Advertisement
E-Paper

স্থায়ী উপাচার্য জুটছেই না কলকাতার

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য-পদে অস্থায়ী নিয়োগের গেরো কিছুতেই কাটছে না! সেই গেরো কাটিয়ে কলকাতা কবে যে আবার কোনও স্থায়ী উপাচার্যের হাতে যাবে, রাজ্য প্রশাসন বা শিক্ষা শিবিরের কেউই তা বলতে পারছেন না।

মধুমিতা দত্ত

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৬ ০২:০১

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য-পদে অস্থায়ী নিয়োগের গেরো কিছুতেই কাটছে না! সেই গেরো কাটিয়ে কলকাতা কবে যে আবার কোনও স্থায়ী উপাচার্যের হাতে যাবে, রাজ্য প্রশাসন বা শিক্ষা শিবিরের কেউই তা বলতে পারছেন না।

সুগত মারজিত অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে দু’দফায় কাজ করার পরে তাঁর জায়গায় কাউকে স্থায়ী ভাবে বসানো হয়নি। অস্থায়ী উপাচার্য করেই আনা হয় আশুতোষ ঘোষকে। প্রথম দফায় ছ’মাসের মেয়াদ শেষের আগেই তাঁর কার্যকাল আরও এক প্রস্ত বাড়ানো হচ্ছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, যোগ্য লোক মিলছে না। অর্থাৎ আপাতত স্থায়ী উপাচার্য পাচ্ছে না কলকাতা।

গত বছরের জুলাইয়ে সুরঞ্জন দাস চলে যাওয়ার পরে ১৬ মাস ধরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও স্থায়ী উপাচার্য নেই। দু’দফায় ছ’মাস করে এক বছর অস্থায়ী উপাচার্যের কাজ চালিয়েছেন সুগতবাবু। জুনের পরে তিনি আর থাকতে না-চাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের ডিন আশুতোষবাবুকে অস্থায়ী উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৪ জানুয়ারি তাঁর ছ’মাসের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, তার পরেও তাঁকে আরও ছ’মাস কাজ চালিয়ে যেতে বলা হবে।

স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ না-করে শতাব্দী-প্রাচীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদে বারবার অস্থায়ী ভাবে বিভিন্ন জনকে বসানো হচ্ছে কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষাজগৎ। প্রশ্ন উঠছে, সময় থাকতে সার্চ কমিটি গড়ে স্থায়ী পদে প্রার্থী বাছাইয়ের ব্যবস্থাই বা হয়নি কেন? শিক্ষা বিভাগের অন্দরের গুঞ্জন বলছে, স্থায়ী উপাচার্য হওয়ার মতো লোকের নাকি বড়ই অবাব! যদিও যোগ্য লোকের অভাবের কথা সরকারি ভাবে কেউ বলছে না। উচ্চশিক্ষা দফতরের কর্তারা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ১৪ জানুয়ারির মধ্যে সার্চ কমিটি গঠন করে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করা সম্ভব নয়।

কেন?

উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, সুরঞ্জনবাবু তাঁর কার্যকালের শেষ দিকে সেনেটের বৈঠক ডেকে সার্চ কমিটিতে সেনেট-প্রতিনিধি কে হবেন, তা ঠিক করতে উদ্যোগী হন। কিন্তু সুরঞ্জনবাবুর আমলে তা হয়ে ওঠেনি। এর পরে পরেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেটের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। সম্প্রতি নতুন সেনেট তৈরি হয়েছে। নবগঠিত সেই সেনেটের প্রথম বৈঠক হওয়ার কথা ২৮ নভেম্বর। তার পরে সার্চ কমিটিতে সেনেটের সদস্য মনোনীত করা হবে।

সার্চ কমিটিতে থাকেন আচার্য-রাজ্যপালের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেটের প্রতিনিধি। উচ্চশিক্ষা দফতরের কর্তারা বলছেন, সার্চ কমিটিকে নাম সুপারিশ করার জন্য কিছুটা সময় দিতে হবে। তাই নাম ঠিক করে নতুন স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া ১৪ জানুয়ারির মধ্যে কোনও মতেই শেষ করা সম্ভব হবে না। তাই আরও কিছু দিনের জন্য আশুতোষবাবুকে অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে রেখে দিতেই হচ্ছে।

উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তার মতে, যোগ্য প্রার্থী খুঁজে বার করা সহজ কথা নয়। যোগ্য প্রার্থী যে পাওয়া যায় না, রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাধিক পদে একই ব্যক্তিকে বসানোর ঘটনাতেই সেটা পরিষ্কার। যেমন কলেজ সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান দীপক কর একাধারে কলেজ সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান, আশুতোষ কলেজের অধ্যক্ষ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সদস্য। স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য আবার শ্যামাপ্রসাদ কলেজের অধ্যক্ষও। সেই সঙ্গে তিনিও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সদস্য। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাস বাগবাজার উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষা এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ও সেনেটের সদস্যা।

কলকাতার মতো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এত দিন স্থায়ী উপাচার্য না-থাকায় সমালোচনায় মুখর হয়েছেন শিক্ষাবিদদের একাংশ। প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোনও বিশ্ববিদ্যালয় মাসের পর মাস অস্থায়ী উপাচার্যের হাতে থাকবে, এটা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। কারণ অস্থায়ী উপাচার্য জোরালো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। সরকার তাঁকে পাঠায়। তিনি সরকারের পছন্দের কাজই করে যান। এর বাইরে কিছু নয়।’’ এর মধ্যে শাসকের ছড়ি ঘোরানোর অভিসন্ধি দেখছেন শিক্ষাবিদ আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়। ‘‘এরা উচ্চশিক্ষায় স্বায়ত্ত শাসন মানে না। খবরদারি করতে চায়। অস্থায়ী উপাচার্যদের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভার থাকলে ওদের সুবিধে হয়,’’ মন্তব্য করেছেন আনন্দদেববাবু।

কলকাতার মতোই এখন কল্যাণী ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ চালাচ্ছেন অস্থায়ী উপাচার্যেরা। তবে কল্যাণীতে সার্চ কমিটি গড়ে উপাচার্য বাছাইয়ের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। হালে স্থায়ী উপাচার্য পেয়েছে বারাসতের রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

vice chancellor Calcutta university
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy