Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
kumortuli

সংক্রমণে ধ্বস্ত কুমোরটুলিতে জীবাণুনাশ না হওয়ার অভিযোগ

কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী  সাংস্কৃতিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত সরকার বলেন, “যেখানে আমার সাজসজ্জার দোকান রয়েছে, তার পাশেই এক যুবকের করোনা হয়েছে।

থমকে: কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় প্রতিমা তৈরির কাজ বন্ধ কুমোরটুলিতে। শুক্রবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

থমকে: কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় প্রতিমা তৈরির কাজ বন্ধ কুমোরটুলিতে। শুক্রবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২১ ০৬:০৩
Share: Save:

ঘরে ঘরে জ্বর। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, সবার পরীক্ষা হলে করোনা ধরা পড়বেই। ইতিমধ্যেই কুড়ি জন শিল্পীর পরিবার সংক্রমিত। ভয়ে, আতঙ্কে নিজের নিজের স্টুডিয়ো বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন শিল্পীরা। করোনায় এমনই বিধ্বস্ত অবস্থা কুমোরটুলি পাড়ার।

অথচ বৈশাখ থেকেই এখানে দুর্গাপুজোর বায়না চলে আসে। শিল্পীরা জানাচ্ছেন, করোনা আতঙ্কে এখনও কেউ প্রতিমার বায়না দিতে আসেননি। এর মধ্যেই অভিযোগ উঠেছে, এলাকায় জীবাণুনাশের কাজ কলকাতা পুরসভা ঠিক মতো করছে না। আইনজীবী তথা স্থানীয় বাসিন্দা ইন্দ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের যেমন জানাচ্ছেন, পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত এই কুমোরটুলি। পুরো ওয়ার্ড কোভিড রোগীতে ভরে গিয়েছে। ঠাকুরপট্টিতে অনেকে করোনায় আক্রান্ত। উড়েপাড়ায় কয়েক দিন আগে করোনায় মৃত্যু হয়েছে।
বনমালি সরকার স্ট্রিটেও সংক্রমিত রয়েছেন। ইন্দ্রজিৎবাবুর অভিযোগ, “পুরসভা থেকে এলাকায় জীবাণুনাশের কাজই হচ্ছে না।”

শিল্পীদের আফশোস, মাস চারেক পরেই দুর্গাপুজো। এই সময়ে কুমোরটুলি পাড়ায় জোরকদমে প্রতিমা তৈরির কাজ চলে। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আতঙ্কে ফের সব কিছু থমকে গিয়েছে। কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সাংস্কৃতিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত সরকার বলেন, “যেখানে আমার সাজসজ্জার দোকান রয়েছে, তার পাশেই এক যুবকের করোনা হয়েছে।
মঙ্গলবার এই খবর শোনার পর থেকে আমি দোকানে যাচ্ছি না। তার মধ্যে আমার ছেলের বেসরকারি সংস্থার কাজটা থাকবে কি না জানি না। ট্রেন বন্ধ থাকায় তো এখন অফিস যেতে পারছে না। কী ভাবে সংসার চলবে, বুঝতে পারছি না।”

ওই সমিতির সাধারণ সম্পাদক কার্তিক পালের কথায়, “স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর মিতালি সাহার পরিবার করোনায় সংক্রমিত হওয়ায় তিনি ঘর থেকে বেরোচ্ছেন না। ফলে বার বার বলেও জীবাণুনাশের কাজ হচ্ছে না। সব মিলিয়ে চরম অব্যবস্থার ছবি এখানে। পুরসভার কাছে আমাদের আবেদন, দ্রুত কুমোরটুলি পাড়ায় জীবাণুনাশের ব্যবস্থা করা হোক।”

মৃৎশিল্পীদের আরও একটি দাবি, ঘরে ঘরে জ্বরে আক্রান্ত কুমোরটুলির শিল্পীদের স্বার্থে বিভিন্ন সমিতির অফিস থেকেই করোনা পরীক্ষার পাশাপাশি প্রতিষেধক প্রদানের ব্যবস্থা করা হোক। একই দাবি শোনা গেল কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী মিন্টু পালের কথায়। তিনি বলেন, “এখানে বাইরে থেকে আসা বেশ কিছু কর্মী আছেন। যাঁদের অনেকেই জ্বরে ভুগছেন। ওয়ার্ডের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরীক্ষা করাতে গেলে চরম হেনস্থা হতে হচ্ছে। তাই শিল্পীদের স্বার্থে আলাদা র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যবস্থা করলে খুব ভাল হয়।”

শিল্পীদের আশঙ্কা, কুমোরটুলিকে এখনই সুরক্ষা না দিলে প্রতিমা শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। এমনিতেই গত বছর করোনা ও আমপানে বিধ্বস্ত এই পটুয়াপাড়া। তার মধ্যে নতুন করে বাড়তে থাকা সংক্রমণ ঘুরে দাঁড়ানোর সেই চেষ্টাও আটকে দিচ্ছে বলে দাবি শিল্পীদের।

স্থানীয় ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর মিতালি বলেন, “আমার মেয়ে, দেওর, ভাসুর, ভাসুরের তিন বছরের মেয়ে মিলে পরিবারের চার জন সংক্রমিত। এই পরিস্থিতিতে বাইরে বেরিয়ে কি করোনা ছড়াব?” তাঁর দাবি, “এর মধ্যেও আমি ফোনে নিয়মিত তদারকি করে সব ব্যবস্থা করছি।” ওয়ার্ডে জীবাণুনাশ এবং করোনা পরীক্ষার কাজ হচ্ছে না বলে যে অভিযোগ উঠেছে তাও পুরোপুরি নস্যাৎ করে মিতালি বলেন, “নিজে টাকা খরচ করে ওয়ার্ড জীবাণুমুক্ত করাচ্ছি। তা ছাড়া শুক্রবারই মৃৎশিল্পী সাংস্কৃতিক সমিতির অফিসে ৫৩ জনের র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয়েছে। যার মধ্যে ১১ জনের করোনা ধরা পড়েছে।
প্রতিষেধক দেওয়াও হচ্ছে ওয়ার্ডে। যাঁরা এই সব অভিযোগ করছেন, মিথ্যা বলছেন।” তবে এলাকার বিধায়ক শশী পাঁজার আশ্বাস, “মৃৎশিল্পীদের সুবিধার কথা ভেবে ওঁদের দাবিগুলো খতিয়ে দেখা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

COVID19 Coronavirus in Kolkata kumortuli
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE