হেলমেট ছাড়াই বিপজ্জনক ভাবে বাইকে সওয়ার, রয়েছে দু’টি শিশুও বেহালার জেমস লং সরণিতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক, দীপঙ্কর মজুমদার।
স্কুটারের আসনে তিন জন। চালকের সামনে, পা রাখার জায়গায় আবার একটি শিশুকে দাঁড় করানো হয়েছে। সকলেরই রং মেখে এমন অবস্থা যে, মুখ চেনাই দায়! কারও মাথাতেই হেলমেটের বালাই নেই। বেসামাল অবস্থায় দ্রুত গতিতে যেতে যেতে মাঝেমধ্যেই স্কুটার থেকে আকাশে আবির উড়িয়ে দিচ্ছেন মাঝে বসে থাকা তরুণী।
মঙ্গলবার বেলার দিকে মানিকতলা রোডের এই দৃশ্য বিক্ষিপ্ত কোনও ঘটনা নয়। শহরের সর্বত্রই এ দিন দেখা গিয়েছে দোল উৎসব উদ্যাপনের নামে বিধি ভাঙার এমন একাধিক ঘটনা। পথের বিধি যেমন শিকেয় উঠেছে, তেমনই রাস্তায় নেমে চলেছে বেপরোয়া যাপন। অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ সবটা দেখেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। নাগরিকদের একটি বড় অংশেরই প্রশ্ন, যে কোনও উৎসবকে কেন্দ্র করে পথের বিধি ভাঙার এই প্রবণতা শক্ত হাতে দমন করা হয় না কেন? আর কবে রাস্তায় কঠোর হবে পুলিশ? লালবাজার যদিও নজরদারিতে ঢিলেমির অভিযোগ মানতে চায়নি। তাদের বরং দাবি, বিধি বলবৎ করতে এ দিন রাস্তায় অতিরিক্ত বাহিনী নামানো হয়েছিল। অতিরিক্ত বাহিনী নামানো হয়েছে ট্র্যাফিক পুলিশের তরফেও।
পুলিশের তরফে অতিরিক্ত বাহিনী নামিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার কথা বলা হলেও এ দিন শহরের বড় রাস্তা থেকে অলিগলি— সর্বত্রই বিধি ভাঙার ছবি ধরা পড়েছে। কোথাও মত্ত অবস্থায় থাকা চালকের আসনের পিছনে একাধিক জনকে বসিয়ে দেদার বাইক ছোটাতে দেখা গিয়েছে, কোথাও আবার চলেছে রাস্তা আটকে রং খেলা। দোল উদ্যাপনের নামে তারস্বরে বক্স বাজিয়ে হইহুল্লোড়ও চলেছে বহু জায়গায়। এমনকি, জোর করে রং মাখানোর হাত থেকেও রেহাই পাননি সকাল সকাল কাজে বেরোনো জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের একাংশ। এ দিন বেলার দিকে ইএম বাইপাসে জনা চারেক আরোহীকে নিয়ে ছুটছিল একটি বেপরোয়া বাইক। যা দেখিয়ে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী তাঁর সহকর্মীকে বললেন, ‘‘বাইকের গতি দেখেছেন! আজ যা অবস্থা, মনে হচ্ছে, সামনে দাঁড়ালে আমিও রক্ষা পাব না! নিয়মকানুন সব আবার এক দিন পর থেকে হবে।’’ যাদবপুরের গলিতে আবার দেখা গেল, প্রবল জোরে গান চালিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটছে একটি গাড়ি। রং খেলার ভিড় দেখে গাড়ি থেকে রংবেলুন ছুড়তেও দেখা গিয়েছে এ দিন। এ ছাড়া, বিনা হেলমেটে বাইক ছোটানো, দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর সঙ্গে মত্ত অবস্থায় স্টিয়ারিং ধরা তো ছিলই।
এ দিন দোল উপলক্ষে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে চলেছে রং খেলা। বিভিন্ন আবাসন চত্বরেও রং খেলার ছবি ধরা পড়েছে। নাগরিকদের একটি বড় অংশেরই অভিযোগ, বহু জায়গাতেই উদ্যাপনের নামে বক্স বাজিয়ে গানের তাণ্ডব চালানো হয়েছে। বেলেঘাটা রোডে সকাল থেকে তারস্বরে চলা গানের দাপটে কার্যত অসুস্থ হওয়ার জোগাড় এক প্রৌঢ়ের বক্তব্য, ‘‘এঁদের যদি নিজের অসুবিধার কথা বলতে যাই, তা হলে এমন জ্ঞান দেবে যে, মনে হবে ভুলটা আমিই করে ফেলেছি! প্রতি বছরই এক জিনিস হয়। পুলিশকে জানিয়েও কোনও লাভ হয় না।’’
শুধু বেলেঘাটা বা উত্তর কলকাতার বিভিন্ন এলাকা নয়, দোলকে কেন্দ্র করে শব্দের তাণ্ডব চলেছে দক্ষিণেও। লালবাজারের এক পুলিশকর্তা যদিও বলছেন, ‘‘সারা শহরেই কড়া নজরদারি ছিল। বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে, পুলিশ সক্রিয়ই ছিল। পুলিশের তরফে সব কিছু যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy