রাজ্য জুড়ে সাপ্তাহিক লকডাউনের শেষ দিনেও নিয়ম ভাঙা এবং নিয়ম ভেঙে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার দৃশ্য যেমন দেখা গেল, তেমনই দেখা গেল পালানোর চেষ্টার নাটকীয় দৃশ্যও।
শনিবার, বেলা এগারোটা। গার্ডরেল দিয়ে হাওড়া সেতুর একটি দিক আটকে তল্লাশি করছিলেন পুলিশকর্মীরা। তখনই তাঁদের নজর পড়ে কলকাতা থেকে হাওড়ার দিকে এগিয়ে আসছে একটি অটো। সেতুতে ওঠার মুখে পুলিশকর্মীরা অটোটিকে থামতে বলেন। কিন্তু নির্দেশ অমান্য করেই ছুটতে থাকে অটোটি। তখন তাড়া করে মাঝ সেতুতে সেটিকে আটকালে দেখা যায়, চালক-সহ চার যাত্রী সওয়ার তাতে। চালকের পরনে শুধুই গামছা। লকডাউন ভেঙে বেরোনোর কারণ বলতে না পারায় পুলিশ তাঁদের থানায় যেতে বলে। তা শুনেই চালক পালাতে গেলে তাঁর গামছা খুলে যায়। উত্তর বন্দর থানার পুলিশ অবশ্য মিঠুন দেবনাথ নামের ওই চালককে ফের গামছা পরিয়ে বাকিদের সঙ্গে থানায় চালান করে।
পুলিশ সূত্রের খবর, আরোহী চার জনেরই বয়স ২০ থেকে ২৫-এর মধ্যে। ধৃতেরা হাওড়ার বালির বাসিন্দা। অন্যের অটো নিয়ে বেরিয়েছিলেন। অটোটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
বাগুইআটিতে তিন সাইকেল আরোহীকে বেরোনোর কারণ জিজ্ঞাসা করছেন এক পুলিশকর্মী। ছবি: সুমন বল্লভ
আরও পড়ুন: বাদুড়িয়ায় বসেই কাশ্মীরি যুবকদের ওয়াজিরিস্তানের জঙ্গি ট্রেনিং ক্যাম্পে পাঠাত তানিয়া
আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা দু’হাজার পেরোল, বাড়ল সংক্রমণের হারও
পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সকালে তাঁরা গঙ্গায় স্নান করে অটো চেপে শহর দর্শনে বেরোন। এক পুলিশকর্তা জানান, তাঁদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, লকডাউনেও কেন বেরিয়েছেন। জবাবে অসঙ্গতি মেলায় থানায় যেতে বলা হয়েছিল। তখনই পালাতে গিয়ে চালকের পরনের গামছা অটোয় আটকে খুলে যায়।
পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত লকডাউন-বিধি ভঙ্গের জন্য ৮৫৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাস্ক না পরার জন্য মামলা হয়েছে ৪৯৪ জনের বিরুদ্ধে। প্রকাশ্যে থুতু ফেলায় ৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অযথা বেরোনোয় ৪৪টি গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
অন্য দিকে, লকডাউনে বেরোনোর উপযুক্ত কারণ দেখাতে না-পেরে বা দোকান খুলে রাখায় এ দিন বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট এলাকা থেকে ৬০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ১২টি গাড়ি। পুলিশের কাছে খবর আসে সকালে নবাবপুর এলাকায় একটি লটারির দোকান খোলা আছে। দোকান ঘিরে ভিড়ও জমেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভিড় সরিয়ে দোকানদার-সহ কয়েক জনকে আটক করে। লেক টাউন থানা এলাকাতেও এক জায়গায় দোকান খোলা রাখার খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে দোকান বন্ধ করে দেয়। গ্রেফতার করা হয়েছে ওই দোকানদারকে।
সল্টলেক, পাঁচ নম্বর সেক্টর, নিউ টাউন, রাজারহাট-গোপালপুরে
রাস্তাঘাট শুনশান ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। সংক্রমণ বাড়তে দেখেও যে অনেকে এখনও সচেতন হননি,
নিয়ম ভাঙার বিক্ষিপ্ত ঘটনাগুলি সেটাই প্রমাণ করে।
বিধাননগর পুরসভার ঘিঞ্জি ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক নাগরিক ইতিমধ্যেই করোনায় আক্রান্ত। তিন জনের মৃত্যুও হয়েছে। তার পরেও এ দিন নিয়ম ভেঙে এলাকায় ঘুরে বেড়াতে দেখা গেল বাসিন্দাদের একটি অংশকে। পুলিশ সূত্রের খবর, নাগরিকদের বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু যাঁরা শুনছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে এর পরে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।