মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উদ্যোগে সেজে উঠছে গঙ্গার দুই ধার। মেরামত করা হয়েছে জেটিগুলিও। কিন্তু সন্ধ্যা নামলেই কয়েকটি জেটিতে যে ভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দুষ্কৃতীরা, তাতে বিঘ্নিত হচ্ছে যাত্রীদের নিরাপত্তা। এ বার তাই জেটিগুলির সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে সেখানে বসানো হচ্ছে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা। লাগানো হচ্ছে জোরালো আলো।
হুগলি জলপথ পরিবহণ নিগম সূত্রের খবর, গঙ্গার তীর সাজানোর প্রকল্পের সঙ্গে পর্যটনকেও জুড়তে চান মুখ্যমন্ত্রী। হুগলি জলপথ সমবায় সমিতিকে এ জন্য দু’টি নতুন লঞ্চও দেওয়া হয়েছে। পরিবহণের সঙ্গে এ ভাবে পর্যটনকে জুড়তে চান মমতা। কিন্তু গোটা বিষয়টি মার খাচ্ছিল কয়েকটি জেটিতে নিরাপত্তার অভাবের জন্য। হুগলি জলপথ পরিবহণ কর্তাদের অভিযোগ, অন্ধকার নামলে বেশিরভাগ জেটিই চলে যাচ্ছিল দুষ্কৃতীদের দখলে। সেখানে জমিয়ে মদ-গাঁজা-জুয়ার আড্ডা বসছিল। জেটির কর্মীরা প্রতিবাদ করলে চলছিল শাসানি। বেপরোয়া ভাবটা বেড়েই চলছিল। হুগলি জলপথ পরিবহণের ম্যানেজার শিশিরকুমার দাস জানান, হাওড়ার ঘাটে গত ২৪ জানুয়ারি কয়েকজন যুবক টিকিট না কেটে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন। জেটির কর্মীরা আটকালে গণ্ডগোল বাধে। অভিযোগ, কর্মীদের মারধর করেন ওই যুবকেরা। খবর যায় পুলিশে। পুলিশ এসে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে।
এই বেপরোয়া যুবকের দল এবং দুষ্কৃতীদের শায়েস্তা করতে, নিয়মিত নজরদারি জোরদার করতেই গঙ্গার ফেরিঘাটগুলিতে বসানো হচ্ছে সিসি ক্যামেরা। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই আড়াই কোটি টাকা খরচ করে গাদিয়াড়া, বাউড়িয়া, নাজিরগঞ্জ ও হাওড়ার ফেরিঘাটে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। কলকাতার ঘাটগুলির মধ্যে আহিরীটোলা, শোভাবাজার, চাঁদপাল, বাগবাজার আর্মেনিয়ান ও গোলাবাড়ি ঘাটের জেটিতে সিসি ক্যামেরা বসবে।
নবান্ন সূত্রে খবর, হুগলি জলপথ পরিবহণ সংস্থার তরফে ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। হিসেব বলছে, প্রতিদিন গঙ্গা দিয়ে লঞ্চে প্রায় ৫০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। নবান্নর কর্তাদের দাবি, সব ঘাটে সিসি ক্যামেরা বসানো হলে যাত্রী নিরাপত্তার পাশাপাশি নজরদারিতেও সুবিধা হবে।
২৬/১১-য় মুম্বইয়ে জঙ্গি হামলার পরে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। উপকূলের থানাগুলিকে আধুনিক যন্ত্রপাতি, স্পিডবোট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কলকাতার গঙ্গায় ঘাটগুলিতে সে অর্থে এতদিন কোনও নজরদারিই ছিল না। পুলিশকর্তাদের দাবি, ক্যামেরা বসানো হলে যাত্রী সেজে কোনও দুষ্কৃতী বা সন্দেহভাজন কেউ ঢুকছে কি না, তা ধরা সম্ভব হবে।
হুগলি জলপথ সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক শীতল সর্দার বলেন, ‘‘নিরাপত্তা যেমন বাড়বে, তেমনই বিনা টিকিটের যাত্রীদেরও ধরা যাবে। কর্মীরা ঠিকঠাক কাজ করছেন কি না, তা-ও বলে দেবে ক্যামেরাই।’’ শীতলবাবু জানান, নিরাপত্তা বাড়ানোর সঙ্গে আয় বাড়ানোর চেষ্টাও শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছে, যাত্রী পারাপার করে যে টাকা ওঠে তা থেকেই লঞ্চ পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ৪৮০ জন কর্মীর বেতন-ভাতা দেওয়া হয়। সরকার থেকে আলাদা করে টাকা দেওয়া হয় না। তবে আশা করা হচ্ছে, ক্যামেরা বসানোর পরে টিকিট বিক্রি কিছুটা হলেও বাড়বে। ইতিমধ্যেই যে তিনটি ঘাটে ক্যামেরা বসেছে, সেখানে টিকিট বিক্রিও বেড়েছে ও কমেছে জেটিতে দুষ্কৃতীদের আনাগোনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy