Advertisement
E-Paper

করোনা হয়েছে, আক্রান্তকে পরিবারসুদ্ধ তালাবন্দি করলেন পড়শি!

এই ঘটনা ফের প্রমাণ করল, করোনা নিয়ে আতঙ্ক এবং ভ্রান্ত ধারণার জেরে কতটা অমানবিক হতে পারে মানুষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৫:৩৯
সিসিটিভি ফুটেজে তালা হাতে  দীপ সেনগুপ্তকে দেখা গিয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।

সিসিটিভি ফুটেজে তালা হাতে দীপ সেনগুপ্তকে দেখা গিয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।

বাড়িতে করোনা রোগী রয়েছে। তাই রোগীর ফ্ল্যাট বাইরে থেকে তালাবন্ধ করে দিলেন এক প্রতিবেশী। তাজ্জব করার মতো ঘটনাটি ঘটেছে কেষ্টপুরের একটি অভিজাত আবাসনে। শেষে ঘণ্টা তিনেকের চেষ্টায়, পুলিশের হস্তক্ষেপে সেই তালা খোলা হয়। শুক্রবারের ঘটনা ফের প্রমাণ করল, করোনা নিয়ে আতঙ্ক এবং ভ্রান্ত ধারণার জেরে কতটা অমানবিক হতে পারে মানুষ।

কেষ্টপুর ঘোষপাড়ার একটি আবাসনের ছ’তলায় থাকেন একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী শ্রমণ দাস। তাঁর মূল বাড়ি আসানসোলে। তাঁর বাবা-মা মাঝে মধ্যে এখানে আসেন। শ্রমণ শুক্রবার বলেন, "গত শুক্রবার মা অসুস্থ বোধ করায় বাবা মা-কে নিয়ে কলকাতায় আসেন। এখানে একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে ভর্তি করেন।” রবিবার শ্রমণের মা কাকলির কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া যায়। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শ্রমণের দাবি, এর পরই আবাসনের কোভিড বিধি মেনে তিনি এবং তাঁর বাবা সজলকান্তি দাস আবাসনের কমিটিকে জানান গোটা ঘটনা। তার পর তাঁরা নিজেদের গাড়িতে গিয়ে কোভিড পরীক্ষা করান। ২ সেপ্টেম্বর, শ্রমণের ঠাকুমা শেফালি দাসের রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া যায়। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে হোম আইসোলেশনে রাখা হয়। শ্রমণের রিপোর্ট নেগেটিভ হয় আর তাঁর বাবার রিপোর্ট এখনও আসেনি। পেশায় ল ক্লার্ক সজলবাবুর দাবি, তাঁরা নিয়ম মেনে বাড়ির সবাই হোম কোয়রান্টিনে রয়েছেন। তার মধ্যেই এ দিন সকালে ঘটে যায় বিপত্তি।

সজলবাবুর অভিযোগ, ‘‘সকাল ছ’টা নাগাদ ফ্ল্যাটের দরজা খুলে দেখি, কোল্যাপসিবল গেটে বাইরে থেকে কেউ তালা দিয়ে চলে গিয়েছে। প্রথমে ব্যপারটা বুঝতেই পারছিলাম না।” পরে তাঁরা আবাসনের কমিটিকে ফোন করেন। কমিটির সদস্যরাও কিছু জানেন না বলে জানান সজলবাবুকে। শেষে বাধ্য হয়ে পুলিশকে ফোন করেন সজলবাবু। তিনি বলেন, ‘‘বাইরে থেকে খাবার জিনিস, জল দিয়ে যান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। বাড়িতে এক ফোঁটা জল নেই খাওয়ার। অথচ তালা দেওয়া থাকায় জল পর্যন্ত নিতে পারছি না।” তাঁর ছেলে বলেন, ‘‘আমার ঠাকুমার বয়স ৬৫। হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কী করে তাঁকে বাইরে বের করতাম?” সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ পুলিশ আসে। তাঁরা আবাসনের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেন। দেখা যায়, গভীর রাতে সজলবাবুর ফ্ল্যাটে তালা লাগিয়ে চলে যাচ্ছেন এক যুবক। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে চিহ্নিতও করেন আবাসনের বাসিন্দারা। সজলবাবুর নীচের তলাতেই ফ্ল্যাট পেশায় সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়র দীপ সেনগুপ্তর। দেখা যায়, তিনিই তালা লাগিয়েছেন। শেষে পুলিশের মধ্যস্থতায় ওই তালা খোলা হয়।

আরও পড়ুন: ফের নতুন সংক্রমণ ৮৩ হাজার! উদ্বেগ বাড়াচ্ছে মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্য​

আরও পড়ুন: ‘সাধারণ মামলা নয়’, শিখ দাঙ্গায় দোষী সজ্জন কুমারের জামিনের আর্জি খারিজ​

পুলিশ সূত্রে খবর, থানার পক্ষ থেকে সজলবাবুকে দীপের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত প্রতিবেশী বলে অভিযোগ করতে রাজি হননি সজলবাবু। অন্য দিকে, পুলিশ দীপকে জেরা করে কেন তিনি এ রকম একটা কাজ করলেন? তার উত্তরে দীপ বলেন, ‘‘আমার বাড়িতে কয়েক দিন বয়সের শিশুসন্তান রয়েছে। তাই আমি ভয়ে তালা দিয়ে দিয়েছি যাতে ওরা বাইরে বেরতে না পারে।” আবাসনের কমিটির সদস্যরাও গোটা ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় বলে জানিয়েছেন এবং অভিযুক্ত বাসিন্দার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।

Kestopur Coronavirus COVID-19 Kolkata Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy