Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Education

মন্তেসরির পড়ুয়ারা স্কুলে, প্রশ্ন সুরক্ষা নিয়ে

স্কুলের প্রিন্সিপাল রাজীব কর্মকারের যুক্তি, কাউকে স্কুলে আসতে জোর করা হয়নি। বরং অভিভাবকেরাই তাঁদের সন্তানদের জোর করে স্কুলে পাঠাতে চাইছেন।

বিধি-ভঙ্গ: সরকারি নির্দেশিকা না মেনেই মন্তেসরির পড়ুয়াদের নিয়ে ক্লাস। মঙ্গলবার, ট্যাংরার একটি স্কুলে।

বিধি-ভঙ্গ: সরকারি নির্দেশিকা না মেনেই মন্তেসরির পড়ুয়াদের নিয়ে ক্লাস। মঙ্গলবার, ট্যাংরার একটি স্কুলে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৩০
Share: Save:

অতিমারির জেরে এখনও অনলাইন ক্লাস করছে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ারা। কিন্তু দীর্ঘ এক বছরের বেশি স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক পড়ুয়ার মানসিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে, বাড়িতে বসে পরীক্ষা দেওয়ায় মূল্যায়ন সঠিক হচ্ছে না, এই যুক্তিতে নবম শ্রেণির নীচের পড়ুয়াদের জন্যও স্কুল খুলে রাখার উদাহরণও শহরে রয়েছে। মেটিয়াবুরুজের একটি স্কুলের পরে আইসিএসই বোর্ডের অধীন, ট্যাংরার হার্ভার্ড হাউস হাই স্কুল ফর বয়েজ নামে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলও খোলা হয়েছে।

মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ষষ্ঠ শ্রেণির পরীক্ষার্থীরা স্কুলে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে। রয়েছে মন্তেসরির পড়ুয়ারাও। ওই স্কুলের বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে দূরত্ব-বিধি মেনেই নবম ও একাদশ শ্রেণির ক্লাস চলছিল। তার মধ্যেই চলছিল ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়াদের বার্ষিক পরীক্ষা।

স্কুলের প্রিন্সিপাল রাজীব কর্মকারের যুক্তি, কাউকে স্কুলে আসতে জোর করা হয়নি। বরং অভিভাবকেরাই তাঁদের সন্তানদের জোর করে স্কুলে পাঠাতে চাইছেন। রাজীববাবু বলেন, “কিছু অভিভাবক বলছেন এক বছর স্কুলে না আসায় তাঁদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে মানসিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। স্কুলে এসে কিছু ক্ষণ পড়াশোনা বা পরীক্ষা দিতে চাইছে তারা। নবম শ্রেণির নীচের পড়ুয়াদের জন্য পড়ুয়াদের জন্য অফলাইনে পরীক্ষার ব্যবস্থা রেখেছি। যারা ইচ্ছুক, তাদের জন্যই এই ব্যবস্থা। আর মন্তেসরির বাচ্চারা মায়েদের সঙ্গে আসে। কিছু ক্ষণ স্কুল করে চলে যায়।’’

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্যের করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের নিয়ম অমান্য করে এ ভাবে স্কুলে আসার অনুমতি দেওয়া যায় কি? মন্তেসরির শিশুরা কি সব সময়ে মাস্ক পরে থাকতে পারে?

এক অভিভাবক বলেন, “সরকারি নিয়ম জানি। কিন্তু মন্তেসরির বাচ্চাদের কি অনলাইনে পড়ানো সম্ভব? যে টুকু শিখেছিল, সব তো ভুলে যাচ্ছে। বাড়িতে আমাদের কাছে পড়তে চায় না। স্কুলের পরিবেশ কি বাড়িতে দেওয়া সম্ভব?’’ পাশে দাঁড়ানো আর এক অভিভাবক বলেন, “ওরা যাতে দূরত্ব-বিধি মেনে বসে, বেশি হুটোপাটি না করে সে দিকে আমরাও নজর রাখি। কবে যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, সেই দিকে তাকিয়ে রয়েছি।”

প্রিন্সিপাল রাজীববাবু বলেন, ‘‘অনলাইন পরীক্ষায় প্রকৃত মূল্যায়ন করা কঠিন। প্রযুক্তিগত নানা সমস্যাও হচ্ছে। অনেকের বাড়িতে অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার পরিকাঠামোও নেই। কিন্তু পড়াশোনার আগে স্বাস্থ্য। তাই অফলাইন পরীক্ষা ঐচ্ছিক রেখেছি। খুব কম ছাত্রই স্কুলে এসে পরীক্ষা দিচ্ছে।’’

মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালও মনে করেন, অনলাইনে প্রকৃত মূল্যায়ন হচ্ছে না। তিনি বলেন, “এক জন পরীক্ষার্থীর অনলাইনে মূল্যায়ন ঠিক হতে পারে না। ভাল ফল করলে কেউ ভাববে সেই নম্বরই তারা পাওয়ার যোগ্য। ঠিক মূল্যায়ন না হওয়া অনেক সময়ে পরে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। অনেকে স্কুলে দীর্ঘদিন ধরে যেতে না পেরে বিষণ্ণ হয়ে পড়ছে। তবু বলব, শিক্ষার আগে পড়ুয়ার স্বাস্থ্য। করোনায় কেউ আক্রান্ত হয়ে বড় ক্ষতি হয়ে গেলে তা অপূরণীয় হবে। তাই স্বাস্থ্যের কথা ভেবে এই ব্যবস্থা মেনে নিতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE