নজরদার: নবান্নের পথে সিসিটিভি। নিজস্ব চিত্র
বামেদের নবান্ন অভিযান তখন সবে শুরু হচ্ছিল। পুলিশের ওয়াকিটকিতে ক্রমাগত খবর আসছিল, কলকাতা ও হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায় কী ভাবে একটু একটু করে ভিড় বাড়ছে। সেই মতো নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো ছিল সকাল থেকে। যাতে কোনও ভাবে সে ভিড় না পৌঁছতে পারে নবান্নের গেটে। কিন্তু এত প্রস্তুতির মধ্যেও পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে দুপুর ১২টা নাগাদ বেশ ক’জন বাম বিধায়ক বিধানসভা থেকে সটান হাজির হয়ে গিয়েছিলেন নবান্নে। এর পরে নবান্নের সুরক্ষা নিয়ে ফের প্রশ্ন ওঠে প্রশাসনিক মহলে। পরে পুলিশ খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে, কোনও চোরাগোপ্তা পথ দিয়ে নয়, বিদ্যাসাগর সেতুর টোল প্লাজা পেরিয়ে গাড়ি নিয়েই বিধায়কেরা নবান্নে পৌঁছেছিলেন সেখানে। এর পরেই ওই পথে পুলিশ চৌকি বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে লালবাজার।
লালবাজারের বক্তব্য, দিনভর বহু গাড়ি টোল প্লাজা পেরিয়ে নবান্নের দিকে যায়। ওই ভবন রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতর হওয়ার সুবাদে তার চারদিকে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। কিন্তু সে ভাবে কোনও গাড়িতেই তল্লাশি হয় না। সেই ফাঁক গলে যে অনায়াসেই নবান্নে পৌঁছে যাওয়া যায়, বাম বিধায়কেরা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। সেই কারণেই যে গাড়ি টোল প্লাজা পেরিয়ে নবান্নের পথ ধরবে, নিরাপত্তার স্বার্থে তার আরোহীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা, প্রয়োজনে তল্লাশি চালানো জরুরি বলে মনে করছে লালবাজার। এখন ওই পথেই একটি পুলিশ শেড রয়েছে। জনা দশেক পুলিশকর্মী সব সময়ে থাকেন সেখানে। কিন্তু বামেদের নবান্ন অভিযানের পরে তা যথেষ্ট নয় বলেই মনে করছে পুলিশের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, টোল প্লাজা পেরিয়ে রাস্তাটি দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। একটি গিয়েছে ব্যতাইতলার দিকে, অন্যটি নবান্নে। সেই মোড়েই পুলিশ চৌকি করা দরকার। তা হলে যে গাড়িগুলি নবান্নের দিকে যাবে, শুধু সেগুলির উপরেই নজর রাখতে পারবে পুলিশ।
পুলিশের অন্য একটি অংশ অবশ্য মনে করছে, এই ব্যবস্থায় বিড়ম্বনা বাড়বে সাধারণ মানুষের। এমনিতেই নবান্নের চারপাশে ঘন জনবসতি। নিরাপত্তার নামে প্রতি পদে পুলিশের কাছে জবাবদিহি করতে হয় সেখানকার বাসিন্দাদের। আগে বিকেল হলেই নাতি-নাতনিদের নিয়ে দাদু-ঠাকুরমারা সার দিয়ে বসে থাকতেন মন্দিরতলা বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া সেতুর ডিভাইডারে। নিরাপত্তার খাতিরে পুলিশ আর ওখানে বসতে দেয় না কাউকে। নবান্নের সামনে যে অংশটি সাজিয়েগুছিয়ে ঝাঁ চকচকে করে দিয়েছে পূর্ত দফতর, পুলিশের রক্তচক্ষু সেখানেও। এলাকার মানুষ বসতে গেলেই পুলিশ তাঁদের ‘উপরওয়ালার’ নির্দেশ শুনিয়ে উঠিয়ে দেয়। শুধু তা-ই নয়, নিজের পাড়াতেও বাসিন্দাদের অবাধ চলাফেরার উপরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে পুলিশের। বেশ কিছু রাস্তা একমুখী করে দেওয়ায় টিউশন থেকে বাড়ি ফিরতে কিংবা বাজার করতে এ গলি-সে গলি ঘুরে যেতে হয় বাসিন্দাদের। কিন্তু পুলিশের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী বসেন নবান্নে, নিরাপত্তায় এতটুকুও ফাঁক রাখা যাবে না।
সেই ফাঁক বোজাতেই টোল প্লাজা থেকে নবান্ন পর্যন্ত গোটা রাস্তাটি সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে চাইছে কলকাতা পুলিশ। এখন নবান্ন ও ওই ভবনকে ঘিরে দেড়শোর মতো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা রয়েছে। ওই ক্যামেরা দিয়েই পুলিশ প্রতি মুহূর্তে সকলের গতিবিধি নজরে রাখে। যে গলিগুলি আশপাশে পাড়ার ভিতর দিয়ে নবান্নে এসে পড়েছে, এ বার সেখানেও ক্যামেরা বসাতে চাইছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy