Advertisement
E-Paper

অগ্নিদগ্ধ মেয়েকে নিয়ে সাত হাসপাতাল ঘুরলেন বাবা-মা! শেষে ঠাঁই আর জি করে

নতুন বাড়িতে গৃহপ্রবেশ হয়েছে। মেয়েকে ঘরে রেখে পাশের বাড়িতে পুজোর প্রসাদ দিতে গিয়েছিলেন মা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৯ ০০:৫৫
হয়রান: আর জি করে দিয়ার বাবা-মা। শনিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী। (ইনসেটে) দিয়া দাস

হয়রান: আর জি করে দিয়ার বাবা-মা। শনিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী। (ইনসেটে) দিয়া দাস

নতুন বাড়িতে গৃহপ্রবেশ হয়েছে। মেয়েকে ঘরে রেখে পাশের বাড়িতে পুজোর প্রসাদ দিতে গিয়েছিলেন মা। ওই ঘর থেকেই কালো ধোঁয়া বেরোতে দেখে ছুটে গিয়ে প্রতিবেশীরা দেখেন, খাট ধরে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সাড়ে পাঁচ বছরের মেয়ে। গোটা শরীর জ্বলছে তার। গায়ের পোশাক খসে গিয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ এই ঘটনার পরেই দিয়া দাস নামের ওই শিশুটিকে বাঁচাতে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটে বেড়াতে হয়েছে গোবরডাঙা ইছাপুর এলাকার কয়েক ঘর বাসিন্দাকে। হাবড়া হাসপাতাল, বারাসত হাসপাতাল হয়ে কলকাতার একাধিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও মেয়েকে ভর্তি করানো যায়নি বলে অভিযোগ তার পরিবারের। অবশেষে শনিবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে অগ্নিদগ্ধ শিশুটিকে নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন দিয়ার আত্মীয়েরা। তার পরেই শিশুটিকে ভর্তি নেন আর জি কর কর্তৃপক্ষ। দিয়ার বাবা রঞ্জিত দাস বলছেন, ‘‘মেয়েটা মরেই যেত। এর নাম কলকাতা? এখানে এত ঝামেলা করে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়?’’

রঞ্জিতবাবু জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ অগ্নিদগ্ধ দিয়াকে প্রথমে হাবড়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে বারাসত হাসপাতালে রেফার করা হয়। রাতটুকু বারাসত হাসপাতালে কাটানোর পরে এ দিন ভোরে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলা হয়। রঞ্জিতবাবু বলেন, ‘‘সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে গেলে মেয়েকে দু’ঘণ্টা ফেলে রাখা হয়। তার পরে এসএসকেএমে নিয়ে যেতে বলে ওরা। ড্রেসিং করে দিয়ে এসএসকেএম হাসপাতাল মেয়েকে শম্ভুনাথ পণ্ডিতে নিয়ে যেতে বলে।’’ এসএসকেএম হাসপাতালের দাবি, শয্যা না থাকায় দিয়াকে শম্ভুনাথ পণ্ডিতে ভর্তি করাতে বলা হয়েছিল।

কোথায় কোথায় ঘুরতে হল?

১। হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল
২। বারাসত জেলা হাসপাতাল
৩। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
৪। এসএসকেএম হাসপাতাল
৫। শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল
৬। বি সি রায় শিশু হাসপাতাল
৭। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

রঞ্জিতবাবুদের অভিযোগ, শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, ওই ধরনের অগ্নিদগ্ধ শিশুদের চিকিৎসার ব্যবস্থা তাঁদের কাছে নেই। শম্ভুনাথ পণ্ডিত থেকেই এর পরে শিশুটিকে নারকেলডাঙা মেন রোডের বি সি রায় শিশু হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। সেখান থেকেও দিয়াকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। রঞ্জিতবাবুর কথায়, ‘‘ওঁরা আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। বেলা দু’টোয় আর জি করে আসি। কিন্তু সেখানেও ভর্তি নিচ্ছিল না। বলা হয়, শয্যা ফাঁকা নেই। ইচ্ছে হলে জেনারেলে ভর্তি করাতে পারেন। কিন্তু জেনারেলে ভর্তি করালে তো সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। তাই আমরা মেয়েকে দিইনি।’’

আরও পড়ুন: কী ভাবে ঢুকল বিস্ফোরক, মিলছে না সদুত্তর

বিকেল চারটে নাগাদ শিশুটির অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন রঞ্জিতবাবুরা। ওই সময়ে অগ্নিদগ্ধ ওই শিশুটি প্রবল চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। কখনও তাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘জল খাব।’’ কখনও আবার বলে, ‘‘বাড়ি নিয়ে চলো আমাকে!’’ এর পরে সাড়ে চারটে নাগাদ শিশুটিকে ভর্তি নেয় হাসপাতাল। রাত পর্যন্ত তাকে আইসিইউ-এ রাখা হয়েছে।

এ ভাবে বাবা-মাকে ছুটে বেড়াতে হল কেন? স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, ‘‘এমন তো কতই ঘটছে। তবে এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে আমরা মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছি। কিন্তু এক জায়গায় অনেক রোগী একসঙ্গে আসায় একটু সমস্যা হচ্ছে। রোগীর পরিজনদেরও একটু ধৈর্য ধরতে হবে।’’ কিন্তু সাতটা হাসপাতাল ঘোরার পরেও আর কত ধৈর্য ধরতে হবে? এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্য মেলেনি তাঁর কাছে। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার মানস বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘কই, আমার কাছে তো কেউ আসেননি! এলেই ব্যবস্থা করে দিতাম।’’

দিয়ার বাবা রঞ্জিতবাবু পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। মা চায়না দাস গৃহবধূ। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে দিনভর হয়রানির পরে স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য শুনে তাঁরা বলছেন, ‘‘জীবনের কোনও দাম নেই এখানে। বলছেন, কতই ঘটে এ রকম? ওই সময়ে মেয়েকে ফেলে কী কর্তাদের খুঁজে বেড়াব?’’

Fire Injury Girl RG Kar Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy