Advertisement
E-Paper

সাফাইকর্মীদের ধর্মঘট, হাওড়া হঠাৎ জঞ্জাল-নগরী

দিনভর জঞ্জাল সাফাই না হওয়ায় কার্যত নরকের চেহারা নিল গোটা একটা শহর। রাস্তার পাশে, অলি-গলিতে পরিষ্কার না হওয়া ভ্যাট, জমে থাকা আবর্জনা এবং তার উপরে বৃষ্টির জল পড়ে মারাত্মক দুর্গন্ধে দিনভর নাজেহাল হলেন শহরের বাসিন্দারা।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৬ ০০:৫৫
এ ভাবেই জমে রয়েছে আবর্জনা। সোমবার, হাওড়ার টিকিয়াপাড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

এ ভাবেই জমে রয়েছে আবর্জনা। সোমবার, হাওড়ার টিকিয়াপাড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

দিনভর জঞ্জাল সাফাই না হওয়ায় কার্যত নরকের চেহারা নিল গোটা একটা শহর। রাস্তার পাশে, অলি-গলিতে পরিষ্কার না হওয়া ভ্যাট, জমে থাকা আবর্জনা এবং তার উপরে বৃষ্টির জল পড়ে মারাত্মক দুর্গন্ধে দিনভর নাজেহাল হলেন শহরের বাসিন্দারা। সৌজন্যে হাওড়া পুর নিগম। পুর কতৃর্পক্ষের দাবি, সোমবার সাফাইকর্মীদের ধর্মঘটে কাজ বন্ধ থাকায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তা অবশ্য বিকেলেই মিটে গিয়েছে। আজ, মঙ্গলবার থেকে ওঁরা ফের কাজ শুরু করবেন।

এমনিতেই গত কয়েক দিন ভাগাড়ে জঞ্জাল ফেলা নিয়ে সমস্যায় রয়েছে হাওড়া পুর নিগম। এর উপরে দৈনিক মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে অস্থায়ী সাফাইকর্মীদের ধর্মঘটের জেরে অথৈ জলে পড়েন পুরকর্তারা। যদিও শহর জঞ্জাল মুক্ত রাখতে অগত্যা সাফাইকর্মীদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি এক প্রকার মেনে নিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু বর্ষায় পাহাড় প্রমাণ ভাগাড়ে ধস আটকাবেন কী ভাবে, তা নিয়ে চিন্তিত পুরকর্তারা।

হাওড়া শহরের একমাত্র জঞ্জাল ফেলার জায়গা বেলগাছিয়া ভাগাড়ে পাহাড় প্রমাণ জঞ্জাল জমে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল প্রায় এক দশক আগে। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের করা মামলার প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট তাই অনেক আগেই হাও়়ড়া পুরসভাকে বেলগাছিয়া ভাগাড়ে জঞ্জাল ফেলতে নিষেধ করেছিল। কিন্তু অভিযোগ, বাম শাসিত পুরবোর্ড যেমন সেই নির্দেশের মান্যতা দেয়নি, বর্তমান তৃণমূল শাসিত পুরবোর্ডও ভাগাড়ে জঞ্জাল ফেলা বন্ধ করেনি। তাই ওই জঞ্জালের পাহাড়ে ধস নামা হয়ে দাঁড়ায় নিত্য দিনের ঘটনা।

পুর নিগম সূত্রে খবর, গত মাসের শেষ দিকে অতিরিক্ত জঞ্জালের ভার সহ্য করতে না পেরে বড়সড় ধস নামে বেলগাছিয়া ভাগাড়ে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় ওই এলাকা দিয়ে যাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ নিকাশি নালা। আর নালার দুর্গন্ধময় পাঁক জলে ভেসে যায় বেলগাছিয়া, বি রোড, সি রোড, বিবেকনগরের বিস্তীর্ণ এলাকা। এই ঘটনার পরে এলাকার মানুষের বিক্ষোভের জেরে ভাগাড়ে জঞ্জাল ফেলা কয়েক দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। তবে পুর নিগমের পক্ষ থেকে পাম্প চালিয়ে সেই জল কিছুটা বার করার পরে ভাগাড়ের মধ্যে একটা নতুন জায়গা তৈরি করে ফের জঞ্জাল ফেলা শুরু করে পুর নিগম।

এটা যে সমস্যার স্থায়ী সমাধান নয়, তা মেনে নিয়ে হাওড়া পুর নিগমের মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল) গৌতম চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা ডোমজুড়ে একটা বিকল্প জায়গা পেয়েছি। শীঘ্রই সেখানে যাতে ভাগাড় তৈরি করা যায়, চেষ্টা চলছে।’’

ভাগাড়ে এই সমস্যার জেরে পুর নিগম যখন জেরবার, তখন দৈনিক মজুরি বৃদ্ধি ও পুর নিগমের পরিচয়পত্রের দাবিতে এ দিন ধর্মঘটের ডাক দেন প্রায় ৬০০ অস্থায়ী সাফাইকর্মী। তাঁরা পুর নিগমে এসে বিক্ষোভও দেখান। এ দিকে সকাল থেকে হাওড়া পুর নিগমের ৬৬টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ আর্বজনা সাফাই না হওয়ায় ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তার উপরে সেই আবর্জনায় বৃষ্টির জল পড়ে দুর্গন্ধে বেরোতে থাকে চারদিক।

অস্থায়ী সাফাইকর্মীদের অভিযোগ, গত ১৫-২০ বছর তাঁদের মজুরি বাড়েনি। সরকারের বেঁধে দেওয়া ২৩২ টাকা বেতনে চাকরি করছেন। তাঁদের অভিযোগ, এত বছর কাজ করার পরে তাঁদের স্বীকৃতি নেই। কোনও পরিচয়পত্র দেয়নি পুর নিগম। অথচ যাঁরা একশো দিনের কাজে নতুন যোগ দিচ্ছেন, তাঁদেরও পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে। সুপারভাইজারদের সাড়ে ৮ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হচ্ছে। পুর নিগমে বিক্ষোভ দেখাতে আসা ব্রিটানিয়া মল্লিক, বান্টি ডোমদের অভিযোগ, বামফ্রন্টের আমলে যে বেতন ছিল, তা এত বছরেও বাড়েনি। তৃণমূল নিজেদের লোকদের বেতন বাড়াচ্ছে। এত কম টাকা দৈনিক মজুরিতে কী আর চলে, প্রশ্ন তোলেন তাঁরা।

এ দিকে সাফাইকর্মীদের এই দাবি অনেকটাই মেনে নিয়েছেন পুর কতৃর্পক্ষ। পুর কমিশনার নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওঁদের দাবি ন্যায্য। যাতে দৈনিক মজুরি বাড়ানো যায়, সে দিকে নজর দেওয়া হবে।’’

একই কথা জানিয়ে গৌতমবাবু বলেন, ‘‘ওঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। জানিয়েছি, ২৩২ টাকা থেকে আরও কিছুটা বাড়ানো হবে দৈনিক মজুরি। কত টাকা বাড়ানো হবে, তা শীঘ্রই পুর বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।’’

Cleaning staff garbage
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy