Advertisement
০২ মে ২০২৪
Coronavirus

মোবাইল গেমেও এ বার করোনার দাপট!

এর মধ্যেই গত এক মাসে হাজারো ভাইরাস সংক্রান্ত গেম এসেছে নেট দুনিয়ায়। এই মুহূর্তে স্রেফ অবসরযাপনের জন্যই বাড়তে থাকা নেট-নির্ভরতার সঙ্গে সেই গেম পৌঁছে যাচ্ছে ব্যবহারকারীদের মোবাইলে।

পাওয়া যাচ্ছে করোনা সংক্রান্ত এমনই সব গেম। নিজস্ব চিত্র

পাওয়া যাচ্ছে করোনা সংক্রান্ত এমনই সব গেম। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২০ ০৪:০৯
Share: Save:

কোনও গেমে গুলি করে ‘করোনা’ নিকেশ করতে হবে। মারতে মারতেই জয়। কয়েক দফায় জিতে ‘কোয়রান্টিন জ়োন’-এ ঢুকে পড়লে লড়াই আরও কঠিন। কোনও গেম আবার জানাচ্ছে, শহর ভাইরাসে ভরে গিয়েছে। ছোঁয়াচ বাঁচাতে আক্রান্ত মানুষদের থেকে ছুটে পালাতে হবে। একটি গেম আবার খেলুড়েদের হাসপাতালের কর্মী সাজিয়ে হাসপাতালেরই বাস চালিয়ে ভাইরাস আক্রান্তদের পিষে মারার প্রতিযোগিতায় নামাচ্ছে!

অনলাইন গেম কতটা নিরাপদ? শিশু-কিশোরদের মনে কতটা বিরূপ প্রভাব ফেলে সেগুলি—— এই আলোচনা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। এর মধ্যেই গত এক মাসে হাজারো ভাইরাস সংক্রান্ত গেম এসেছে নেট দুনিয়ায়। এই মুহূর্তে স্রেফ অবসরযাপনের জন্যই বাড়তে থাকা নেট-নির্ভরতার সঙ্গে সেই গেম পৌঁছে যাচ্ছে ব্যবহারকারীদের মোবাইলে। টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া (ট্রাই) জানাচ্ছে, গত এক মাসে মোবাইলে যত নতুন গেম নামানো হয়েছে, সেই সংখ্যা গত এক বছরের গেম ডাউনলোডের প্রায় সমান!

আপাত নিরীহ এই সব গেম নিয়েই চিন্তায় সমাজতত্ত্বের শিক্ষক, মনোরোগ চিকিৎসক থেকে সাইবার বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, গেমে আসক্তি থেকে অবসাদের জেরে মৃত্যুর একাধিক উদাহরণ মিলেছে অতীতে। গেমের নিয়ম মানতে গিয়ে মৃত্যুর উদাহরণও রয়েছে। পাবজি-র মতো গেম খেলায় শিশুমনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল দিল্লির শিশুসুরক্ষা কমিশন। জনস্বার্থ মামলা হয়েছিল মুম্বই, পঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাইকোর্টে।

আরও পড়ুন: দোকান-ছাপাখানা বন্ধ, ঘরে পৌঁছল না বাংলা ক্যালেন্ডার

মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম বলছেন, “আদতে কোনও গেমই অবসাদের কারণ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু মানুষ গেম খেলার মজা হারিয়ে ফেলে যখন তার মাধ্যমে হতাশা বার করার চেষ্টা করেন, তখনই সমস্যা হয়। লকডাউনের সময়ে সেটা হলে মুশকিল। এই ধরনের ভাইরাস গেম হিংসাত্মক আচরণকে প্রশ্রয় দেয়, সেটাই চিন্তার।’’

গেম খেলার জেরে পারিবারিক অশান্তির ঘটনার কথা জানাচ্ছেন নারকেলডাঙা থানার এক পুলিশ আধিকারিক। লকডাউনের মধ্যেই স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে থানায় গিয়েছিলেন এক মহিলা। তাঁর দাবি, ছেলে সর্বক্ষণ গেম খেলেন। রাত করে ঘুমোন, বেলায় ওঠেন। মার্চ থেকেই ছেলের কাজ বন্ধ। এক দিন ছেলেকে জল আনতে যেতে বলেছিলেন স্বামী। ছেলে না-গিয়ে গেমেই মজে ছিলেন। এর জেরে বচসা গড়ায় হাতাহাতিতে। মাথা ফাটে দু’জনেরই। পুলিশকে ওই যুবক বলেন, “কাজ নেই, মাথার ঠিক ছিল না। খেলাতেও হারছিলাম। বাবা কথাই শুনছিল না।’’ পরিবারের কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে না-চাইলেও পুলিশ মোবাইলটি রেখে দিতে চায়। তখন যুবকের মা বলেন, ‘‘মোবাইল ছাড়া এখন ছেলেটাই বা সারা দিন কী করবে! ওর বাবা একটু বুঝলেই হত।’’

মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব অবশ্য বলছেন, “গেম ছেড়ে উঠতে না-পারা সত্যিই সমস্যার। অবসর মানে সর্বক্ষণ কিছুর মধ্যে ঢুকে থাকা নয়। শুধু এখন নয়, যে কোনও পরিস্থিতিতেই মনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এমন গেম খেলা উচিত নয়।’’ শিশুমনে গেমের প্রভাব নিয়ে গবেষণায় যুক্ত, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যখন যেটা চলে, তা নিয়েই গেম তৈরি হয়। এর আগে মোদী গেম দেখেছি আমরা। এখন করোনা গেম এসেছে। যে কোনও হিংসাত্মক গেম থেকেই নিজেকে ও ছোটদের দূরে রাখা দরকার।’’

বাজারে নিত্যনতুন আসা গেমে নজর রাখার আরও একটি কারণ জানালেন ইন্ডিয়ান স্কুল অব এথিক্যাল হ্যাকিং-এর অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্ত। তাঁর কথায়, “দেখে না-খেললে ফোন হ্যাক হতে পারে। গেম নামাতে গিয়ে ম্যালওয়্যার ফোনের দখল নেবে। ব্যক্তিগত কথা থেকে ব্যাঙ্কের তথ্য, সব চলে যাবে দুষ্কৃতীদের হাতে।’’

সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্র অবশ্য বলছেন, “ভাইরাসের ভয় এমনিই বহু মানুষকে গ্রাস করেছে। এমন গেম আবার কেন? অবকাশের অর্থ গেমে মজে থাকা নয়, আপনজনের কাছে থাকা। আর বলব, যা কিছু জানার বাকি, পড়ার বাকি, এখন পড়ে ফেলো।’’

আরও পড়ুন: পুলিশকর্মীদের পুষ্পবৃষ্টিতে বরণ করল কলকাতা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE