Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

অবাধ্য বাইক রুখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতাহীন

রাত বাড়লেই শহরের কয়েকটি উড়ালপুলে শুরু হয়ে যায় মোটরবাইক ‘রেসিং’। দুর্ঘটনাও বিরল নয়। কিন্তু কোনও এক ‘জানা’ বা ‘অজানা’ কারণে বাইকের দৌরাত্ম্য রুখতে পারে না পুলিশ। এ বার অবশ্য রেসিং বন্ধে উদ্যোগী খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (যিনি রাজ্যের পুলিশমন্ত্রীও)।

হেলমেট ছাড়াই। শুক্রবার দুপুরে। — সুমন বল্লভ

হেলমেট ছাড়াই। শুক্রবার দুপুরে। — সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৬ ০১:০১
Share: Save:

রাত বাড়লেই শহরের কয়েকটি উড়ালপুলে শুরু হয়ে যায় মোটরবাইক ‘রেসিং’। দুর্ঘটনাও বিরল নয়। কিন্তু কোনও এক ‘জানা’ বা ‘অজানা’ কারণে বাইকের দৌরাত্ম্য রুখতে পারে না পুলিশ। এ বার অবশ্য রেসিং বন্ধে উদ্যোগী খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (যিনি রাজ্যের পুলিশমন্ত্রীও)। শুক্রবার দুপুরে নজরুল মঞ্চে ‘সেফ ড্রাইভ-সেভ লাইফ’ নামক কর্মসূচির সূচনা করে পথ নিরাপত্তা অনুষ্ঠানে তাঁর নির্দেশ, রাত ১০টার পর থেকে এ জে সি বসু রোড ও পরমা উড়ালপুল দিয়ে মোটরবাইক যেন চলাচল না করে। সেই অনুযায়ী, শুক্রবার রাত থেকেই কার্যকর হয়ে গেল ওই নির্দেশ।

মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘প্রতি রাতে ১০টার পরে শহরের কিছু উড়ালপুলে বাইকের প্রতিযোগিতা হচ্ছে। হেলমেট না পরেই রেসিং করছে। তাই রাত ১০টার পরে পরমা এবং এজেসি বসু রোড উড়ালপুলে কোনও মোটরবাইক চলাচল করতে দেওয়া হবে না।’’ ওই অনুষ্ঠানেই পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন, হেলমেটহীন সওয়ারিরা যেন পেট্রোল পাম্প থেকে তেল না পান।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে পথে নেমেছে কলকাতা পুলিশ। সন্ধ্যায় লালবাজারে অতিরিক্ত কমিশনার (১) বিনীত গোয়েল জানান, রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত পরমা উড়ালপুল, এজেসি বসু রোড উড়ালপুল ও পার্ক স্ট্রিট উড়ালপুলে বাইক চলতে দেওয়া হবে না। পুলিশকর্তারা জানান, হেলমেট না থাকলে বাইককে তেল না দেওয়ার জন্য পাম্পমালিকদের অনুরোধ করা হবে। বস্তুত, পুজোর সময়ে বেপরোয়া বাইক রুখতে উড়ালপুলে তা নিষিদ্ধ করলেও পরে নিয়ম শিথিল হয়েছিল।

তবে বিভ্রান্তি রয়েছে পুলিশের নির্দেশেও। বিনীত জানান, বয়স্ক ও পরিবারের কেউ সঙ্গে থাকলে এতটা কড়াকড়ি হবে না। প্রশ্ন উঠেছে, হেলমেট না থাকলে বয়স্করাই বা ছাড় পাবেন কেন? তাঁদেরও তো বিপদ ঘটতে পারে! কেউ কেউ বলছেন, নির্দেশ বাস্তবায়িত করতে মাস কয়েক সচেতনতা প্রচারের কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তা হলে পুলিশ এত তাড়াহুড়ো করল কেন? বিনীতের জবাব, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সব নির্দেশই পালন করা হবে। বিষয়টির সঙ্গে বহু মানুষের জীবনের নিরাপত্তা জড়িয়ে। তাই দ্রুত কয়েকটি পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’

এক সমীক্ষা অনুযায়ী, এ দেশে প্রতি চার মিনিটে পথ-দুর্ঘটনায় এক জন মারা যান। এ রাজ্যে পথ-দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রীও। মমতা বলেন, ‘‘যার বাড়ির লোক এ ভাবে মারা যান, তাঁরাই যন্ত্রণাটা বুঝতে পারেন।’’ এ ধরনের দুর্ঘটনা রুখতে শহরের উড়ালপুলে বাইক রেসিং বন্ধের পাশাপাশি আরও কিছু দাওয়াইয়ের কথাও বলেছেন তিনি।

যেমন, এ দিন মূলত রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশকে কড়া হতে বলেছেন মমতা। ধরপাকড় করতে বলেছেন হেলমেটহীন বাইক-আরোহীদের। আর বলেছেন, আইন ভাঙলে টাকা নিয়ে পুলিশ যেন ছেড়ে না দেয়! আবার হেলমেট না পরলে কখন পুলিশ ছেড়ে দেবে, তা নিয়ে নিজস্ব মতামতও দেন। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, আচমকা জরুরি কাজে অনেকেই হেলমেট ছাড়া বেরোন। হয়তো তাঁকে হাসপাতালে যেতে হবে। ট্রাফিক পুলিশকে তা বুঝতে হবে। জোরজুলুম করার বদলে যাঁরা হেলমেট পরেননি, তাঁদের হেলমেট কিনতে এক মাস সময় দিতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

অনেকেই বলছেন, এই ছুতোয় তো নিত্যদিনই লোকে আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাবে! কড়াকড়িতে লাভ কী? কেউ কেউ বলছেন, রেসিং বন্ধে উড়ালপুলে বাইক বন্ধ হল। তাতে তো আম-বাইক চালকেরাও উড়ালপুল দিয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছনোর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। প্রশ্ন উঠছে, মমতার আরও কিছু ঘোষণা নিয়ে। এ দিন মমতা বলেন, সস্তায় হেলমেট পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে সরকার সাহায্য করবে। পুলিশ, পরিবহণ দফতর, পুরসভা, পঞ্চায়েত সেই খরচ দিতে পারে কি না, তা-ও দেখতে বলেছেন। ‘‘যাঁরা গরিব, কিনতে পারবেন না, তাঁদের জন্য ফান্ড করতে পারি কি না দেখতে হবে,’’ মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর। যা শুনে অনেকে বলছেন, ৬০-৭০ হাজার টাকায় যাঁরা বাইক কিনছেন, তাঁরা ৬০০-৭০০ টাকার হেলমেট কিনতে পারবেন না? তার জন্য সরকার খরচ দেবে!

পুলিশের অন্দরে অনেকে বলছেন, গত কয়েক বছরে পথেঘাটে পুলিশের প্রতি মানুষের ভয়টাই উবে গিয়েছে। বেপরোয়া গাড়ি ধরতে গিয়ে পুলিশের মার খাওয়াও ‘অস্বাভাবিক’ নয়। অনেক সময়ে শাসক দলের কর্মীরাই বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে পুলিশের উপরে চড়াও হয়ে পার পেয়েছেন। ‘‘এমন চললে পুলিশ কি সাহস দেখাতে পারবে?’’ প্রশ্ন এক সার্জেন্টের। এ দিন অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘পুলিশকে চমকাবে, ভয় পাবে না— এ সব মেনে নেব না।’’ পুলিশকে বলেছেন, রাস্তা ঠিক রাখতে মালবাহী গাড়ির ‘ওভারলোডিং’ রুখতে হবে।

পথ নিরাপত্তার প্রচারে মনিটরিং কমিটি গড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতি সপ্তাহে মুখ্যসচিব থেকে জেলার এসপি অভিযানে নজরদারি করবেন। প্রচারে পুজো কমিটি ও ক্লাবগুলিকেও সামিল করতে বলেছেন মমতা। রাজ্য সড়ক ও জাতীয় সড়কে লোকশিল্পীদের দিয়ে প্রচার হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যে ব্লকে দুর্ঘটনা কম হবে, তাকে পুরস্কৃত করা হবে। ভাল কাজ করা ট্রাফিক পুলিশকে ইনসেনটিভ দেওয়া হবে।’’ এ দিন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার জানান, রাস্তায় দুর্ঘটনা কমাতে স্কুলপড়ুয়া ও গাড়িচালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পথ-নিরাপত্তায় রিয়্যালিটি শো-ও করছে লালবাজার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Traffic rule
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE