Advertisement
২০ মে ২০২৪

রাস্তা বন্ধ, রোদ-মিছিলে জেরবার মানুষ

মিছিল শুরু হওয়ার খবর পেয়ে দুপুর ১টার পরে গিরিশ পার্ক থেকে ধর্মতলামুখী উভয় লেন বন্ধ করে দেওয়া হয়।

স্কুল থেকে ফেরার পথে বৌবাজার স্ট্রিটে এক উদ্বিগ্ন অভিভাবক। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

স্কুল থেকে ফেরার পথে বৌবাজার স্ট্রিটে এক উদ্বিগ্ন অভিভাবক। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৯ ০৩:১৫
Share: Save:

রাজপথ থেকে তস্য গলিতে তৈরি হয়েছিল ‘দুর্গ’। কলকাতা পুলিশের সদর দফতরকে কেন্দ্র করে আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা মুড়ে ফেলা হয়েছিল ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয়ে। বুধবার বিজেপির লালবাজার অভিযান ঠেকাতে এ ভাবেই তৈরি ছিল কলকাতা পুলিশ। লোহার ব্যারিকেড, র‌্যাফ, জলকামানের ঘেরাটোপ পেরিয়ে লালবাজার পর্যন্ত অবশ্য পৌঁছতে পারেনি গেরুয়া বাহিনী। তবে তাঁদের আটকাতে মধ্য কলকাতা জুড়ে পুলিশের ‘দুর্গ’ তৈরি করার জেরে ঘুরপথে গন্তব্যে পৌঁছতে গিয়ে ভোগান্তি বেড়েছে সাধারণ মানুষের। মিছিলের জেরে ফুটপাতের দোকানপাট বন্ধ থাকায় খাবার, জল পেতেও সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা।

এক দিকে কাঠফাটা রোদ, তার সঙ্গে শহরের রাস্তায় রাজনৈতিক উত্তাপ। দুইয়ের জেরে নাজেহাল হয়ে এ দিন অনেকেই গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য বেছে নিয়েছিলেন মেট্রোকে। অনেকে আবার হেঁটেই গিয়েছেন। আর যাঁরা গাড়িতে ছিলেন, তাঁদের ঘুরপথে ঢিমেতালে এগোতে হয়েছে। দুপুর সওয়া ১টা থেকে প্রায় দু’ঘণ্টা, বিকেল তিনটে পর্যন্ত চলেছে এই ভোগান্তি। তার পরে অবশ্য সব রাস্তা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে পুলিশের ব্যারিকেড। ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরেছে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ-সহ অন্য রাস্তা। কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (২) অজেয় রানাডে এবং লালবাজারের একাধিক শীর্ষ কর্তাকে রাস্তায় নেমে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে দেখা গিয়েছে।

২০১৭ সালে লালবাজার অভিযান ঘিরে বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেধেছিল কলকাতা পুলিশের। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার আগে থেকেই কঠোর নিরাপত্তার পরিকল্পনা করেছিল তারা। লোহার ব্যারিকেড, মেটাল শিট ব্যারিকেড, গার্ড রেল ও দড়ি দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছিল লালবাজারে ঢোকার সব রাস্তা। বন্ধ করে দেওয়া হয় আশপাশের গলিও। বেশ কিছু রাস্তায় জারি করা হয়েছিল ১৪৪ ধারা। এলাকার প্রায় সব উঁচু বাড়ির ছাদে ও বারান্দায় মোতায়েন ছিল পুলিশ। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য র‌্যাফ, মহিলা পুলিশ, কমব্যাট ফোর্স নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন লালবাজারের উচ্চপদস্থ কর্তারা। বাহিনীর সঙ্গে ছিল জলকামান, কাঁদানে গ্যাস। এ বারের অভিযানে পুলিশের সঙ্গে ছিল বৈদ্যুতিক চার্জার-ঢাল। যাতে হাত দিলে শক খেতে হবে। সেই ঢাল ব্যবহার করার মতো পরিস্থিতি অবশ্য এ দিন হয়নি। তবে পুলিশের হাতে এমন বৈদ্যুতিক চার্জার-ঢাল থাকার প্রতিবাদ জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর।

মিছিলের জেরে থমকে গেল চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ। বুধবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

এত আঁটোসাঁটো নিরাপত্তার মধ্যেও কোনও ভাবে এ দিন সোজা লালবাজারের মূল গেটের কাছে পৌঁছে যান বিজেপির তিন মহিলা সমর্থক। তখনও ওয়েলিংটন থেকে মিছিল শুরু হয়নি। তার আগেই পৌনে একটা নাগাদ লালবাজারের সামনে পৌঁছে যান ওই তিন মহিলা কর্মী। বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের দিক থেকে তাঁরা অন্য পথচারীদের মতো হেঁটে লালবাজারের মূল গেটের সামনে হাজির হন। গেটের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে ব্যাগ থেকে দলীয় পতাকা বার করে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে শুরু করেন। তার পরে বসে পড়েন রাস্তায়। আচমকা এমন ঘটে যাওয়ায় কিছু ক্ষণের জন্য হকচকিয়ে যান পুলিশকর্মীরা। তবে দ্রুত পরিস্থিতি সামলানো হয়। রীতিমতো ধস্তাধস্তি করে মহিলা পুলিশকর্মীরা ওই তিন তরুণীকে লালবাজারের ভিতরে নিয়ে যান। পরে তাঁদের সঙ্গে থাকা আরও দু’জনকে আটক করা হয়। বিকেলে লালবাজারের তরফে জানানো হয়, ওই পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এর কিছু পরেই নীল আলো লাগানো একটি সাদা গাড়ি সোজা পৌঁছে যায় লালবাজারের প্রবেশপথে। পুলিশের শীর্ষ কর্তারা গাড়ির ভিতরে থাকা দুই ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে তাঁরা কিছু না জানিয়েই গাড়ি নিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যান। অল্প ক্ষণের ব্যবধানে পরপর এমন দু’টি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে আর ঝুঁকি নেয়নি পুলিশ।

রাস্তায় নেমে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে শুরু করেন গোয়েন্দা প্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠী স্বয়ং। কেউ যাতে লালবাজারের ফুটপাত এবং সংলগ্ন রাস্তা ধরে হাঁটতে না পারেন, পুলিশকর্মীদের সেই নির্দেশ দেওয়া হয়। পথচারীদের বলা হয় উল্টো দিকের ফুটপাত দিয়ে যাওয়ার জন্য। শুধু তা-ই নয়। কাউকে ফুটপাতে দাঁড়াতেও দেওয়া হয়নি।

লালবাজারের সামনে বিজেপির পাঁচ সমর্থক পৌঁছে গিয়েছেন, এই খবর পাওয়ার পরে নিরাপত্তায় আরও কড়াকড়ি শুরু হয় অন্য জায়গাগুলিতে। দুপুর দেড়টা নাগাদ ওয়েলিংটনে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে বেরিয়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ও বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের মোড়ে এসে পৌঁছয় বিজেপির একটি মিছিল। প্রথম ব্যারিকেড পার করে দ্বিতীয় ব্যারিকেডের কাছে আসতেই মিছিলের পথ আটকায় পুলিশ। বিজেপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বচসা বাধে পুলিশকর্মীদের। অভিযোগ, সে সময়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়। পাল্টা জলকামান আর কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়তে শুরু করে পুলিশ। তাতেই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় মিছিল। পরে বিজেপির নেতা ও কর্মীরা চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের উপরে বসে পড়েন।

মিছিল শুরু হওয়ার খবর পেয়ে দুপুর ১টার পরে গিরিশ পার্ক থেকে ধর্মতলামুখী উভয় লেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় ব্রেবোর্ন রোড থেকে কলকাতামুখী রাস্তা, গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট থেকে লালবাজার যাওয়ার রাস্তা, নির্মলচন্দ্র সেন স্ট্রিট এবং লেনিন সরণি থেকে রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার পর্যন্ত রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড। হাওড়া থেকে দক্ষিণ কলকাতার দিকে যাওয়া সব গাড়িকে স্ট্র্যান্ড রোড দিয়ে ঘোরানো হয়। উত্তর কলকাতামুখী গাড়ির জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল মহাত্মা গাঁধী রোড। অন্য দিকে, মধ্য কলকাতা থেকে দক্ষিণ কলকাতার দিকে যাওয়া গাড়িগুলিকে বিবেকানন্দ রোড ও এপিসি রোড দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।

তিনটের পরে বিজেপি ‘কর্মসূচি শেষ’ ঘোষণা করতে একে একে খুলে দেওয়া হয় সব রাস্তা।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Traffick Jam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE