সুরক্ষাকে থোড়াই কেয়ার। শহর দাপাল বাইক বাহিনী। নিজস্ব চিত্র
সপ্তমী পড়তেই বদলে গিয়েছিল কলকাতার চেহারা! পুজোয় দিনে-রাতে ভিড়ে ঠাসা রাস্তাতেও গাড়ি চলাচল করেছে। ভরদুুপুরেও সিগন্যাল ভাঙতে দেয়নি পুলিশ। ভিড়ের দাপটে কোথাও অল্পবিস্তর যানজট হলেও তড়িঘড়ি সামলে দেওয়া হয়েছে। শহরবাসীরা বলছেন, উৎসব কাপে লেটার মার্কস পেয়েই পাশ করেছে পুলিশ। কিন্তু সেই সাফল্যে কিছুটা হলেও দাগ ফেলেছে মহানগরের মোটরবাইকের দাপট।
মূল শহরে এ বার বহু হেলমেটহীন, বেপরোয়া মোটরবাইক আরোহী নজরে এসেছে। বাইপাস, রাজারহাট বা লেকটাউনে গেলেও মালুম হয়েছে মোটরবাইকের রেসের দাপট। কখনও বিপজ্জনক ভাবে গাড়িকে ওভারটেক, কখনও বা গাড়ির সামনে ফিল্মি কায়দায় স্টান্টও দেখিয়েছেন বাইকচালকেরা!
পুলিশ সূত্রের খবর, চতুর্থী থেকে দশমী পর্যন্ত কলকাতা পুলিশ এলাকায় পথ দুর্ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মোটরবাইক দুর্ঘটনার বলি আট জন। অষ্টমীর রাতে শুধু বাঙুর হাসপাতালেই ৫০ জন মোটরবাইক-আরোহীর চিকিৎসা হয়েছে। পুজোয় শহরের যানবাহন ও ভিড় নিয়ন্ত্রণে দক্ষ পুলিশ এ বার মোটরবাইকের দাপট কেন সামলাতে পারল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নাগরিকেরা। যদিও কলকাতার পুলিশকর্তারা বলছেন, পুজোর ভিড়ে অনেক সময়েই মোটরবাইক ধরা যায়নি। সিসিটিভির ছবি দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সপ্তমী রাত সাড়ে বারোটা। সল্টলেক-কাদাপাড়া মোড় থেকে গাড়িতে বাইপাস হয়ে উল্টোডাঙার দিকে যাচ্ছিলেন কমল দাশগুপ্ত। পাশ দিয়ে তীব্র গতিতে ওভারটেক করছিল একের পর এক মোটরবাইক। কমলবাবুর কথায়, “প্রতিটি বাইকেই তিন জন। এবং কারওরই হেলমেট নেই।” বিধান শিশু উদ্যানের কাছে গিয়ে বেশ কয়েকটি মোটরবাইক দাঁড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় খানাপিনা। কিছুটা দূরেই তখন নির্লিপ্ত ভাবে দাঁড়িয়ে দুই পুলিশকর্মী।
পুজোয় মোটরবাইক রেস চলেছে রাজারহাট এক্সপ্রেসওয়ে, ভিআইপি রোড, বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতেও। নবমীর রাতে রাজারহাট দিয়ে গাড়িতে ভিআইপি রোডের দিকে যাচ্ছিলেন সজল গুপ্ত। দু’টি মোটরবাইক তাঁদের ওভারটেক করে ফিল্মি কায়দায় স্টান্ট দিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে। সজলবাবু বলেন, “মোটরবাইক দুটো সামনের চাকায় ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। গাড়ি সামাল দিতে গিয়ে আমার গাড়িচালক প্রায় রেলিংয়ে ধাক্কা মারছিলেন!” লোকে বলছেন, কলকাতা পুলিশ এলাকায় যানশাসনের চাপে মোটরবাইকের এমন দৌরাত্ম্য ছিল না। তাই কলকাতা পুলিশের নাগালের বাইরে বেরিয়েই কার্যত লাগামছাড়া হয়ে ওঠেন বাইকচালকেরা।
বাদ যায়নি খাস কলকাতাও। সপ্তমীর রাতে লেক এলাকায় মোটরবাইক নিয়ে কসরত করেছেন তিন মত্ত যুবক। হেলমেটের বালাই ছিল না। সুকান্ত সেতু পেরিয়ে বাইপাসের দিকে এগোতেই পিছনে বান্ধবীকে বসিয়ে বেপরোয়া গতিতে বাইক ছোটাতে দেখা গিয়েছে যুবকদের। একই ছবি ছিল রাতের আমহার্স্ট স্ট্রিট-সহ উত্তর ও মধ্য কলকাতার কিছু এলাকাতেও।
বেপরোয়া মোটরবাইকে কেন লাগাম টানতে পারল না পুলিশ?
বিধাননগর পুলিশের এক কর্তা বলেন, রাজারহাটে গার্ডরেল ছিল। ভিআইপি রোড, যশোহর রোডে ছিল পিকেট। কিন্তু কোনওটাই কাজ করেনি। ট্রাফিক সামলাতে দক্ষ কলকাতা পুলিশও বা মোটরবাইক সামলাতে পারল না কেন?
লালবাজারের এক ট্রাফিক কর্তার বক্তব্য, মোটরবাইকের এই দৌরাত্ম্য কমানো প্রয়োজন। কিন্তু পুজোয় কলকাতায় লাগামছাড়া ভিড় হয়। তার মধ্যে বেপরোয়া বাইক ধরতে গেলে গোলমাল বাধতে পারে। পালাতে গিয়ে কোনও পথচারীকে চাপাও দিতে পারেন মোটরবাইক চালকেরা। তাতে আরও বিপত্তি বাড়বে। “দোলের সময়ে রাস্তা ফাঁকা থাকে। তাই মোটরবাইক ধরা অনেক সহজ। কিন্তু পুজোয় সেটা করা যায় না।”বলছেন লালবাজারের এক শীর্ষকর্তা। তা হলে কি এই দৌরাত্ম্যে রাশ টানা যাবে না?
ট্রাফিক কর্তাদের দাবি, কলকাতায় কয়েকশো সিসিটিভিতে বেপরোয়া মোটরবাইকের ছবি তোলা হয়েছে। তা দেখে এ বার মামলা রুজু করা হবে। সংশ্লিষ্ট বাইকের মালিকের কাছে জরিমানার চিঠিও যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy