Advertisement
২০ মে ২০২৪
আলিপুর চিড়িয়াখানা

ঘুমপাড়ানি গুলি কেন নেই, প্রশ্ন সান্তিয়াগো দেখে

পাঁচিল টপকেই হাতের নাগালে পেয়ে গিয়েছিলেন বড়সড় একটা জামরুলের ডাল। ঝুলে পড়তেই টারজানের মতো সটান টপকে গিয়েছিলেন শীর্ণ পরিখা। আর, ঝুপ করে ঝোপের মধ্যে পড়তেই মুখোমুখি পড়ে গিয়েছিলেন তার— হাত বিশেকের মধ্যে ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে রয়েছে হলুদ-কালো ডোরাকাটা, বছর এগারোর দক্ষিণরায়!

ক্যামেরায় বাঘ-বন্দি। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

ক্যামেরায় বাঘ-বন্দি। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দেবাশিস দাস
শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৬ ০১:৫৫
Share: Save:

পাঁচিল টপকেই হাতের নাগালে পেয়ে গিয়েছিলেন বড়সড় একটা জামরুলের ডাল। ঝুলে পড়তেই টারজানের মতো সটান টপকে গিয়েছিলেন শীর্ণ পরিখা। আর, ঝুপ করে ঝোপের মধ্যে পড়তেই মুখোমুখি পড়ে গিয়েছিলেন তার— হাত বিশেকের মধ্যে ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে রয়েছে হলুদ-কালো ডোরাকাটা, বছর এগারোর দক্ষিণরায়!

বড়দিনের বিকেলে, বন্ধুদের সঙ্গে বাজি লড়ে বাঘের সঙ্গে মোকাবিলায় নেমেছিলেন খিদিরপুরের ওই যুবক। ফল হয়েছিল নিতান্তই একতরফা। বাঘের প্রথম থাবাতেই ছিটকে পড়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় থাবাতেই সে নিকেশ করে দিয়েছিল যুবককে।

১৬ বছর আগে, আলিপুর চিড়িয়াখানার সেই স্মৃতি উস্কে দিয়েছে চিলের সান্তিয়াগো জুলজিক্যাল গার্ডেন। সিংহের খাঁচায় ঢুকে তাদের উত্ত্যক্ত করার খেসারত দিয়ে মধ্য ত্রিশের যুবকটি যখন ক্ষতবিক্ষত, তখন ওই দর্শকের প্রাণ বাঁচাতেই গুলি করে মেরে ফেলা হয় সিংহ-দম্পতিকে। একেবারে মেরেই ফেলতে হল? ঘুমপাড়ানি গুলি ছিল না? নিদেনপক্ষে রবার বুলেট?

তা নিয়েই পৃথিবী জুড়ে সরব হয়েছে তাবড় বন্যপ্রেমী সংস্থাগুলি। ডব্লিউডব্লিউএফ থেকে ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটি— সকলেরই প্রশ্ন, চিড়িয়াখানাগুলোয় এই সামান্য ব্যবস্থাটুকু থাকে না কেন?

যা শুনে মুচকি হাসছেন আলিপুর চিড়িয়াখানার সদস্য সচিব বিনোদকুমার যাদব। বলছেন, ‘‘সান্তিয়াগোয় কী আছে জানি না, তবে ২০০০ সালে ওই ঘটনায় আমাদের চোখ খুলে গিয়েছিল। রাজ্যের সব চিড়িয়াখানায় রবার বুলেট না-থাক, ঘুমপাড়ানি গুলি রয়েছে।’’

কিন্তু, ঘুমপাড়ানি গুলির ব্যবহার কি জানেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা? হাতি থেকে বাঘ— ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করতে হলে বিশেষ প্রশিক্ষণ থাকা প্রয়োজন। সেন্ট্রাল জু অথরিটির কর্তা এ এস বনশল বলেন, ‘‘ঘুমের ওষুধ ইসক্সসাপ্রাইনের ডোজ কী হবে, তা নির্দিষ্ট করতে হয় প্রাণীটির ওজন, বয়স অনুমান করে। যার সামান্য হেরফের হলে প্রাণীটির মৃত্যু নিশ্চিত। ফলে এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ না হলে যে কেউ ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়তে পারেন না।’’

তেমন বিশেষজ্ঞ কি কলকাতা চিড়িয়াখানায় আছেন? চিড়িয়াখানার সহকারী অধিকর্তা সুশান্ত ভট্টাচার্য অবশ্য স্পষ্টই জানাচ্ছেন, সেখানে এমন বিশেষজ্ঞ নেই।

ওই কর্তা যাই বলুন না কেন, চিড়িয়াখানার কর্মীদের অনেকেই অবশ্য জানাচ্ছেন অন্য কথা— ও সব মুখের কথা, বিশেষজ্ঞ দূরস্থান, ঘুমপাড়ানি গুলিই নেই চিড়িয়াখানায়।

তা হলে? কলকাতা চিড়িয়াখানায় ১৯৯৬ সালে শিবা কিংবা ২০০০ সালে হিমাদ্রীর মুখোমুখি হয়ে প্রাণ খুইয়ে ছিলেন দুই যুবক। দিল্লির সাদা বাঘের খাঁচায় মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক বাঘের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাতে গিয়ে মারা গিয়েছিলেন। হায়দরাবাদ জুলজিক্যাল গার্ডেনে সিংহের সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে যাওয়া যুবক খুইয়েছেন হাত— তালিকা কি দীর্ঘই হতে থাকবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Santiago Zoo Alipore Zoo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE