Advertisement
২১ মে ২০২৪

গর্ত কার, ঝুলছে সেতুর সারাই

গর্ত কার? এই প্রশ্নে দড়ি টানাটানিতেই পার হয়ে গিয়েছে দু’মাস। রেল, রাজ্য পূর্ত দফতর ও হাওড়া জেলা প্রশাসনের মধ্যে চিঠি চালাচালি হয়েছে অন্তত চার বার।

এখনও এই হাল। — নিজস্ব চিত্র

এখনও এই হাল। — নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ০১:১৯
Share: Save:

গর্ত কার?

এই প্রশ্নে দড়ি টানাটানিতেই পার হয়ে গিয়েছে দু’মাস। রেল, রাজ্য পূর্ত দফতর ও হাওড়া জেলা প্রশাসনের মধ্যে চিঠি চালাচালি হয়েছে অন্তত চার বার। কিন্তু এখনও প্রত্যেকেই একে-অন্যের ঘাড়ে দায় ঠেলতে ব্যস্ত। যার জেরে ভেঙে যাওয়ার বহাল তবিয়তে গর্ত হাজির হাওড়ার বাঙালবাবু সেতুর ফুটপাথে।

মাস দুয়েক আগে সেতুর ফুটপাথের ওই গর্ত দিয়ে গলেই নীচে পড়ে যান এক বৃদ্ধ। হাওড়া জেলা হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই চলছে টানাপড়েন। রাজ্য পূর্ত দফতরের বক্তব্য, সেতুর ফুটপাথ সারাই করছিল পূর্ব রেল। তা চলাকালীন একটি সিমেন্টের স্ল্যাব ভেঙে যায়। কিন্তু রেল তা না সারিয়েই কাজ বন্ধ করে চলে যায়। আর সেই গর্ত দিয়ে গলে ৩০ ফুট নীচে পড়ে যান ওই বৃদ্ধ। পূর্ব রেলের কর্তাদের পাল্টা বক্তব্য, যেখানে স্ল্যাবটি ভেঙেছে, সেটি রাজ্য পূর্ত দফতরের এলাকা। কারণ ওই জায়গা থেকেই সেতুর অ্যাপ্রোচ রোডের ফুটপাথ শুরু হয়েছে। তাই সেটি সারাইয়ের দায়িত্ব পূর্ত দফতরের।

মাত্র সাড়ে চার বর্গফুটের গর্ত নিয়ে কাজিয়া মেটাতে উদ্যোগী জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাশও খোঁজ নিয়ে রায় দেন, ওই গর্ত সারানো উচিত রেলের। কারণ এলাকাটা রেলেরই। ইতিমধ্যে রেল পূর্ত দফতরের সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়, বাঙালবাবু সেতুর ওই জায়গায়টি রক্ষণাবেক্ষণ করে পূর্ত দফতর। তাদেরই গর্ত সারাতে হবে।

পাল্টা চিঠি দিয়ে রাজ্য পূর্ত দফতর জানিয়ে দেয়, যে জায়গায় গর্ত হয়েছে, তার নীচে রেলের জায়গা। নিয়মানুযায়ী তাই উপরের অংশ কোনও ভাবেই পূর্ত দফতরের হতে পারে না। তা ছাড়া, রেলই দীর্ঘকাল ধরে ওই সেতুর ফুটপাথ রক্ষণাবেক্ষণ করে এসেছে। পূর্ত দফতরের পাশাপাশি হাওড়ার জেলা প্রশাসনের তরফেও রেলকে চিঠি দিয়ে গর্ত মেরামতির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়।

চিঠি চালাচালি এখানেই শেষ হয়নি। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, পাল্টা যুক্তি দিয়ে ফের রেলও পূর্ত দফতর ও জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, ওই গর্ত রেলের জন্য হয়নি। সারানোও তাঁদের কাজ নয়।

কিন্তু এই টানাপড়েনের কি মীমাংসা হবে না? ফের যদি কেউ ওই গর্তে পড়ে জখম হন, তার দায়িত্ব কে নেবে?

হাওড়ার পূর্ত দফতরের এগ্‌জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শমীজিৎ মাইতি বলেন, ‘‘দফতরের পক্ষ থেকে আগেই রেলকে চিঠি দিয়ে সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছিল। রেল উদ্যোগী না হলে আমাদের কিছু করার নেই।’’

হাওড়ার ডিআরএম আর বদ্রিনারায়ণ বলেন, ‘‘মাস দুয়েক আগের ওই দুর্ঘটনার দায় এড়াতেই পূর্ত দফতর ওই গর্ত সারাতে চাইছে না। কিন্তু সেই দায় আমরা নেব কেন? ফুটপাথের ওই জায়গা তো রেলের নয়। তবে রাজ্য পূর্ত দফতর শেয পর্যন্ত না সারালে জনস্বার্থে ভেবে দেখতে হবে, কী করা যায়।’’

সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে গিয়ে হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তীও শর্ত আরোপ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুরসভা নিজে থেকে ওই গর্ত সারিয়ে দিতে পারে। কিন্তু এর আগে ওই সেতুতে রং করতে গেলে রেল আরপিএফ দিয়ে আমাদের কর্মীদের তাড়া করেছিল। তাই রেলকে একটা চিঠি দিলেই আমরা গর্ত মেরামতির কাজ করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

accident Bridge
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE