Advertisement
E-Paper

বোধনের আগেই পুজোর সুর পঞ্চমে, ভিড়ে বন্ধ দেশপ্রিয় পার্ক

‘সব থেকে বড়’-র বড়াই করে বিজ্ঞাপন পড়েছিল ছ’মাস আগেই। বাস্তবে পুরোদমে উৎসব শুরুর আগে সেই দেশপ্রিয় পার্কের পুজোই শহরে সব থেকে বড় বিশৃঙ্খলা তৈরি করল!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৫ ১৯:৩০
মহম্মদ আলি পার্কের পুজোর ছবি তুলেছেন রণজিত্ নন্দী।

মহম্মদ আলি পার্কের পুজোর ছবি তুলেছেন রণজিত্ নন্দী।

‘সব থেকে বড়’-র বড়াই করে বিজ্ঞাপন পড়েছিল ছ’মাস আগেই। বাস্তবে পুরোদমে উৎসব শুরুর আগে সেই দেশপ্রিয় পার্কের পুজোই শহরে সব থেকে বড় বিশৃঙ্খলা তৈরি করল!

ভিড়ের দাপটে দুপুর থেকে দক্ষিণ কলকাতার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাই বন্ধ হল না, আহত হলেন দু’জন দর্শনার্থীও। পরিস্থিতি সামলাতে শেষ পর্যন্ত পঞ্চমীর সন্ধ্যায় ওই পুজোর মূল প্রবেশের গেট বন্ধ করে দিতে হয়েছে পুলিশকে। রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাতেও যান চলাচল পুরোপুরি আটকে দেওয়া হয়। কিন্তু ওই পুজোকে কেন্দ্র করে ভিড়ের দাপটে দক্ষিণ কলকাতার বিরাট এলাকা যানজটে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। লালবাজারের খবর, দক্ষিণ কলকাতার যানজট এমন আকার নিয়েছিল যে দেশপ্রিয় পার্কে দ্রুত পৌঁছতে পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ-সহ কলকাতা পুলিশের কর্তারা এসপ্ল্যানেড থেকে মেট্রোয় চেপে কালীঘাট স্টেশনে যান।

দেশপ্রিয় পার্কের পুজো নিয়ে জনমানসে ধারণা তৈরি করা হয়েছে যে এখানে বিশ্বের সব থেকে বড় দুর্গামূর্তি তৈরি হচ্ছে। বাস্তবে মণ্ডপটাই তৈরি করা হয়েছে একটি দুর্গামূর্তির আদলে। কিন্তু বিজ্ঞাপনের জেরে তৈরি হওয়া ধারণা নিয়ে দলে দলে মানুষ ভিড় করার জেরে তৃতীয়ার সন্ধ্যা থেকেই ওই পুজোর জন্য রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, গড়িয়াহাটে যানজট তৈরি হয়েছিল। ভিড়ের চোটে বাধছিল গোলমাল, তৈরি হচ্ছিল নানা সমস্যা। এরই মধ্যে এক মহিলা বিশৃঙ্খলার প্রতিবাদ করায় শ্লীলতাহানির শিকারও হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ওই পুজো কমিটির এক সদস্যের বিরুদ্ধে তিনি লেক থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও কোনও গ্রেফতারের খবর নেই।

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই পুজোর জেরে চতুর্থীর সন্ধ্যায় রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, গড়িয়াহাটের যানজট চলেছিল পঞ্চমীর ভোর পর্যন্ত। রবিবার সকালের কিছু ক্ষণ বাদ দিয়ে ফের বাধে যানজট। এবং পরিস্থিতি সামলাতে হস্তক্ষেপ করতে হল প্রশাসনের শীর্ষ স্তরকে। পুলিশের একাংশই বলছেন, শহরের পুজো মণ্ডপের উচ্চতা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশিকা রয়েছে। সেই নিয়মের তোয়াক্কা না করেই মণ্ডপ তৈরি করা হলেও পুলিশ-প্রশাসন তা নিয়ে আপত্তি করেনি। বরং বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে এটা বুঝেও কার্যত মুখ বুজেই ছিলেন কলকাতা পুলিশের কর্তারা। শহরের মানুষই বলছে, একটা পার্কের মধ্যে অত বড় মণ্ডপ এবং তাঁকে ঘিরে ভিড় হবে, এটা বুঝতে এত সময় নিল কেন লালবাজার? ‘‘আগেভাগে ব্যবস্থা নিলে তো পঞ্চমীর সন্ধ্যায় মানুষকে এমন সমস্যায় পড়তে হত না,’’ বলছেন দক্ষিণ কলকাতারই এক পুজোকর্তা। রাস্তায় যানজটের কারণে অনেকেই পাতালপথে গন্তব্যে পৌঁছতে চেয়েছেন। অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে

দেশপ্রিয় পার্কের পুজো নিয়ে লালবাজারের কোনও কর্তাই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। লালবাজারের সূত্রের খবর, এই পুজো নিয়ে একটা আপত্তি প্রথম থেকেই কলকাতা পুলিশের অন্দরে ছিল। কিন্তু প্রশাসনের এমন উঁচুতলা থেকে চাপ এসেছিল যে সেই আপত্তি ধোপে টেঁকেনি। বরং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে তৃতীয়া থেকে বিশৃঙ্খলা তৈরি হলেও পুলিশ আগেভাগে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। চতুর্থীর রাত থেকে পুরো দক্ষিণ কলকাতা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার পরেই রাস্তায় নামেন কলকাতা পুলিশের শীর্ষকর্তারা। শনিবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ ওই জায়গায় যান খোদ পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ। পুলিশ সূত্রের খবর, ভিড়ের পরিস্থিতি সামলাতে কী করা হবে, তা নিয়ে আলোচনাও করেন পুলিশকর্তারা। এ দিন দুপুরের পর রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, গড়িয়াহাট পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি যে খারাপ দিকে যাচ্ছে তা জানানো হয় খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। ঘটনাটি শুনে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তার পরেই পুলিশ সিদ্ধান্ত নেয়, দেশপ্রিয় পার্কের পুজোর মূল প্রবেশপথ অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে।

দমফাটা ভিড়ে বেসামাল মেট্রো

জ্যামের চোটে ট্যাক্সির আকাল, দমদমে নেমে চরম ভোগান্তি যাত্রীদের

শহরের বাসিন্দারা বলছেন, পুলিশের এই ‘গাফিলতি’র জন্য পঞ্চমীর সকাল থেকে ভুগতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। দুপুরে কসবা থেকে ধর্মতলায় আসার জন্য রওনা দিয়েছিলেন সুকান্ত ঘোষ। নির্দিষ্ট সময়ের দেড় ঘণ্টা পরে গন্তব্যে পৌঁছলেন তিনি। ওই এলাকার বাসিন্দা সুপ্রমা মুখোপাধ্যায় চতুর্থীর রাতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ দিন রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের বদলে ইএম বাইপাস, শিয়ালদহ হয়ে বৌবাজারে এসেছেন। ওই এলাকার বাসিন্দাদের অনেকের স্মৃতিতেই উজ্জ্বল ২০০০ সালের পুজো। বোসপুকুর শীতলামন্দিরের ভাঁড়ের মণ্ডপ দেখতে ভিড়ের জেরে রাসবিহারী কানেক্টর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরের বছর থেকে বড় রাস্তা থেকে পুজো ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়। দক্ষিণের মতো না হলেও এ দিন ভিড় টেনেছে উত্তর কলকাতা, বেহালা এবং দক্ষিণ শহরতলিও।

সেই সঙ্গে এ দিন বিকেলে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মিছিলের জেড়ে বন্ধ হয়ে যায় এজিসি বোস রোড এবং পার্ক সার্কাস কানক্টর দিয়ে যান চলাচাল। ব্যহত হয় পরমা এবং এজেসি বোস রোড ফ্লাইওভারের যান চলাচালও।এর ফলে পার্ক সার্কাস, মোলালি শিয়ালদহ সহ বিভিন্ন এলাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে।

calcutta durga festival park deshapriyo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy