নিজের সঙ্গে সারাদিন, ডেস্টিনেশন কলকাতার কফিখানা। ছবি: শুভেন্দু চাকী।
“শেষ কয়েক বছরে আমূল বদলে গিয়েছে কলকাতার ছবি,’’ বললেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, ‘‘প্রতি দু’কিলোমিটারে অন্তত পাঁচ-ছ’টা ক্যাফে দেখা যাবে। কফির যা দাম, আমাদের যৌবনে তা কল্পনা করতেও পারতাম না।’’ উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, কলকাতা আজ ক্যাফেময়। অফিস পাড়াগুলির মোড়ে মোড়ে ক্যাফে কফি ডে, পার্ক স্ট্রিট বা সাউথ সিটি মলের স্টারবাকস, বারিস্তার মতো কফি চেনগুলি এক দিকে, আর অন্য দিকে হিন্দুস্তান পার্ক, গল্ফগ্রিন, গোলপার্ক, শরৎ বসু রোড, শ্যামবাজার, সিঁথির মোড়ে ছড়িয়ে থাকা অজস্র ছোট ছোট কফিখানা। কলকাতা যেন আরব্য রজনীর গল্পের শহর!
আরও পড়ুন:১৯৯৮: অমর্ত্য সেনের নোবেল বক্তৃতা
তবে বহুজাতিক কফি চেনগুলি আর ছোট ক্যাফেগুলি স্বভাবে, মেজাজে আলাদা। বহুজাতিক সংস্থাগুলির কফি চেনগুলিতে এক পেয়ালা ফেনায় নকশা তোলা ক্যাপুচিনো ও সামান্য স্ন্যাক্স খেতে জনপ্রতি ন্যূনতম পাঁচশো টাকা খরচ হয়। লাঞ্চ সারতে হাজারখানেক তো বটেই। এই ধরনের ক্যাফের যে কোনও একটিতে পা রাখলেই বোঝা যাবে এই ক্যাফেগুলিতে আড্ডাধারী তরুণ-তরুণীরা রোজ নিয়ম করে যান না। বরং যান কেজো মানুষ। বিজনেস টক, কর্পোরেট মিটিং চলে অহরহ। কাজের মানুষের কাছে এই জায়গাগুলি শুধুই ক্যাফে নয়। শিলাজিৎ বললেন, ‘‘কানেক্টিং পয়েন্ট’’। ‘‘এখন বহু মিটিং ক্যাফেতেই হয়, অফিস স্পেস রাখার ঝক্কি নেই। এখান থেকে কেউ তুলে দেবে না,’’ অকপট ‘ঝিন্টি তুই বৃষ্টি হতে পারতিস’-এর গায়ক।
স্টারবাকস-এর এক কর্মীও সমর্থন করলেন এই যুক্তি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যক্তির কথায়: “আমাদের স্টোরগুলি সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে। অনেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা সারেন এখানে, এমনও হয় কেউ একটা গোটা ইন্টারভিউ প্রসেস হয়তো এখানে বসেই সেরে ফেললেন। টেবিলে টেবিলে ঘন ঘন যায় ক্যারামেল কফি, এসপ্রেসো। আমরা এগুলিকে মজা করে বলি, ওয়ার্কার্স ড্রিঙ্ক।’’
নামী ব্যাঙ্কের কর্মী অনন্যা মুখোপাধ্যায়। শপিং সেরে সপরিবার স্টারবাকসে বসছেন। কেন স্টারবাকস? জিজ্ঞেস করায় অনন্যার যুক্তি, “পার্ক স্ট্রিট অঞ্চলে রেস্তরাঁ অনেক। তবে আমরা লাঞ্চ সারতে আসিনি, এসেছি একটু জিরিয়ে নিতে। এই এলাকার কফিচেনগুলির মধ্যে স্টারবাকস অপেক্ষাকৃত ভাল। এখানকার ক্রোসা পাফ স্যান্ডুইচ উইথ রোস্টেড চিকেনটা, চিকেন হ্যামটা দারুণ।” স্টারবাকসের কফি নিয়ে কিন্তু অনন্যা উৎসাহী নন। তাঁর কথায়: ‘‘কলকাতার ছোট ছোট কফির দোকানগুলির কফি স্বাদে অনেক বেশি ভাল আর দামেও সস্তা।’’