চিন্তা: পুজোর শহরে ভয় ধরাচ্ছে ফুটপাতের এই সব খাবার। শুক্রবার, ধর্মতলায়। ছবি: সুদীপ ঘোষ
বাগবাজারে পুজোয় খাবারের স্টল দেবেন। মানিকতলা বাজারে এ নিয়ে কথা বলতে এসেছিলেন রামকান্ত বোস স্ট্রিটের বাসিন্দা শ্যামল সাহা। খানিক দরাদরির পরে মাংস বিক্রেতাকে বললেন, ‘‘গত বছর তো মুরগি
দিলেন ৬০ টাকায়, খাসি ১০০। এ বারে এক ধাক্কায় এত বেশি!’’ মাংস বিক্রেতা থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘ভাগাড়ের জিনিস নয় দাদা। নিলে এই দামেই নিতে হবে।’’ দরাদরি আর এগোল না!
ভাগা়ড়ের মড়া পশুর মাংস শহরের বিভিন্ন খাবারের দোকান, রেস্তরাঁ হয়ে গ্রাহকদের পাতে পাতে পৌঁছে গিয়েছে বলে শোরগোল পড়ে যায় গত এপ্রিলে। শারদোৎসবের শুরুতেই সেই ‘ভাগাড় ভীতি’ নতুন করে ফিরে এসেছে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পুজোর এই সময়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠে খাবারের দোকান। ভাগাড়-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরে ওই দোকানগুলির ভবিষ্যৎ নিয়েই এবার সংশয় তৈরি হয়েছে। পুজোর স্টলের জন্য আগের মতো কম দামে অনেকেই মাংস পাচ্ছেন না বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরও দোকানগুলির খাবারের গুণমান নিয়ে সক্রিয় থাকার কথা শোনাচ্ছেন। গ্রাহকেরা অবশ্য তাতেও আশ্বস্ত হচ্ছেন না!
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘পুজোয় মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে নজরদারি চালাবে আমাদের খাদ্য সুরক্ষা বিভাগ। সোমবার মহাষষ্ঠীর দিনে বাগবাজার থেকে ওই অভিযান চালু হবে।’’
পুজোর শপিং শেষে সপরিবার এসপ্ল্যানে়ডের রেস্তরাঁয় ঢুকেছেন লেক টাউনের সুস্মিতা বণিক। চিকেন বিরিয়ানির সঙ্গে মটন চাঁপের বরাত দিয়েছেন। কী মনে হয়, এখন মাংস কেমন? প্রশ্ন শুনে বেশ কিছুক্ষণ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকলেন। এরপর বললেন, ‘‘এখনও ওইসব চলছে নাকি?’’ পাশে বসা সঙ্গীর পরামর্শ, ‘‘পুজোয় এবার আর বাইরে খাওয়া নয়!’’ গড়িয়াহাট মোড়ের খাবারের দোকানে বসা এক খাদ্যরসিক অবশ্য বলছেন, ‘‘অত মনে রাখলে হবে না। পুজোয় খাওয়া বন্ধ করা যায় নাকি!’’ রেস্তরাঁর মালিকেরা অবশ্য ভাগাড়-তত্ত্ব উড়িয়ে দিচ্ছেন। হিন্দুস্থান পার্কের এক রেস্তরাঁ মালিক বললেন, ‘‘আমাদের ১২ মাসের দোকান। ভাগা়ড় নিয়ে যখন শোরগোল পড়ল তখনও আমরা ভাল জিনিসই দিয়েছি।’’
গত এপ্রিলে ভাগাড়ের মাংস ছড়িয়ে পড়ার অভিযোগ প্রথম ওঠে বজবজ থেকে। বজবজের সুভাষ উদ্যান এলাকার পাশের ভাগাড় থেকে মৃত পশুর মাংস ট্যাক্সি করে নিয়ে যাওয়ার সময় গ্রেফতার হন তিন যুবক। তাঁদের জেরা করেই বিস্মিত হয়ে যান তদন্তকারীরা। জানা যায়, ভাগাড়গুলি থেকে মড়া পশুর মাংস চলে যেত শহরের বিভিন্ন প্রান্তের হিমঘরে। সেখান থেকে নির্দিষ্ট হাত ঘুরে তা যেত বাজারগুলিতে। নেপাল, সিকিম-সহ রাজ্যের বাইরেও ওই মাংস পাচার হত বলে তদন্তে উঠে আসে। আন্তঃরাজ্য ব্যবসার তল পেতে পুরসভার পাশাপাশি এরপর তদন্তে নামে সিআইডি। গ্রেফতার হন ১৩ জন। চার্জশিট পেশ হলেও ধৃতেরা এখন জামিনে মুক্ত। চিকিৎসকেরা সেই সময় জানিয়েছিলেন, ফুড পয়জন থেকে শুরু করে নানা রোগও হতে পারে এই ধরনের মাংস খেলে। শিশুদের ক্ষেত্রে পচা মাংস খেয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকটাই বেশি। মাংস থেকে মানবদেহে বিষক্রিয়ার আশঙ্কাও করেছিলেন চিকিৎসকেরা।
মধ্য কলকাতার অফিস পাড়া ঘুরে দেখা গেল, গত কয়েক মাসে ভাগাড়-কাণ্ডের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে এই এলাকায়। অনেক দোকানই বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন। সৌমেন পাত্র নামে এ রকমই এক ফাস্ট ফুড স্টোরের মালিক বলছিলেন, ‘‘একটা সময় চিকেন ঠিকঠাক আসছিল না। দোকান বেশ কিছুদিন বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি আগের থেকে ভাল।’’ সেই সঙ্গে তাঁর যুক্তি, ‘‘পুজোয় কখনওই এ-ওয়ান জিনিস পাওয়া যায় না। তিনটে ডিমে ছ’টা এগরোল তৈরি হয় পুজোয়। ভাগাড় না থাকলেও খাবারে কোনও নিশ্চয়তা নেই।’’ পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক ফুড সেফটি অফিসার অবশ্য বলছেন, ‘‘আমরা দেখছি। পুজোর সময় সমস্যা হওয়ার কথা নয়! আমাদের নজরদারি চলবে পুজো মণ্ডপগুলিতে।’’
যতই আশার কথা শোনাক প্রশাসন, পুজোর আগে নতুন করে ‘ভাগাড় ভীতি’ গ্রাস করছে খাদ্যরসিকদের।
যদিও খাবারের গুণগত মান নিয়ে সচেতনতার প্রচার করতে আগ্রহী কোনও কোনও পুজো কমিটিও। বাগবাজার সর্বজনীনের তরফে সন্দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা তো সামাজিক একটা সমস্যা। নিশ্চয় আমরা সবাইকে সতর্ক করব।’’ অন্য দিকে, ত্রিধারা সম্মেলনীর তরফে কর্মকর্তা তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘আমরাও সতর্ক আছি। দর্শকদেরও সতর্ক থাকতে অনুরোধ করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy