গত ২১ জুন, বিশ্ব সঙ্গীত দিবসের আগে পর পর লুম্বিনী পার্ক হাসপাতাল আর পাভলভে আবাসিকদের গানের ক্লাস নিয়েছেন ভাস্কর। নেন প্রতি সপ্তাহেই। জীবনযুদ্ধে কোণঠাসা, মূল স্রোত থেকে ছিটকে যাওয়া মনোরোগীদের সান্নিধ্যে নিজের মুখও দেখতে পান ভাস্কর। পাভলভে বছরখানেক এবং তার পরে সরকারি জীবন সহায়তা কেন্দ্র ‘প্রত‍্যয়’-এ আরও সাত মাস কাটিয়ে জীবনের খাদের অতল থেকে উঠে এসেছেন। বছরখানেক হল কলকাতার বাড়িতে ফিরে গান শেখানো শুরু করেছেন, বিক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান করছেন। গজ়ল, নজরুলগীতি, ভজন, বাংলা আধুনিক গানের জগতে নতুন করে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছেন তিনি।

“গোড়ার অগোছালো, অবসাদের ভাবটা একটু কাটার পরেই বোঝা গিয়েছিল, ভাস্কর এক জন নিখাদ কণ্ঠশিল্পী! সেটাই ওঁর পরিচয়”, বলছিলেন হাসপাতালে ও ‘প্রত‍্যয়’-এ তথাকথিত মানসিক রোগীদের ক্ষমতায়নের শরিক, অঞ্জলি সংস্থার কর্ণধার রত্নাবলী রায়। তাঁর কথায়, “কোনও একটা ব‍্যক্তিগত সঙ্কটে ভাস্করের ভিতরের সেই আমিটা যেন ইঁদুরের গর্তে ঢুকে গিয়েছিল। তা কুড়িয়ে নিতে সাহায‍্য করা দরকার ছিল।”

পাভলভের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে ভাস্করের ‘বন্দেমাতরম’ শুনেই হাসপাতালে সাড়া পড়ে যায়। পাভলভের তৎকালীন মেডিক্যাল সুপার মৃগাঙ্কমৌলী কর সহকর্মীদের নিয়ে উদ‍্যোগী হয়ে ভাস্করের জন‍্য হারমোনিয়ামের বন্দোবস্ত করেন। মৃগাঙ্ক বলছেন, “প্রতিভার স্বীকৃতি ভাস্করের ক্ষেত্রে সুস্থ হয়ে জীবনে ফেরার জেদটা বাড়িয়ে দেয়।” পাভলভ থেকে প্রত‍্যয়-এ ফেরার পরেও হারমোনিয়াম এনে ভাস্করের কাজ খোঁজায় উৎসাহ দেওয়া কিংবা তাঁর প্রিয়জনের সঙ্গে সংযোগ তৈরিতে সাহায‍্য করা গতি পেয়েছিল। ভাস্করও তখন থেকেই নিজের শিল্পী সত্তাটির উন্মোচনে ব‍্যস্ত হয়ে পড়েন। সুরের ডানায় ভর দিয়েই মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর কিছুটা শক্ত জমি আজ তিনি খুঁজে পেয়েছেন।

কাকা পল্লব মিত্রের কাছে থাকেন পিতৃমাতৃহীন, চল্লিশোর্ধ্ব ভাস্কর। চিন্ময় লাহিড়ী, সাগিরুদ্দিন খান, মেহেদি হাসানদের শিষ‍্যা, ভাস্করের গানের গুরুমা কুমকুম ভট্টাচার্য বলেন, ছেলেটির গানের প্রতি টান এবং চর্চিত কণ্ঠের কথা। পাভলভে গান শেখানোর সময়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দিদি শুক্লা দাস বড়ুয়া, ভাস্করের অভিভাবকপ্রতিম ‘শুক্লাদি’ অবশ‍্য সস্নেহে একটু বকেনও। বলেন, ‘‘তোমার ছাত্রছাত্রীদের হাসপাতালে বন্দি জীবনে কিছু আনন্দের গানই বরং বেশি করে শেখাও!’’

জীবনের দুঃসময়েও পথে ঘুরতে ঘুরতে আপন মনে শুদ্ধকল‍্যাণ রাগ গাইতেন ভাস্কর। চরম বিপর্যয়ে একমাত্র সুরই তাঁকে ছেড়ে দেয়নি। সুরকে জীবনে ফেরার মন্ত্র করে বাঁচার তাগিদের আর এক নামই এখন ভাস্করের রোজকার গানযাপন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Pavlov Hospital Lumbini Park Mental Hospital

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।