Advertisement
E-Paper

প্রমাণ দিন ডেঙ্গির, তবেই মারব মশা

বৃহস্পতিবার রাতে ইএম বাইপাস সংলগ্ন এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ওই ওয়ার্ডের কৃপানাথ লেনের বাসিন্দা, বছর চৌত্রিশের সঞ্জয় সিংহের। ছোট ছেলে সঞ্জয়কে দাহ করে এগারো বছরের নাতির হাত ধরে শুক্রবার দুপুরে সবে বাড়িতে ঢুকেছেন বছর বাষট্টির বৃদ্ধ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১৪
সঞ্জয় সিংহ।

সঞ্জয় সিংহ।

রোগীর যে ডেঙ্গি হয়েছে, আগে তার প্রমাণ দাখিল করতে হবে। তবেই পুরসভা মশা মারার ধোঁয়া দেবে! কলকাতা পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের এমন নজিরবিহীন উক্তিতে ফুঁসছেন এলাকাবাসী।

বৃহস্পতিবার রাতে ইএম বাইপাস সংলগ্ন এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ওই ওয়ার্ডের কৃপানাথ লেনের বাসিন্দা, বছর চৌত্রিশের সঞ্জয় সিংহের। ছোট ছেলে সঞ্জয়কে দাহ করে এগারো বছরের নাতির হাত ধরে শুক্রবার দুপুরে সবে বাড়িতে ঢুকেছেন বছর বাষট্টির বৃদ্ধ।

কিছু ক্ষণ চুপ থাকার পরে ফুঁপিয়ে উঠলেন নারায়ণ সিংহ। বললেন, ‘‘আমার চৌত্রিশ বছরের তরতাজা জোয়ান ছেলেটা তখন ডেঙ্গিতে নেতিয়ে পড়েছে। পাড়ায় আরও কয়েক জন আক্রান্ত। কেন মশার ধোঁয়া পাড়ায় দেওয়া হচ্ছে না, তা জানতে কাউন্সিলরের কাছে যাই। উনি বললেন, ডেঙ্গি যে হয়েছে, সেই সার্টিফিকেট দেখালে তবেই পুরসভা ধোঁয়া দেবে। হাসপাতাল থেকে সেই সার্টিফিকেট জোগাড় করে আনার পরে পাড়ায় ধোঁয়া দেওয়া হয়েছে মাত্র দু’দিন আগে। এটা আগে হলে হয়তো ছেলেটা মশার কামড়ে মরত না।’’

শোকার্ত: বাড়িতে ভিড় করেছেন আত্মীয়েরা।

প্রচুর প্লেটলেট আর সাড়ে ছ’লক্ষ টাকা ব্যয় করেও ছেলেকে বাঁচানো যায়নি। নারায়ণবাবুর বাড়িতে এখনও মশার ঝাঁক। ত্রস্ত শোভাবাজার অঞ্চলের হাটখোলা সংলগ্ন ওই পাড়াও। মশার ধোঁয়া দেওয়ার জন্য ডেঙ্গির সার্টিফিকেট দেখাতে হবে কেন? প্রশ্ন শুনে ঝাঁঝিয়ে উঠে কাউন্সিলর মিতালি সাহা বলছেন, ‘‘ডেঙ্গির ডকুমেন্ট ছাড়া ধোঁয়া দেওয়া হবে না। কোনও ওয়ার্ডেই তা হয় না। জানেন না, এই ধোঁয়ায় হার্টের রোগ, শ্বাসকষ্ট হয়? কিছুতেই নিয়মিত এই ধোঁয়া দেওয়া যাবে না।’’

রোগ প্রতিরোধ করতে গেলে তো রোগ হওয়ার আগেই ধোঁয়া দেওয়া উচিত। মানুষ আক্রান্ত হয়ে গেলে আর ব্যবস্থা নিয়ে লাভ কী? কাউন্সিলরের জবাব, ‘‘ঘরে ঘরে তো সুগার আর প্রেশারের রোগী। কই তা নিয়ে তো চেঁচামেচি শুনি না। মিডিয়ার যত লাফালাফি ডেঙ্গি নিয়ে কেন? মশা তো আর আমরা ডেকে আনছি না। মশা মারার ধোঁয়াও নিয়মিত দিতে পারব না।’’

কাউন্সিলরের পারিষদবর্গ আবার এক ডিগ্রি উপর দিয়ে যান। মৃত সঞ্জয় সিংহের বাড়ির তিন-চারটি বাড়ি পরেই তৃণমূলের পার্টি অফিস। সেখানে সমস্বরে কর্মীরা ‘রায়’ দিলেন, ‘‘বড় হাসপাতালের ডাক্তারবাবুরা যতই লিখুন, সঞ্জয় ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছেন, আসলে আমরা জানি, উনি লিভার আর কিডনি ফেল করেই মারা গিয়েছেন। ভুল প্রচার হচ্ছে। ডেঙ্গি হওয়ার আগেই ওঁর অঙ্গগুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছিল!’’

সঞ্জয় সিংহের ডেথ সার্টিফিকেট। তাতে উল্লেখ রয়েছে ডেঙ্গির। এলাকায় এখনও জমে রয়েছে আবর্জনা শুক্রবার, শোভাবাজারে।

ওই এলাকারই কাঁঠালিতলা গলিতে এখন একসঙ্গে আরও তিন জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। তার মধ্যে আট বছরের বালিকা সুমি দাস ও ১৭ বছরের এক কিশোর রয়েছে। গলির চার দিকে ময়লার স্তূপ আর জমা জল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সারা বছর পুরকর্মীদের দেখা মেলে না। মাঝেমধ্যে শুধু মশার তেল স্প্রে করা হয়। সেই তেলের গন্ধ নেই। জলের মতো। তাতে মশা মরে না। ময়লা পরিষ্কার হয় না। যা শুনে মিতালিদেবীর উক্তি, ‘‘সব বাজে কথা।’’ আর তাঁর পারিষদদের মুখে শোনা গিয়েছে কয়েক দিন আগে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শোনা উক্তির প্রতিধ্বনি। তাঁরা বলেছেন, ‘‘যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের যে নয় নম্বর ওয়ার্ডের মশাই কামড়েছে, তার প্রমাণ কী? হতে পারে তাঁরা বাইরে বেড়াতে গিয়েছিলেন বা স্কুল-কলেজ-অফিস করতে অন্য এলাকায় গিয়েছিলেন। সেখানকার মশাই কাম়ড়েছে!’’

—নিজস্ব চিত্র।

Dengue Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy