মেশিন খারাপ ভেবে গ্রাহক এটিএম থেকে বেরোতেই জানতে পারেন, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে দশ হাজার টাকা উধাও। প্রতীকী ছবি।
এটিএমে কার্ড ঢুকিয়ে পাসওয়ার্ড দিতেই মেশিনটি বিগড়ে গিয়েছিল। মেশিন খারাপ ভেবে গ্রাহক এটিএম থেকে বেরোতেই জানতে পারেন, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে দশ হাজার টাকা উধাও। পুরো ঘটনার বিবরণ জানিয়ে পুলিশ, সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিক বার দরবার করেও টাকা ফেরত পাননি ওড়িশার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত কর্মী নারায়ণচন্দ্র দাস। সবশেষে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেছিলেন তিনি। সম্প্রতি রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে ক্ষতিপূরণ-সহ প্রায় ১৩,০০০ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছে।
ক্রেতা সুরক্ষা দফতর সূত্রের খবর, এক বেসরকারি সংস্থার প্রাক্তন কর্মী নারায়ণচন্দ্রবাবু ২০১৪ সালের ২৪ জুলাই সন্ধ্যায় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমে টাকা তুলতে যান। নারায়ণচন্দ্রবাবুর কথায়, ‘‘মেশিনে কার্ড ঢুকিয়ে পাসওয়ার্ড দেওয়ার পরেই মেশিনটি বিগড়ে যায়। মেশিন খারাপ ভেবে ‘বাতিল’ অপশনটি টিপে বেরিয়ে যাওয়ার মিনিট দুয়েক পরেই এসএমএসে জানতে পারি, আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে দশ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।’’ নারায়ণবাবুর অভিযোগ, ‘‘তড়িঘড়ি গিয়ে দেখি, এক যুবক এটিএমের বোতামে দেশলাই কাঠি নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। আমি তাকে চেপে ধরতেই সে হকচকিয়ে ওখান থেকে চলে যায়।’’
টাকা ফেরত পেতে নারায়ণবাবু বউবাজার থানায় ডায়েরি করেন। পাশপাশি ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের চৌরঙ্গি শাখার ম্যানেজারকে ঘটনাটি জানান। কিন্তু পুলিশ, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনও সুরাহা না হওয়ায় মাস দুয়েক পরে কলকাতা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন। ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর কলকাতা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত রায়ে এটিএমের নিরাপত্তাহীনতার জন্য ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে কঠোর সমালোচনা করেন। আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘‘ওই এটিএমের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, অভিযোগকারী টাকা তোলার আগেই বাইরে থেকে এক যুবক তাঁকে অনুসরণ করছিলেন। এমনকী ঘটনার সময় এটিএমে কোনও নিরাপত্তারক্ষীও মোতায়েন ছিলেন না। এর থেকেই বোঝা যায়, এটিএমের নিরাপত্তা কোথায়!’’ কলকাতা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারক বিপিন মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘‘নারায়ণচন্দ্রবাবু টাকা তোলার সময় সিসি ক্যামেরায় এক হ্যাকারকে বাইরে ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছে। তখন এটিএমের নিরাপত্তারক্ষীর নজরদারি দেওয়ার কথা। ওই হ্যাকার এটিএমে ঢুকে টাকা তুলে নিয়ে গেলেন অথচ নিরাপত্তারক্ষী কোথায় ছিলেন?’’ অভিযোগকারীর পাশে দাঁড়িয়ে কলকাতা জেলা আদালত নারায়ণবাবুকে ক্ষতিপূরণ-সহ প্রায় পনেরো হাজার টাকা ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
কলকাতা জেলা ক্রেতা আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করে। সম্প্রতি রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত ক্ষতিপুরণের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে কলকাতা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায়কেই বহাল রেখেছে। রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দুই বিচারপতি শ্যামল গুপ্ত এবং উৎপলকুমার ভট্টাচার্য তাঁদের রায়ে বলেন, ‘‘এটিএমের নিরাপত্তার জন্য সর্বক্ষণের নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা প্রয়োজন। ঘটনার সময় নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন না বলে হ্যাকার গ্রাহকের টাকা তুলে চম্পট দিয়েছে। এক্ষেত্রে এটিএমের নিরাপত্তাহীনতার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে যাবতীয় দায় বহন করতে হবে।’’ রাজ্য আদালতের রায় মেনে নিয়ে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের তরফে আইনজীবী সোমনাথ গিরি বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ মেনে নারায়ণচন্দ্রবাবুকে শীঘ্রই টাকা ফেরত দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy