Advertisement
০৫ মে ২০২৪

প্রচারই সার, বাড়ছে হেলমেট না পরার মামলা

ঘটা করে প্রচার হয়েছে। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে সরকারের। আগের থেকে বেশি কড়া হয়েছে পুলিশ ও প্রশাসনও। কিন্তু পথ নিরাপত্তায় মোটরবাইক আরোহীদের সচেতনতা রয়ে গিয়েছে তিমিরেই। অন্তত, রাজ্য ট্র্যাফিক পুলিশের তথ্য সে কথাই বলছে।

হেলমেট নেই বাইক-আরোহীর। নিজস্ব চিত্র

হেলমেট নেই বাইক-আরোহীর। নিজস্ব চিত্র

অত্রি মিত্র
শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৭ ০২:০৮
Share: Save:

তিন মাসে বেড়েছে ৮৪ হাজার কেস। সব ক’টি ক্ষেত্রেই অভিযোগ, হেলমেট না-পরে মোটরবাইক চালানো।
এতে পুলিশি সক্রিয়তার প্রমাণ মিললেও, স্পষ্ট বোঝা যায়, সচেতনতা বাড়েনি এতটুকু।

ঘটা করে প্রচার হয়েছে। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে সরকারের। আগের থেকে বেশি কড়া হয়েছে পুলিশ ও প্রশাসনও। কিন্তু পথ নিরাপত্তায় মোটরবাইক আরোহীদের সচেতনতা রয়ে গিয়েছে তিমিরেই। অন্তত, রাজ্য ট্র্যাফিক পুলিশের তথ্য সে কথাই বলছে।

গত বছরের জুলাই মাসে পথ নিরাপত্তা নিয়ে এ রাজ্যে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রকল্প শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর থেকে কলকাতা শহর-সহ সারা রাজ্যে রাস্তার মোড়ে-মোড়ে পথ নিরাপত্তা সংক্রান্ত পোস্টার, ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। মোটরবাইক আরোহীদের নিরাপত্তার জন্য হেলমেট পরা কতটা প্রয়োজনীয়,
তা নিয়ে লাগাতার প্রচার হয়েছে। প্রচার হয়েছে, মোটরবাইকে বাবা-মায়ের মধ্যে বসা শিশুদের হেলমেট পরার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও। মোটরবাইক আরোহীরা যাতে সেই নিয়ম মানেন, সে জন্য পুলিশের ধরপাকড় বা়ড়ানো হয়েছে।

এমনকী, ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর অঙ্গ হিসেবেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নিয়ম করে দেওয়া হয় হেলমেট ছাড়া কোনও মোটরবাইক আরোহীই পেট্রোল পাম্প থেকে তেল নিতে পারবেন না (‌নো হেলমেট, নো পেট্রোল)। কিন্তু তাতেও সচেতনতা যে আদৌ বাড়েনি, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে রাজ্য সরকারের হিসেবেই।

রাজ্য ট্র্যাফিক দফতরের হিসেব বলছে, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকেই লাফিয়ে বেড়েছে পুলিশের হেলমেট ছাড়া আরোহীদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রবণতা। ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক আরোহীর বিরুদ্ধে মামলা করার সংখ্যা ছিল ৫৩ হাজার ১৫৫টি। এক লাফে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়, ১ লক্ষ ১০ হাজার ২৪৬টি। কিন্তু তার পর থেকে ওই সংখ্যা ক্রমশই বেড়েই চলেছে। কমার কোনও লক্ষ্মণই নেই। চলতি বছরের তৃতীয় কোয়ার্টারে অর্থাৎ, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৯৪ হাজার ৬৪৫-এ।

বিশেষ করে শিশুদের হেলমেট না-পরানোর প্রবণতা এতটুকু কমেনি বলেই জানাচ্ছেন রাজ্য পুলিশের পদস্থ কর্তারা। রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে অজুহাত দেওয়া হচ্ছে, শিশুদের হেলমেট পাওয়া যায় না। এই অভিযোগ সঠিক নয়। অনেক ক্ষেত্রে আবার হেলমেট থাকলেও তা সঠিক ভাবে শিশুর মাথায় পরানোও হচ্ছে না।’’

আইন না-মানার প্রবণতাই হেলমেট নিয়ে মানুষের উদাসীনতার প্রধান কারণ বলে জানাচ্ছেন রাজ্য প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা। নবান্নের এক কর্তার কথায়, ‘‘সাধারণত ভয় থেকে আইন মানার প্রবণতা দেখা যায়। প্রাণ যাওয়ার ভয় অথবা জরিমানা দেওয়ার ভয়।’’ হেলমেট না-পরলে মোটরবাইক আরোহীর দুর্ঘটনা ঘটলেও যে প্রাণ বাঁচতে পারে, এই সচেতনতা বারবার প্রচার করেও বাড়ছে না বলে দাবি ওই কর্তার। তিনি বলেন, ‘‘সে ক্ষেত্রে একটাই রাস্তা খোলা রয়েছে। জরিমানার পরিমাণ পাঁচ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া। তা হলেই একমাত্র হেলমেট পরানোর প্রবণতা বাড়বে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Campaign Helmet bike ride accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE